প্রতিনিধি ১৮ জানুয়ারি ২০২১ , ৪:৪০:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নিরাপদ নগর হবে রাজশাহী
রাজশাহী মহানগরীকে ‘নিরাপত্তার নগরী’ হিসেবে আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঘোষণা দিতে চান আরএমপি’র কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। এলক্ষে তিনি কাজ করে চলেছেন। দায়িত্বভার গ্রহণের দুই মাসের মধ্যেই তিনি রাজশাহীবাসীর মাঝে আশার সঞ্চার জাগিয়েছেন।
গত ১০ সেপ্টেম্বর আরএমপিতে যোগদানের পর তিনি বেশকিছু গরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তিনি অপরাধ দমনে ও অপরাধীকে ধরতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছেন। সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় শুরুতেই তিনি মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। মহানগরীকে মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত করতে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন। কমিশনার হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তার নেতৃত্বে গত দুই মাসে ৩৬ কেজি গাঁজা, ৫ কেজি ৩২৭ হেরোইন, ৮ হাজার ৫৭৩ পিচ ইয়াবা, ৮৩৮ লিটার চোলাই মদসহ বিপুল পরিমাণ বিদেশী সিগারেট ও টেপেন্টাডল নামের বেথানাশক ভারতীয় মাদক জাতীয় ওষুধ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তিনি দায়িত্বভার গ্রহণরে পর আরএমপিতে বেশ কিছু নতুন ইউনিট চালু করেছেন যা সুনির্দিষ্ট অপরাধ দমনে কাজ করছে। এর সুফলও পেতে শুরু করেছে নগরবাসী। এর মধ্যে রয়েছে, অপারেশন কন্ট্রোল এ্যন্ড মনিটরিং সেন্টার, মোবাইল ট্রাকিং, কিশোর গ্যাং ডিজিটাল ডাটাবেজ, হ্যালো আরএমপি এ্যপ।
অপারেশন কন্ট্রোল এ্যন্ড মনিটরিং সেন্টার : সিকিউরিটি ক্যামেরা বা সিসি টিভির মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ মোড় বা এলাকা সার্বক্ষণিক মনিরটরিং করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং এর জন্য আলাদা ইউনিট চালু করা হয়েছে। সন্দেহভাজন ও অপরাধীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধী শনাক্তসহ মেট্রো এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই কন্ট্রোলরুম। অপরাধী চিহ্নিত করা, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি টিভির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিরা রাখছে। এরই মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কেসে সফলাতাও এসেছে। নগরীতে প্রকাশ্যে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ১৭টি স্বর্ণের বার (আনুমানিক মূল্য দেড় কোটি টাকা) ছিনতাই নাটক এবং মোবাইল শোরুমের সামনে থেকে কর্মচারীর সাজানো ৩৭ লাখ টাকা ছিনতাই নাটকের সমাধান করা হয়েছে সিসি ক্যামেরায় পাওয়া সূত্র ধরে। এরই মধ্যে অপারেশন কন্ট্রোল এ্যন্ড মনিটরিং সেন্টারের আওয়াত নগরীর ২৫০টি ক্যামেরা কাজ করছে। আরো ২৫০টি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।
মোবাইল ট্রাকিং : মহানগরীতে হারানো মোবাইল উদ্ধারে মোবাইল ট্রাকিং সিস্টেম কার্যকর ভূমিকা রাখছে। পলাতক আসামী বা সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে মূল অপরাধী ধরতে সহায়তা করছে। এরই মধ্যে কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে এধরণের প্রযুক্তির ব্যবহারে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে।
কিশোর গ্যাং ডিজিটাল ডাটাবেজ : কিশোর অপরাধ দমনে তৈরি করা হয়েছে কিশোর গ্যাং এর বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত ডিজিটাল ডাটাবেজ। এরই মধ্যে প্রায় ৪শ কিশোরের বিস্তারিত তথ্য ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাদের বয়স ২১ বছরের মধ্যে। ডাটাবেজে সংশ্লিষ্ট কিশোরের ছবিসহ ঠিকানা এবং তার অভিভাকদের বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত করা হচ্ছে। এই তথ্য ধরে স্থানীয় থানা পুলিশের মাধ্যমে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম মনিটরিং করা হচ্ছে। যাতে ওই সকল কিশোর আগামীতে কোনো ভুল পথে পা না বাড়ায়।
হ্যালো আরএমপি এ্যপ : এই এ্যপের মাধ্যমে একজন সেবাপ্রাথী ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি করতে পারবেন। এছাড়া পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটও সংগ্রহ করতে পারবেন। এই এ্যাপে রয়েছে সংশ্লিষ্ট সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের নম্বর। এ্যাপটি চালুর মাধ্যমে নগর পুলিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সাথে নাগরিকদে দোর গোড়ায় পুলিশ সেবা পৌছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে।
আরএমপির কমিশানর আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, অভিযোগ বা মামলা সমাধানে আমাদের ১০০ ভাগ এ্যচিভমেন্ট আসছে। প্রযুক্তির ব্যবহারে মহানগরীর ৪৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রতিটি ইঞ্চি আমাদের মনিটরিয়ের আওতায় থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়, ভদ্রা, কামারুজ্জামান চত্বর, লক্ষিপুর মোড়, সিএ্যন্ডবি মোড়, জিরো পয়েন্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সার্বক্ষণিক মনিটরিংএ রাখা সম্ভব হচ্ছে। অপারেশন কন্ট্রোল এ্যন্ড মনিটরিং সেন্টারের আওতায় স্থাপিত ক্যামেরাগুলো হাই রেজুলেশনের এবং নাইট ভিশন সুবিধা রয়েছে। যা ৮০ মিটার পর্যন্ত কার্যকর।
তিনি আরো বলেন, মাদককে নির্মুল করার চেষ্টা করেছি, কিশোর গ্যাঞ্জ নির্মুলের চেষ্টা করেছি এবং আপনাদের সহযেগাীতায় রাজশাহী নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিতে চাই। আমি আরএমপিকে ‘নিরাপত্তার নগরী’ হিসেবে ২৬ মার্চ স্বাধীতা দিবসে ঘোষণা দিতে চাই। রাজশাহী নগরী হবে নিরাপত্তার নগরী, প্রতিটি মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। রাজশাহী নগরী হবে শান্তির নগরী। মহানগরীতে কোনো মাদক থাকবে না, জঙ্গিবাদ থাকবে না, সন্ত্রাসী থাকবে না। এই শান্তির নগরীকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য মহানগরীর সকলের সহযোগীতা চাই। যারা মাদকাসক্ত তাদের পুনর্বাসন করা হবে। তার পরেও যদি কেউ মাদকের সাথে জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।