এ এইচ সবুজ-কবি নজরুল কলেজঃ
রাজধানীর পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকদের জন্য হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে।গত ১৫ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ সাক্ষরিত নোটিশে শিক্ষকদের এ নির্দেশনা দেয়া হয়।নোটিশে শ্রেণিকক্ষ এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারী শিক্ষকদের হিজাব না পরতে বলা হয়েছে।সূত্রে জানা যায়,সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুল এন্ড কলেজে মুসলিম নারী শিক্ষক এর সংখ্যা ২০ জন।এর মধ্যে হিজাব ব্যাবহার করেন ৭-৮ জন।
অধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত নোটিশটি গত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।এতে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা নানা ভাবে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন সৌরভ তার ফেসবুক প্রোফাইলে নোটিশটি পোস্ট করে লিখেছেন,একটি প্রতিষ্ঠান এর অধ্যক্ষ'র কাছ থেকে এমন নোটিশ আশা করিনা।এমন অসম্মানজনক কাজের জন্য অধ্যক্ষ'র পদত্যাগ করা উচিত।
তাসলিম আহমেদ লিখেছেন,নোটিশটা সত্য হলেও দুর্ভাগ্যজনক। এমন গ্রেগরী হয়ত আমরা চাইনি।আসাদুজ্জামান রোহান লিখেছেন,গ্রেগরি কতদূর নেমে গেছে। লজ্জা করে ভাই।এত গৌরবময় প্রতিষ্ঠান থেকে এটা আশা করি না। গ্রেগরিয়ানরা সচেতন হোন। আপনি নিরাপদ হাতে নেই। ফারহান রহমান লিখেছেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে আমি এই প্রতিষ্ঠান থেকে চলে এসেছি। এই কারণেই ছাত্ররা তাদের অন্ধকার দিকগুলি সম্পর্কে জানার পরে সেন্ট গ্রেগরীতে আর পড়াশোনা করতে পছন্দ করে না। ধর্মীয় চর্চার কোন স্বাধীনতা আছে এখন মনে হচ্ছে না।
হিজাব নিষিদ্ধ'র নোটিশটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ব্রাদার প্রদীপ প্লাসিড গোমেজ জানান,❝নোটিশটি সত্য। তবে আমরা জোড়ালো ভাবে কোনো পদক্ষেয় নেইনি।আমরা তো বলিনি যে আজ থেকেই নোটিশ কার্যকর হবে।
আর আপনারা তো জানেন,আমাদের এখানে হিন্দু,মুসলমান, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করে। সব ধর্মের শিক্ষকরা এখানে পাঠদান করেন। আমরা এখানে এমন একটা পরিবেশ চাই যেখানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের মা,বাবা,ভাই ও বোন হিসেবে গ্রহণ করবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এমন এক পরিবেশ। যা সবাই গ্রহণ করবে।
কেউ কারো ধর্মকে আঘাত করবে না।আমাদের প্রতিষ্ঠানে এমন ইচ্ছে কারোর নেই।আমি অন্তত বিশ্বাস করিনা।❞নোটিশটি বলবৎ থাকবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্লাসিড গোমেজ বলেন, ❝নোটিশটির মাধ্যমে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।আমরা আমাদের গভর্নিং বডিতে এ বিষয়ে আলোচনা করব। কারো কোনো ক্ষোভ আছে কিনা ? আমরা জানবো এবং এরপরে পদক্ষেপ নেব।❞
তিনি আরো বলেন, ❝ধর্মকে আঘাত করার জন্য এমন নোটিশ দেয়া হয়নি।এখানে একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।আমাদের এখানে ধর্মীয় ভাবে কাউকে ছোট করে দেখার কোন সুযোগ নেই।❞প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মামুন বলেন,❝আমাদের এখানে কোন ধর্মকে ছোট করে দেখা হয় না। দেখা যায় যে ক্লাস চলতেছে বা কোন প্রোগ্রাম চলতেছে এদিকে নামাজের সময় সময় হলে অনেক শিক্ষার্থী নামাজের জন্য চলে গেছে।
নোটিশটি আমাদের প্রতিষ্ঠান এর ভিতরের পরিবেশে বলা হয়েছে। যেমন,টি-শার্ট পড়ে ক্লাসে আসা যাবে না।তারপরও অনেকে চলে আসে। আর ঐ নোটিশটা নিয়ে আমরা তখন ঐভাবে চিন্তাও করি নাই। গত রাতে ভাইরাল হওয়ার পর দেখলাম এটা একটা ইস্যু হয়ে গেছে। কিন্তু গ্রেগরিতে ধর্ম নিয়ে কাউকে কখনোই ছোট করে দেখা হয়না।
১৮৮২ সালে আমেরিকান মিশনারিদের দ্বারা পুরান ঢাকার প্রাণ কেন্দ্রে এই বিদ্যালয় এর প্রতিষ্ঠা হয়। ঢাকার নটরডেম কলেজ-এর জন্ম এই স্থানেই। ১৯৫৩ সালে বর্তমান ক্যাম্পাস থেকে নটরডেমকে সরিয়ে মতিঝিলে স্থানান্তরিত করা হয় এবং একে সেন্ট গ্রেগরি উচ্চ বিদ্যালয় হতে আলাদা করে দেয়া হয়। ১৯১২ সালে সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এখানে ছেলে ও মেয়ে এক সাথে পড়াশুনা করত। পরবর্তীতে এটি বয়েজ স্কুল এ পরিণত হয়।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.