প্রতিনিধি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ১২:২৬:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধিঃ
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনার আশংকা। ঘটছে প্রাণহানি। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান। রেল সংশ্লিষ্টরা দায় এড়াতে কোন কোন লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও তা আর চোখে পড়েনা। রেলের লাগানো অধিকাংশ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডগুলো নষ্ট হয়ে বিলীন হয়ে গেছে।
সরিষাবাড়ী রেলস্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় রেলপথে মোট ১৫ টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৯ টিতে গেটম্যান রয়েছে।
বাকি ৬টি লেভেল ক্রসিং অরক্ষিত। নেই কোনো গেটম্যান। এই সব লেভেল ক্রসিংগুলোয় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যু।স্থানীয়রা বলছেন, অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনার আশংকা। ঘটছে দুর্ঘটনা। মারা যাচ্ছে মানুষসহ গবাদি প্রাণি। চলতি বছরের গত ১৩ ফেব্রুয়ারি পোগলদিঘা ইউনিয়নের চেঁচিয়াবাধা এলাকার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় সজিব নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে আরামনগর আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে মোটর সাইকেল যোগে যাওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় দুজনের মুত্যু হয়।
২০১৯ সালে লোকোসেড রেল ক্রসিংয়ে বিলকিস আক্তার নামে এক মহিলা ট্রেনে কাটা পড়েন। কিছিুদিন পর তার মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে একটি ট্যাফে ট্রাকটর পৌরসভার বাউসি লেভেল ক্রসিংয়ে উঠে পড়ে। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকটর চালক নিহত হন।বাকি অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে প্রতিনিয়ত ঘটেছে দুর্ঘটনা। এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে সবাই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। অথচ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।সরেজমিনে উপজেলার অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ‘গেটম্যান না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন।
অনেকে পায়ে হেঁটে ডান-বাম না তাকিয়েই পার হচ্ছে লেভেল ক্রসিং। রেলের তালিকার বাইরে আরো অনেক লেভেল ক্রসিং থাকলেও রেল কর্তৃপক্ষের কাছে সেগুলোর কোন হিসেব নেই ।শিমলাপল্লী লেভেল ক্রসিংয়ে রেলের সতর্কতা মুলক সাইনবোর্ড থাকলেও এখন আর তা চোখে পড়েনা। এ লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই নানা প্রজাতির গবাদি প্রাণী ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাচ্ছে। স্থানীয় চা দোকানদার খলিল খাঁন ট্রেন চলাচলের সময়ে দুর্ঘটনা এড়াতে রাস্তায় বাঁশ ফেলে গেটম্যানের কাজ করতেন। তখন এ পথে চলাকারিরা নির্ভয়ে চলাচল করতেন। কিছুদিন আগে তিনি চায়ের ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এ কারনে লেভেল ক্রসিংটি আরো অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগালেও সেগুলো এখন আর চোখে পড়েনা। সময়ের পালাবদলে সেগুলো বিলীন হয়ে গেছে। অরক্ষিত ওইসব লেভেল ক্রসিংয়ের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল, ‘এই লেভেল ক্রসিং-এ গেটম্যান নাই, পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যে কোন রূপ দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকিবেন। কোন কোন লেভেল ক্রসিংয়ে এরুপ কোন সাইনবোর্ডও দেয়নি সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয়রা অবিলম্বে এসব অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেট নির্মান করে গেটম্যান নিয়োগের দাবি জানান।
এ ব্যাপারে সরিষাবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাখাওয়াতুল আলম মুকুল বলেন, সরিষাবাড়ীতে রেল রোড নির্মানের পর থেকেই শিমলাপল্লী লেভেল ক্রসিংটি অরক্ষিত। রেল কর্তৃপক্ষ এ লেভেল ক্রসিংয়ে সতর্কতামুলক সাইনবোর্ড লাগালেও তা এখন আরও চোখে পড়েনা। সরিষাবাড়ী আলিয়া মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মমিনুল ইসলাম কিসমত বলেন, মাদ্রাসা সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। এ অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেট নির্মানসহ গেটম্যান নিযুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়েছ।
সরিষাবাড়ী রেলওয়ে পুলিশের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মুজিবুল হক বলেন, এ উপজেলায় ১৫টি লেভেল ক্রসিংয়ের ৯টিতে গেটম্যান রয়েছে। বাকি ৬টি অরক্ষিত।সরিষাবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আবুল কালাম বলেন, ‘গেটম্যান নিয়োগের বিষয়টি তাদের এখতিয়ারভুক্ত কাজ নয়। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়টি দেখে থাকেন। তবে যেসব লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই, সেখানে সতর্কতামূলক নির্দেশনা সাইনবোর্ড দেওয়া রয়েছে। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। রেলের তালিকার বাইরেও আরো কিছু লেভেল ক্রসিং রয়েছে বলেও তিনি জানান।