প্রতিনিধি ২৪ মে ২০২১ , ৩:৩৪:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
শকুনির দৃষ্টি পড়েছে সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ও চরছান্দিয়া ইউনিয়নের মধ্যবর্তী জমাদার বাজার সংলগ্ন শকুনিয়া খালের দিকে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়- দখলবাজদের দৌরাত্ম্যে একসময়ের প্রশস্ত শকুনিয়া খাল সংকুচিত হয়ে ও গভীরতা হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। খালের দুপাশে স্থানীয়রা দোকানপাট ও বাড়ীঘর নির্মাণ করে দখল করায় খালটি সংকুচিত হয়ে একটি সরু নালায় পরিণত হয়েছে। যার দরুন পানি নিষ্কাসন প্রক্রিয়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চরদরবেশ ও চরছান্দিয়া ইউনিয়নের চরসাহাভিকারী, কালীরচর সহ বিশাল বিস্তৃত এলাকার পানি নিষ্কাসনে খালে প্রতিবন্ধকতা থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে জন দুর্ভোগ সৃষ্টি ও কৃষকদের চাষাবাদে সমস্যা হয় এবং ক্ষেতের ফসল বিনষ্ট হয়।
স্থানীয়রা জানান- শকুনিয়া খালটি নকশা মোতাবেক পশ্চিম দিকে জমাদার বাজারে প্রস্থ ২০ ফুট থাকার কথা, সেখানে কোথাও ৩/৪ ফুট রয়েছে। বাজারের পূর্ব দিকে মাস্টার সাহাব উদ্দিনের বাড়ীর পশ্চিমে নকশা মোতাবেক খালের প্রস্থ ২০/২৫ ফুট থাকার কথা সেখানে ২/৩ ফুট রয়েছে, বাকীসব দখল হয়ে গেছে। মাস্টার বাড়ীর পূর্বে খালটি অনেকটা প্রশস্ত থাকলেও খালের গভীরতা কম থাকায় পানি নিষ্কাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়- জমাদার বাজারের বাহার মার্কেটের মালিক সৌদিআরব প্রবাসী হাজী বাহার মিয়া, সালামত উল্লাহর ছেলে মিজানুর রহমান, রাবেয়া শপিং কমপ্লেক্সের মালিক হাদিসুর রহমানের ছেলে সিরাজুল ইসলাম, মকবুল আহমদের ছেলে জামাল উদ্দিন, কাশেম মার্কেটের মালিক আবুল কাশেম, আবদুল হালিম মিস্ত্রীর স্বর্ণ দোকান, খালের উপর নির্মিত দোকানঘরের মালিক মকবুল আহমদ ও তার ছেলে আবদুল মোতালেব, নাজমুল হক সহ আরো কয়েকজন দখলবাজ অবৈধভাবে খালের জায়গা দখল করে দোকানঘর ও ভবন নির্মাণ করেছেন।
এরমধ্যে কয়েকটি স্থাপনা বিদায়ী সহকারী কমিশনার ভূমি নাছরিন আক্তার ও মোশাররফ হোসেন মিলন চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ০৮/০৮/২০২০ইং উচ্ছেদ করা হয়।এই প্রতিবেদক পরিদর্শনের সময় জনৈক নাজমুল হককে খালের পাশে জায়গা দখলের করে ঘর নির্মাণ করতে দেখা যায়, অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- এগুলো তার কাগজপত্রের জায়গা ও তিনি দীর্ঘদিন ভোগদখলে রয়েছেন।
বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ ক্রোকারিজের মালিক বলেন- খালের উপর তার দোকান ছিলো, দোকানের আয়ে ২ছেলে ২মেয়ে সহ ৬ জনের সংসারের ভরণপোষণ করে ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষিত করে বিয়ে-শাদি দিয়েছেন। বিগত ০৮/০৮/২০২০ইং তার দোকানটি উচ্ছেদ করা হয় এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার ঘরটি উচ্ছেদ করলেও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলে তিনি জানান।স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা এম এম তালেব আলী জানান- পানি নিষ্কাসন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক করতে কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও বাকীগুলো উচ্ছেদ না করায় লাভ কিছুই হয়নি। এবারের বর্ষাকালেও জলাবদ্ধতা তৈরি হবে।
ইউপি সদস্য মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান – ইতিমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বারবার জমাদার বাজারে পরিদর্শনে আসেন। কিছু সংখ্যক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও খাল সংস্কার না করায় পানি নিষ্কাসন স্বাভাবিক হয়নি, জলাবদ্ধতাও নিরসন হয়নি।চরচান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন- শুকুনিয়া খাল জবরদখল করে যারা অবৈধভাবে দোকান ও ভবন নির্মাণ করেছেন প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চরদরবেশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টু বলেন- বিগত সময়ে এই খাল খননের জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ কোন অদৃশ্য ইশারায় তা থেমে যায়। আমরা চাই শুকুনিয়া খালটি অবৈধ দখলমুক্ত হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়ে স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান হোক।উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি জাকির হোসেন জানান- জমাদার বাজার এলাকায় অবৈধভাবে খালের উপর যারা দোকানঘর ও ভবন নির্মাণের মাধ্যমে খাল সংকুচিত করে যারা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেছেন, সার্ভে করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।