• আইন ও আদালত

    মুরাদনগরে আলোচনায় ইউএনওর অনিয়ম দুর্নীতি দ্রুত অপসারণ চায় এলাকাবাসী

      প্রতিনিধি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৯:২৪:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

    শাহ সাহিদ উদ্দিন-কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:

    কুমিল্লার মুরাদনগরে বিতর্কিত ইউএনও সিফাত উদ্দিনের দ্রুত অপসারণ চায় এলাকাবাসী। যোগদানের পর থেকেই ওই কর্মকর্তা মুরাদনগরে আওয়ামী লীগ নেতার ভূমিকা পালন করেন। সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং তার ছেলে অপসারিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আহসানুল আলম সরকার কিশোরের সাথে তাল মিলিয়ে নানা অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন। এদিকে ওই কর্মকর্তা মুরাদনগরে যোগদানের পর ড্রেজার সিন্ডিকেট, গোমতীর মাটি ও বালু লুট, অবৈধ ইটভাটা সিন্ডিকেটের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন। তাছাড়া খাল খননের মাটি বিক্রি থেকেও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে সরকার পতনের পর ভোর পাল্টে নিজেকে বিএনপি সমর্থক দাবি করছেন ওই কর্মকর্তা।
    খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ এপ্রিল মুরাদনগরে যোগদান করেন ইউএনও সিফাত উদ্দিন। যোগদানের পর শেখ মুজিবের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নিজেকে কট্টর আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান দাবি করেন। স্থানীয়দের দাবি, অনিয়ম দুর্নীতির ভাগবাটোয়ারার অংশ পেতে সদ্য পতিত এমপি জাহাঙ্গীর আলম সরকার এবং তার ছেলে অপসারিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আহসানুল আলম কিশোরের সাথে তাল মিলিয়ে শুরু করেন নানা কার্যক্রম। কৃষি জমিতে অবৈধ ড্রেজিং, আশ্রয়ন প্রকল্প, নদীর মাটি ও বালু লুট, ইটভাটা, খাল খননের মাটি বিক্রি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রকল্প থেকে সুবিধা গ্রহণ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে রমরমা সুবিধা নিয়ে আসছে ওই কর্মকর্তা। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর ক্ষুব্দ জনতা তার বাস ভবনে হামলা করলেও বিএনপি জামায়াতের দায়িত্বশীলদের দয়ায় তিনি নিজেকে আত্মরক্ষা করেন। তবে তার সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা কোনভাবেই থামছে না।
    সুত্র জানায়, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মাধ্যমে টিআর কাবিখা,ইজিপিপিসহ ওই সেক্টর ৫% কমিশন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের যেকোন ফাইল থেকে স্বাক্ষরে ২% হারে কমিশন দিতে হয় তাকে। ওই কর্মকর্তাকে উৎকুচ দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক ড্রেজার কৃষি জমি থেকে নিয়মিত মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে শত শত একর আবাদি জমি পতিত হয়ে পড়ছে। তাকে ম্যানেজ করে উপজেলায় ওয়ান ব্রিকস, এমবিসি, সুলতান, চয়নিকা, ফাইভ স্টার, মুন্সিসহ বেশ কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা চলছে।
    স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার আলীরচর এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের মাটি ভরাটের জন্য সরকারি বরাদ্দ থাকলেও ইউএনওর যোগশাজসে ঠিকাদার সিন্ডিকেট বিনা পয়সায় সরাসরি গোমতী নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করেন। একটি আশ্রয়ন প্রকল্পে বালু ভরাটের নামে ড্রেজার সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকার মাটি ও বালু বিক্রি করে ইউএনওকে ভাগবাটোয়ারা দেন। উপজেলার ধনিরামপুর এবং চাপিতলা এলাকায় খাল খননের কয়েক কোটি টাকার মাটি বিক্রির সাথে ইউএনওর যোগশাজস রয়েছে।

    উপজেলার দক্ষিণ ত্রিশ এলাকায় টানা পাঁচ মাস গোমতী নদী থেকে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করেছেন ছাত্রলীগ নেতা সফিক তুহিন সিন্ডিকেট।
    শফিক তুহিনের দাবি, ইউএনও সিফাত উদ্দিনকে ম্যানেজ করেই আমরা গোমতী নদী থেকে বালু উত্তোলন করছি।
    নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার চাপিতলা এলাকার শীর্ষ ড্রেজার ব্যবসায়ী ইউপি সদস্য বলেন, ইউএনও স্যারের লোক নিযুক্ত আছে, আমরা ফুট হিসেবে মেপে মেপে টাকা দিয়ে দেই।
    একই অভিযোগ শ্রীকাইল এলাকার একাধিক ড্রেজার ব্যবসায়ীর।
    এদিকে ইউএনওকে ম্যানেজ না করলে ইটভাটার মাটিবাহী ট্রাক্টর, ড্রামট্রাক, ভেকু চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানদের নানা অনিয়ম দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে তিনি অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছেন।

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, সিফাত উদ্দিনের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাকে দ্রুত অপসারণ করা দরকার। উনার রূপ কত প্রকার আমরা দেখেছি। আর অভিনয় দেখতে ভালো লাগে না।

    এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও সিফাত উদ্দিন বলেন, ড্রেজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আমি সোচ্চার। অনেক ড্রেজার বন্ধ করে দিয়েছি। সাবেক এমপি এবং উনার ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান কিশোরের সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিল না। আমি সরকারি বিধি মোতাবেক কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ফাইল স্বাক্ষরে কমিশন আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয়।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ