• আইন ও আদালত

    সুজানগরে গ্রাহকদের প্রায় ৩কোটি টাকা উধাও, পোস্ট মাষ্টার,পোস্ট ম্যান সাসপেন্ড

      প্রতিনিধি ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:৫০:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

    সেলিম মোর্শেদ রানা-পাবনা প্রতিনিধি:

    পাবনা সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে নগদ এর নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় প্রায় ৩কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন ওই পোস্ট অফিসের পোস্ট মাষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোষ্টম্যান ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল। এর আগে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা তাদের সাথে প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে টাকা ফেরত দেবার দাবি জানিয়ে সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। খবর পেয়ে পাবনা প্রধান ডাকঘরের কর্মকর্তারা গিয়ে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের টাকা পোস্ট মাষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোষ্ট ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল এর নিকট থেকে নিয়ে ফেরত প্রদানের আশ্বাস দেন।

    এ দিকে ঘটনা জানাজানি হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডেপুটি পোষ্টমাষ্টার জেনারল স্বাক্ষরিত স্বারক নং- ১৪.৩১.৭৬০০. ৩৪৮.২৭.০৩৩.২১ -৩০-০১-২০২২ইং তারিখে পোষ্টমাষ্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে হঠাৎ সাতবাড়িয়া পোষ্ট অফিসে বদলী করা হয়। এদিকে পোস্ট ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত সেই অর্থ ফেরত না পাওয়ায় প্রতিদিন সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের সামনে ভিড় করছেন প্রতারণার শিকার বেশ কিছু ভুক্তভোগী । ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ সাগরকান্দি ইউনিয়নের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে প্রায় ৩কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল।

    প্রতারণার শিকার প্রদীপ কুন্ডু নামে এক গ্রাহক জানান, সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে ২ মাস আগে আমি ৮ লাখ টাকা রাখতে গেলে পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্ট ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাকে বলেন, নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি এজন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেবার জন্য পোস্ট অফিসের পাশাপাশি পল্লী কুড়িয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ (নগদ) নামে সরকার আরেকটি সংস্থা চালু করছেন। তাদের সেই কথা সত্যি ভেবে সরল বিশ্বাসে আমি তাদের হাতে টাকা দিয়েছিলাম। এ সময় পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট অফিসের লোগো যুক্ত একটি টাকা জমা ও উত্তোলনের জন্য নগদ-এ মার্চেন্ট নামক একটি পাশ বহি প্রদান করেন।

    ভুক্তভোগী মানিক মোল্লা নামে অপর এক গ্রাহক বলেন, সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে ৩ লাখ টাকা জমা রাখতে গেলে পোস্ট অফিসের পল্লী কুড়িয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ (নগদ) সংস্থায় টাকা রাখলে সরকার এক লাখে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে লাভ প্রদান করছে বলে পোস্ট ম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমার থেকে টাকা নেন। এ সময় তিনি আমাকে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ রেজিঃ নং-সি-৫৩৬৭৭(৩৪২)২০০৪ এর একটি টোকেন হাতে দেন।
    একই ধরণের অভিযোগ করেন বুলু খাতুন, খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, হুলুফা খাতুন সহ ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা। সাগরকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী জানান,

    গত কয়েকদিন আগে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা সাব পোস্ট অফিসের সামনে বিক্ষোভ শুরু করলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতে পারি। পরে স্থানীয় লোকজন আমাকে জানিয়েছেন, পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের যোগসাজশে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৩কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন পোস্ট মাষ্টার পোষ্টম্যান। এ দিকে এ ঘটনার পরপরই সাগরকান্দি সাব পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাতবাড়িয়া সাব পোষ্ট অফিসে এবং সাতবাড়িয়া সাব পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলামকে সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসে বদলি করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের নতুন পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, পোস্টম্যান নূর হোসেন কোথায় আছে তিনি জানেন না, তবে গ্রাহকের বহি হাতে নিয়ে বলেন,

    এই সব বহি ডাক বিভাগের না, গ্রাহকের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেনের বাড়ি চাটমোহর উপজেলা হরিপুর গ্রামে গেয়েও তাকে পাওয়া যায় নাই, তবে তার স্ত্রি বলেন আমি বেঁচে থাকলে সবার টাকা ফেরত দিয়ে দেব, বকুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত অপর পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িত নন বলে দাবি করলেও, গ্রাহকরা তার কাছে টাকা দিয়েছে বলে দাবি করেন। এ বিষয়ে পাবনা ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা শিকার করে জানান,

    ,সাগরকান্দি সাব পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল পল্লী কুড়িয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ এর বহি ছাপিয়ে মানুষের কাছ থেকে লাখে এক হাজার টাকা করে লাভ দেবার কথা বলে টাকা নিয়েছে বলে অভিযোগ পেয়েছি ভূক্তভোগীদের কাছ থেকে। তবে পোস্ট অফিসের সাথে পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রাঃ লিঃ নগদ এর কোন ধরণের সম্পর্ক নেই। বহিতে নগদের লোগো ও পোষ্ট অফিসের মনোগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে। মূলত প্রত্যন্ত অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে পাবনা ডিপোটি পোষ্ট মাষ্টার জেনারেল আনোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটির রিপোর্ট হাতে পেয়েছি তবে ৩ কোটি টাকা না। ঘটনা সত্যতা পাওয়ায় গত কাল (বৃহাস্পতিবার) দুইজনকে সাসপেন্ড করেছি। দুইজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্ততি নিচ্ছি ।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ