প্রতিনিধি ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ , ৮:৫০:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
আসিফ খন্দকার:
পুরো নাম সুমাইতাহ তাসফিয়াহ রুতবাহ। বাবা এ বি এম আবু সায়েম,মা মোসা.ফারহিমা বেগম। বসবাস ঢাকার মোহাম্মদপুরে। মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। নাচের শুরু কিভাবে এবং কেমন চলছে জার্নি এমন প্রশ্নের জবাবে রুতবাহ বলে, “শুরুটা হয় ২০১৬ সালে আমাদের স্কুলের পহেলা ফাল্গুনের কালচারাল প্রোগ্রাম থেকে। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। নাচের প্রতি আমার আগ্রহ এবং পারফর্মেন্স দেখে স্কুলের নাচের শিক্ষক ওয়াকিল আহমেদ সুমন স্যার আমাকে নাচের ক্লাসে ভর্তি করিয়ে নেন। আমি স্কুলে নিয়মিত নাচের তালিম নিতে থাকি। এরই মাঝে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন বাংলায় ছোটদের নাচের অনুষ্ঠান ‘ছন্দে আনন্দে’ তে প্রথম অংশগ্রহন করি।
পিএসসি পরীক্ষা শেষে BAFA (বুলবুল একাডেমি অফ ফাইন আর্টস) এ নাচের ক্লাসে ভর্তি হয়ে জুনিয়র কোর্স সম্পন্ন করি ২০২০ সালে।সেখানে নাচ শিক্ষাকালীন সময়ে নৃত্যশিল্পী সুলতানা আকতার সোহাগী আপুর তত্বাবধানে এটিএন বাংলায় ছোটদের নাচের অনুষ্ঠান ‘ছন্দে আনন্দে’ অংশগ্রহন করি। ২০১৯ সালে শিল্পকলার নৃত্তপরিচলক সৈয়দা সায়লা আহমেদ লিমা ম্যাম এর সাথে ‘ভক্সিগমা ডান্স থিয়েটার’ একজন নিয়মিত শিল্পী হিসেবে শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন নাচের প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করি এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের ‘নৃত্যের তালে তালে’, এনটিভি—তে ‘ডান্স ডান্স’ পোগ্রামে নিয়মিত অংশ নিতে থাকি। পাশাপাশি ‘বেনুকা ললিতকলা একাডেমি’র কিছু প্রোগ্রাম করেছি।
আমি ২০১৯ সালে সৃষ্টি কালচারাল সেন্টারের অধিনে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আর্টিস্টিক ডান্স ডিরেক্টর সুকল্যান ভট্টাচার্য স্যারের তত্বাবধানে পাঁচদিন ব্যাপি ‘কনটেম্পোরারি ডান্স’ কর্মশালায় অংশগ্রহন করি। ২০২০ সালের শুরুর দিকে বাংলাদেশসহ পুরো পৃথিবী করোনায় আক্রান্ত হয়। শুরু হয় লকডাউন। পড়াশোনার পাশাপাশি বাসাতেই নাচের চর্চা করতে থাকি। নৃত্যশল্পী সাইফুল ইসলাম ইভান এর কাছে ভরতনাট্যম শিখি, তাঁর কোরিওগ্রাফিতে দুইটি মিউজিক ভিডিও এবং শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনায় মুজিব শতবর্ষের বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহন করি। ২০২০ সালে লকডাউন চলাকালে নৃত্যশিল্পী মোফাসসাল আল আলিফ অনলাইনে নাচের ক্লাস শুরু করেন। তাঁর কাছেই কনটেম্পোরারি নাচ শিখি।
নাচ শেখার একপর্যায়ে ২০২১ সালে আলিফ ভাইয়ার একটি নৃত্যদল ‘আলিফিয়া স্কোয়াড’ প্রতিষ্ঠা করে। এখন এই দলের একজন নিয়মিত সদস্য হিসাবে নাচের বিভিন্ন ধরন যেমন — কনটেম্পোরারি, জ্যাজ, এ্যাফ্রো, ব্যালে, বলিউড ইত্যাদি শিখছি এবং বিভিন্ন পোগ্রামে নৃত্য পরিবেশন করছি। ২০২২ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস, মিশরের আমন্ত্রনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় মিশরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্যাপানের অনুষ্ঠানে লিমা ম্যামের পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করি।২০২২ সালে মো. ফারুকের পরিচালনায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ‘বাংলাদেশি কনসার্টে’ এ নৃত্য পরিবেশন করি।
নাচের পাশাপাশি ২০২৩ সালের শুরু থেকে ইয়াসিন আরাফাতের তত্বাবধানে ঢাকা জিমন্যাস্টিক স্কুলে জিমন্যাস্টিক প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছি।”
প্রাপ্তির কথা জানতে চাইলে সে জানায়,” বিভিন্ন বড় বড় শো তে বরেণ্য মানুষদের সামনে পারফর্ম তো করেইছি অনেকবার। এছাড়া প্রাপ্তি বলতে বাফার বার্ষিক নৃত্য প্রতিযোগিতা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে পরপর দুই বছর প্রথম স্থান অধিকার করি।
আইডিয়াল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ আয়োজিত ‘ইন্টার স্কুল কালচারাল কম্পিটিশন’ ২০১৯ এবং ২০২০ এ পরপর দুইবার ‘ফোক ডান্স’ ক্যাটেগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক মানুষের প্রশংসা পাই।মানুষের ভালোবাসাটাকেই বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রুতবাহ বলে, “নাচকেই আমি আমার প্রফেশন হিসেবে নিতে চাই। আমাদের দেশে দেখা যায় সব নৃত্য শিল্পীরা মডেল কিংবা নায়ক নায়িকা হতে চায় কিংবা হয়ে যায়। কিন্তু আমি নিজেকে একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্টিত করতে চাই এবং নৃত্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে পরিচিতি দিতে চাই। আমি বিশাস করি সংশ্লিষ্ট সকলের উৎসাহ ও সহযোগিতা থাকলে এটা সম্ভব।”
রুতবাহ যেন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে তার জন্য দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদের পক্ষ থেকে রইলো অনেক শুভ কামনা।।