প্রতিনিধি ২৪ মার্চ ২০২৩ , ১০:১২:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ
ঈদের আনন্দ-হাসিখুশি, এ বাড়ি ও বাড়ি, আত্মীয়- স্বজনের বাড়ি ঘুরে বেড়ানো দেশের যে আনন্দ প্রবাসে তা কখনোই উপলব্ধি করা যায় না তবে প্রবাসে রমজান মাস ঠিকই পালন করি। নামাজ-রোজা, সেহেরি-ইফতার, তারাবীহ সব মিলে অনেকটাই পূর্ণ আমেজে পবিত্র রমজান মাস অতিবাহিত হয়। কর্মব্যস্ত প্রবাস জীবনে সবার রমযান পালনের ঐ রকম সুযোগ হয় না তবে খুব কম সংখ্যক লোকের সুযোগ আছে। সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আমিও একজন। প্রবাস জীবনের শুরু থেকে রোজায় ছোলা-মুড়ি, পিঁয়াজি, বেগুনি, মরিচা, জিলাপি, আলুর চপ, ডিমের চপ, শরবত আর চেনা ফলমূল দিয়ে ইফতারের সুযোগ হয়েছে। পছন্দের শরবত তৈরি করতে তোকমা ইসবগুলের ভুসি, লেবু সিরাপ, আখের গুড়, চিনি—কী নাই হাতের নাগালে। মানে এই পেনাং শহরে। বাঙালিদের প্রিয় সব জিনিস চাইলেই পাশের বাংলাদেশি দোকানে পাওয়া যাচ্ছে। সেহেরিতে দেশের মতো পছন্দমতো মাছ-মাংস ও সবজি দিয়ে খাবার খাচ্ছি।
তারপরও খুব মনে পড়ে, দেশের সেই সব খাবার। যা পেনাং এ থাকলেও খাওয়া হয় না। দেশে এখন আমের ভরা মৌসুম চলছে। দেশে থাকলে মাঝেমধ্যে সেহেরিতে আম-দুধ দিয়ে এক প্লেট ভাত খাওয়া হতো নিশ্চিত। মা মিষ্টি আম বেছে রাখতেন সেহেরিতে ভাত দিয়ে খাওয়ার জন্য। সঙ্গে গরুর দুধ। মালয়েশিয়ায় সারা বছর আম পাওয়া গেলেও এখন (মে-জুন) অবশ্যই আম বেশিই দেখা যাচ্ছে। তারপরও আম খাওয়া হয় কেবল ইফতারে। সাহরিতে আম-দুধ দিয়ে ভাত খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পরিবেশটা উপযুক্ত মনে হয় না। এর কারণ হতে পারে দুধভাত, আম-দুধ দিয়ে ভাত, ঘি দিয়ে ভাত—এগুলো যেন পারিবারিক পরিবেশেই খেতে মন চায়। পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূরের প্রবাস জীবনে এই সব মায়াবী খাবার গুলো মুখ দিয়ে যায় না।
মিস করি ভীষণ মিস করি মায়ের হাতের রান্না বড় আপুদের হাতের রান্না আজ কত বছর ধরে খাওয়া হয়না ! যদিও খেতে ইচ্ছে করে। শৈশবে খাওয়ার স্মৃতি খুব মনে পড়ে। দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও গ্রামে পারিবারিক ভাবে লালন পালন করা মুরগিকে দেশি মুরগি বা গ্রামের মুরগি বলে। এখানে দেশি মুরগি বা গ্রামের মুরগি খুব সহজে পাওয়া যায়। তবে নিজের মা-বোনদের আদর যত্নে-মমতায় লালন -পালন করা বড় মোরগের মাংস দিয়ে সাহরি খাওয়া হয় না এ প্রবাসে। সমুদ্রের মাছ, মিঠাপানির মাছ সব হাতের কাছে আছে ঠিকই, তবে নিজেদের খাল বিল থেকে ধরা মাছ, ফসলি জমি থেকে নিজের হাতে মাছ ধরে। ঐ মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া হয় না।
দেশে গ্রামে সাহরি খাওয়ার যে পরিবেশ তা এখানে নেই। শৈশবে সেহেরির সময় পাড়ায় কোনো বাড়িতে হাঁড়ি-পাতিলের আওয়াজ না শোনা গেলে অন্য বাড়ির কেউ গিয়ে ডাকাডাকি করে জানতে চাইত ওই বাড়ির লোকজন ঘুম থেকে উঠছে কিনা সেহেরি খেতে। ঘুম থেকে না জাগলে অন্যরা জাগিয়ে দেওয়া হতো ।
গ্রামের মসজিদের মাইকেই সেহেরির জন্য ডাকাডাকি করা হয়। সেহেরির সময় ঘুম থেকে জাগতে না পারার কারণে সেহেরি না খেয়ে রোজা রাখার অভিজ্ঞতা গ্রামে খুব কমই। আর প্রবাসে যখন বাসায় একা ছিলাম তখন ঘুম থেকে সজাগ হতে না পেরে সেহেরি না খেয়েই রোজা রাখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। যদিও রোজা রাখার জন্য সেহেরি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রবাসে আমরা তারাবি পড়ি। তারপরও মিস করি গ্রামের মসজিদে পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে তারাবি নামাজ পড়া।
রোজা মানে সাহরি-ইফতার, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে বাড়তি তারাবি। হ্যাঁ, এর সবই আছে আমার এখানে পেনাং শহরে প্রবাস জীবনে। তারপরও কী যেন নেই। কিছু একটা অপূর্ণতা থেকেই যায় প্রবাসে রমজানের আমেজে। এই অপূর্ণতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।
কারণ, দেশের অনেক কিছুই বিদেশে আনা যায়, স্বদেশকে তো আর বিদেশে আনা যায় না। তবে বলা যায়, দেশটা থাকে অন্তরে, ছোলা-মুড়ি বাকি সব ইফতারে। এভাবেই চেষ্টা করে যাচ্ছি এই প্রবাস জীবনেও রমজান মাসটা যত সম্ভব দেশীয় আমেজে পালন করার। প্রবাসীদের কাছে দেখি অনেকেই দেশের মানুষের দুঃখ কষ্ট শেয়ার করে কিন্তু প্রবাসীদের দুঃখ কষ্ট শুনতে কেউ চায় না। তারা কেমন আছে দূর প্রবাসে পরিবার স্ত্রী সন্তানাদি আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে মহান আল্লাহ্ সকল প্রবাসীদের প্রতি রহমত বর্ষিত করুন সকল রেমিট্যান্স যুদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
লেখা: মালেয়শিয়া প্রবাসী, মোঃ আবু হানিফ