প্রতিনিধি ৩ অক্টোবর ২০২২ , ১১:০০:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ লুৎফর রহমান লিটন-সলংগা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি বাতিল করায় পরীক্ষা-ক্লাস বন্ধ হওয়ার পর প্রায় দুই মাস যাবত অচলাবস্থায় রয়েছে সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজ। এতে কলেজে অধ্যয়নরত দুটি ব্যাচের এক শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এছাড়াও কলেজটিতে রয়েছে শিক্ষক সংকট, বাজেট সংকট, ল্যাব সরঞ্জামাদি সংকট এবং সুপেয় পানিসহ নানা সংকট।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্তি বাতিলের পর থেকে স্বতন্ত্র অনুষদসহ বিভিন্ন দাবিতে টানা দুইমাস একাডেমিক ভবন তালাবদ্ধ করে, বিক্ষোভ-মানববন্ধনসহ আন্দোলন করলেও কোন সুরাহা হয়নি। যদিও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দাবীর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বলছেন, বিষয়টি নিরসনে বৈঠক হলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। আর প্রাণী সম্পদ সচিব বলছেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। দ্রুত জেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ অবস্থায় দ্রুত সমস্যা সমাধানে শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, প্রাণী সম্পদ বিভাগ নিয়ন্ত্রণাধীন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হিসেবে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ হতে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার আজুগড়া এলাকায় সিরাজগঞ্জ সরকারী ভেটেরিনারি কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। সে হিসেবে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভেটেরিনারি কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের এ্যানিমেলস সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের একই লেভেল এবং অভিন্ন প্রশ্নপত্রে একই সময়সূচিতে পরীক্ষা হয়। কিন্তু শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গত ২২ জুলাই শুধু তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করলেও সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত দেয় না।
কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার ডীন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সাথে যোগাযোগ করলেও কোন সাড়া পায়নি। ফলে ভেটেরিনারি কলেজের ১ম বিভাগ ও ২য় বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার পরীক্ষা দেয়া সম্ভব হয়নি। এতে শিক্ষার্থীদের অন্তত ৬ মাস পিছিয়ে পড়েছে। এ খবর জানার পরই গত ২৫ জুলাই শিক্ষার্থীরা একাডেমিকভবন ও অধ্যক্ষের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত দুই মাস কলেজে কোন ক্লাস বা কার্যক্রম চলছে না। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছে না। এ অবস্থা আমাদের শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী এস.এম ওলিউল্লাহ ও রিয়াদ হোসেন জানান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ হওয়া সত্ত্বেও বিনা নোটিশে আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এতে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম অন্তত এক বছর পিছিয়ে পড়েছে। আদৌ পরীক্ষা হবে কিনা তা আমরা জানি না। দুই মাস ১০দিন যাবত ক্লাসসহ একাডেমিক সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। আমাদের শিক্ষাজীবনের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।
শিক্ষার্থী হাবিবা খাতুন ও জয়শ্রী জানান, সিরাজগঞ্জ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজটিতে সংকটের শেষ নেই। কিন্তু সংকট নিরসনে কেউ এগিয়ে আসছে না। বিষয়ভিত্তিক কোন শিক্ষক নেই। এক বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে অন্য বিষয়ে পড়াশোনা করায়। এতে পড়াশোনার মান নষ্ট হচ্ছে। ল্যাবে সরঞ্জামাদি না থাকায় প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস করা হচ্ছে না। এছাড়াও দুষিত পানি করছি। সব মিলে আমরা চরম মানসিক সমস্যায় ভুগছি।
শিক্ষার্থী আব্দুস সাত্তার ও মিরাজ জানান, দুই মাস যাবত একটি প্রতিষ্ঠান অচল। অথচ শিক্ষামন্ত্রীর কোন নজর নেই। শিক্ষার্থীর পড়াশোনার কথা চিন্তা করে অন্তত বিষয়টি দ্রুত সুরাহা করা উচিত। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ন্যায্য উল্লেখ করে কলেজটির অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম জানান, বিষয়টি নিয়ে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করা হয়েছে কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরাও যেমন পিছিয়ে পড়ছেন তেমনি মহাসংকটের মধ্যে রয়েছে কলেজটি। এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশিদ জানান, সিরাজগঞ্জ ভেটেরিনারি কলেজের সমস্যার বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি জেনে তারপর ব্যবস্থা নেব।