প্রতিনিধি ২৭ এপ্রিল ২০২৪ , ৩:১৯:৪১ প্রিন্ট সংস্করণ
আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেছেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে দিশেহারা হয়ে ভারতের গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ হয়েছে। উগ্রবাদিরা শ্মশান পূজার নামে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছে। শ্মশান পূজায় নাঙ্গা তলোয়ারের শাস্ত্রীয় ব্যাখা দিতে হবে। মন্দিরে আগুন দেয়ার অজুহাতে কোন প্রকার তদন্ত ছাড়াই দুই সহোদর হাফেজে কুরআন শ্রমিক হত্যাকান্ডের ঘটনা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ ঘটনা দেশ ও মুসলিম উম্মাহর জন্য অশনিসংকেত। তিনি ১লা মে’র মধ্যে ফরিদপুরের মধুখালির ঘটনার বিচার দাবি করেন। অন্যথায় ৩ মে শুক্রবার ঢাকাসহ সারাদেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে সরকারকে সতর্ক সংকেত দিবে। তারপরও সরকার কর্ণপাত না করলে পরবর্তীতে কঠিন থেকে কঠিন কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।
আজ শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে ফরিদপুরের মধুখালিতে কতিপয় উগ্র সন্ত্রাসী কর্তৃক নিরীহ হাফেজে কুরআন দুই সহোদর শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, ডা. শহিদুল ইসলাম, মুহাম্মদ হাসমত আলী, মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মুফতী ফরিদুল ইসলাম। প্রচন্ড তাবদাহ উপেক্ষা করে ঈমানী চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ঈমানদার জনতা রাজপথে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডে প্রতীয়মান হয় যে, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি ভারতের কাছে ইজারা দিয়েছে। স্যার সলিমুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পূজা পার্বণ, হোলি খেলার নামে বেহায়াপনা হয়, কিন্তু নামাজ, ইফতার ও কুরআনের ক্লাসে নিষেধাজ্ঞা জারি করে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে উঠছে। স্যার সলিমুল্লাহ ঢাবি প্রতিষ্ঠা করেছেন মুসলামনদের নামাজ, ইফতার ও ইসলাম চর্চার জন্য, নাস্তিক-মুরতাদদের আখড়া বানানোর জন্য নয়। অতিসম্প্রতি হিন্দুপন্ডিতদের উস্কানিমূলক বক্তব্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের শামিল। তিনি আরও বলেন, মোদি সরকার ভারতের নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে মধুখালির ঘটনা ঘটিয়ে উস্কানি দিয়ে ভারতে তার দলের পক্ষে ভোট ক্যারি করতে চায়। দেশের মিডিয়া, প্রশাসনসহ সর্বত্র ‘র’ এর নিয়ন্ত্রণে? তাহলে দেশের স্বাধীনতার কী দরকার ছিলো? বাঘের মত একদিন বাঁচতে চাই, শিয়ালের মত হাজার বছর বাঁচতে চাই না।
ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমীর আরও বলেন, সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। শিক্ষায় ভারতের আদলে ক্লাসে নাচ-গানসহ হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি শিক্ষা দিচ্ছে। তিনি বলেন, জেল-জুলুমসহ যে কোন নির্যাতন বরণ করতে প্রস্তুত, তবুও ভারতের গোলামির জিঞ্জিরে আবদ্ধ হবো না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, প্রশাসন এবং দেশের জনগণ একটি দেশের কাছে জিম্মি। ফরিদপুরের ঘটনা সরকারের জন্য লজ্জার। সরকারের ভুমিকা রহস্যজনক। সরকার মুসলমানের পক্ষে না থেকে ভারতের গোলামি করলে জনগণ ক্ষমা করবে না।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, মধুখালির ঘটনা দেশের জন্য একটি অশনিসংকেত। গণপিটুনিতে দুই সহোদরকে হত্যা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। সরকার ও প্রশাসনের ইন্ধনেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে। তিনি বলেন, একটি অশুভ শক্তি ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে দেশকে গভীর সঙ্কটে ঠেলে দিচ্ছে। ঘটনার এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও প্রশাসন অপরাধীদের কাউকে গ্রেফতার না করা রহস্যজনক। তিনি দাবি করেন, হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে কঠোর বিচার করতে হবে। মন্দিরে হামলাকারীদের পরিচয় জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। কেননা এর আগেও বিভিন্ন মন্দিরে হিন্দুরাই হামলা করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পাঁয়তারা করেছে।
মাওলানা ইমতিয়াজ আলম বলেন, ফরিদপুরে উগ্রবাদিদের তান্ডব মেনে নেয়া যায় না। উগ্রবাদি হিন্দুরা দেশের সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম হত্যায় মেতে উঠেছে। তিনি বলেন, বিনা ভোটের সরকার দেশকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। দেশের সীমান্তে প্রতিনিয়ত বিএসএফ বাংলাদেশিদের পাখির মত গুলি করে হত্যা করছে, সরকার কোন প্রতিবাদ করছে না। এই সরকার ভারতের তাঁবেদার সরকার। তিনি সরকারকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন, ঠিক হয়ে যান, অন্যথায় দেশবাসি আপনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, মুসলিম নেতা স্যার সালিমুল্লাহ প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নাস্তিকদের আস্তানা হতে দেয়া যাবে না। তাহলে স্যার সালিমুল্লাহর সাথে গাদ্দারি হয়ে যাবে। আমাদের মাতৃভুমি ডাকাতি করার চক্রান্ত চলছে। ইস্তিসকার নামাযের অনুমতি না দিয়ে ঢাবি প্রশাসন দেশবাসির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। তিনি নাস্তিকমুক্ত ঢাবি গড়ে তুলতে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, উগ্রবাদি হিন্দুরা দেশীয় তলোয়ার, অস্র হাতে আনন্দ মিছিল করে, এটা অশুভ লক্ষণ!
পরে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, পল্টন মোড়, বিজয়নগর হয়ে পুনরায় পল্টন মোড়ে এসে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।