প্রতিনিধি ১৭ নভেম্বর ২০২৪ , ৯:৩৮:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পতনের পর সারাদেশের ন্যায় রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনেও স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফিরেছে জামায়াতে ইসলামী। এই মুহূর্তে দলটি ঘরোয়া কার্যক্রমে ৫৪ নং সংসদীয় এ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় দলটি ইতোমধ্যে এই আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর বিষয়ে জামায়াতের যে নিয়ম (পার্লামেন্টারি বোর্ড, স্থানীয় পর্যায়ের মতামত ও কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত) বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
পবা ও মোহনপুর উপজেলার তিনটি পৌরসভা এবং ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তবে কৃষি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এই দুই উপজেলাকে ঘিরে জামায়াতে ইসলামীর এক্ষেত্রে ভিন্ন মনোভাব দেখা মিলছে। ধর্মভিক্তিক দলটির স্থানীয় নেতারা বলছেন, দল থেকে বিভিন্ন স্তরের যাচাই-বাচাই শেষে প্রার্থী হিসেবে যার নাম আসবে, তাঁকে (প্রার্থী) সামনে রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মূলত নির্বাচনের বিষয়ে জামায়াতে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের সুযোগ নেই।
এই আসনের বড় একটি অংশ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের চারপাশ ঘিরে আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এটি সব রাজনৈতিক দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। গত ৫ আগষ্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখে বিএনপির মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের অনেকে বিভিন্ন দিবস ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের আড়ালে এ আসনে প্রচারণা শুরু করেছেন।
বিএনপির একাধিক মনোনয়ন-প্রত্যাশীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকবেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক সহসম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ে এগিয়ে আছেন রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর শুরা সদস্য এবং মোহনপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল আওয়াল।
বিএনপি থেকে অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ছাড়া আরও তিন নেতা দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত, রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল আলম রায়হান, সাবেক মন্ত্রী ও প্রয়াত বিএনপি নেতা কবির হোসেনের ছেলে নাসির উদ্দিন অস্থির। তবে মনোনয়নের মাঠে এখন পর্যন্ত শক্ত অবস্থানে রয়েছেন শফিকুল হক মিলন।
এদিকে, রাজশাহী মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও কাটাখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র মাজেদুর রহমানের আকস্মিক মৃত্যুর পর রাজশাহী-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর নির্ধারিত প্রার্থীর শূন্যতা তৈরি হয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত। এক্ষেত্রে রাজশাহী জেলা জামায়াতে ইসলামীর শুরা সদস্য এবং মোহনপুর উপজেলা জামায়াতী ইসলামীর আমীর অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল আওয়াল এগিয়ে আছেন বলে দলটির একাধিক নেতারা মনে করছেন। বিগত দিনে বারবার কারানির্যাতিত জামায়াত নেতা আব্দুল আওয়াল ছাত্রজীবনে পবা উপজেলার কাঁটাখালী পৌরসভার সভাপতি এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের প্রচার বিভাগের সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন।
জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাইয়ে বিশিষ্ট ইসলামী বক্তা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক আব্দুল আওয়ালের নাম ছাড়া আরও কয়েকজন জামায়াতের নেতা দলটির সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন তালিকায় আছেন বলে জানা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যাপক জালাল উদ্দীন, অধ্যাপক আব্দুল হাই এবং এ্যাডভোকেট আবু মুহাম্মদ সেলিম প্রমুখ।
এ আসনে বর্তমানে বিএনপি-জামায়াত ব্যাতীত অন্য কোনো দলের প্রার্থীর নাম আপাতত শোনা যাচ্ছে না। তবে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু ভিন্ন দলের ব্যানারে বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, দুই দলের রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন। তাই জামায়াত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে তারা তাদের মতো রাজনীতি করবে, বিএনপি তাদের মতো। রাজশাহী-৩ নম্বর এ আসনে আগামীর নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হবেন বলে আশাবাদও ব্যাক্ত করেন তাঁরা।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংস্কারের পর নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী ও দর্লীয় নির্দেশনায় পবা-মোহনপুরের এ আসনে জামায়াত নির্বাচনি সিদ্ধান্ত নেবে। আর প্রার্থীদের বিষয়ে জামায়াতের যে নিয়ম (পার্লামেন্টারি বোর্ড, স্থানীয় পর্যায়ের মতামত ও কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত) বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।#