• রাজশাহী বিভাগ

    সিরাজগঞ্জে সরিষা চাষে মৌ-মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ

      প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:৫০:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ মিজানুর রহমান-জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ:

    শীতের শিশির ভেজা সকালে ঘনকুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো সরিষার হলুদ ফুলে রঙিন হয়ে উঠেছে সিরাজগঞ্জের দিগন্তজোরা মাঠ।জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ গুলোতে ব্যাপকহারে সরিষার চাষ হয়েছে। সবুজ গাছের ফুলগুলো শীতের সোনাঝরা রোদে যেন ঝিকিমিকি করছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই মনে হচ্ছে সরিষা ফুলের হলুদ আচ্ছাদনে ঢেকে আছে চারদিক। এ যেন এক অপরুপ সৌন্দর্যের দৃশ্য। দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা সেজেছে গায়ে হলুদ বরণ সাজে। চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় সারে ৩ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া সরিষা চাষের উপযোগী থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষিরা। এই মৌসুমে জেলার ৯টি উপজেলায় ৬৩ হাজার ৫ শ’হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। চারদিকে সরিষা ফুলের মৌ -মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ গুলো। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির ষড়ঋতুর এই দেশে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে যেমনি প্রকৃতি রুপবদলায়,তেমনি বদলায় ফসলের মাঠ। সবুজ,সোনালী ও হলুদ সাজে ফসলের মাঠ। এমনই ফসলের মাঠ পরিবর্তনের এ পর্যায়ে হলুদ সরিষা ফুলের চাঁদের ঢাকা পরেছে ফসলের মাঠ। ২০২১-২২ মৌসুমে জেলায় ৫৪ হাজার ৬শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সরিষা চাষ করে লাভবান হওয়ায় এ মৌসুমে সরিষা চাষের জমির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

    জেলা কৃষিস্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, এবার জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ১শ’ ২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সর্বো নিম্ন চৌহালী উপজেলা ২৪ শ’ ২৫হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এছাড়াও সদর উপজেলা ২ হাজার ৮শ’ ২০ হেক্টর, কাজীপুর ১ হাজার ২শ’ ২৫ হেক্টর,রায়গঞ্জে ৬ হাজার ৭শ’ ৪৫ হেক্টর, তাড়াশে ৬ হাজার ২০ হেক্টর, শাহজাদপুরে ১৪ হাজার ৫০ হেক্টর, বেলকুচিতে ৭ হাজার ৩শ’ ২৫ হেক্টর, কামারখন্দে ২ হাজার ৭শ’ ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন জাতের সরিষার আবাদ হলেও টরি-৭,বারি-১৪, বিনা-৯,বিনা-১৪, জাতের সরিষার আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এবার ইউরিক অ্যাসিড মুক্ত ক্যলানিয়া জাতের সরিষা চাষ হয়েছে অনেক জায়গায়। যা চাষাবাদে সময় লাগে ৮৫ থেকে ৯০ দিন। যেখানে অন্যান্য জাতের সরিষা চাষাবাদে সময় লাগে প্রায় ১শ’ ২০ দিনের মতো। কৃষকেরা এ জাতের সরিষা চাষ করে প্রচলিত জাতের তুলনায় প্রায় দের থেকে দুইগুণ বেশি আয় করতে পারবেন। এই সরিষার তেল স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এ মৌসুমে সরিষা চাষের প্রণোদোনা হিসাবে জেলায় ৩৫ হাজার ২০০ জন কৃষকদের মধ্যে বিঘা প্রতি ১কেজি বীজ,২০ কেজি ডিএসপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার প্রদান করেছেন জেলা কৃষি বিভাগ।

    সদর উপজেলা বহুলী ইউনিয়নের আলোক দিয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, ৪ বিঘা জমিতে আমি সরিষার আবাদ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ৪ থেকে ৫ মন করে সরিষা পাবো বলে আশা করছি। উল্লাপাড়া উপজেলা বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের হাওড়া গ্রামের কৃষক আলাউদ্দিন আকন্দ বলেন, ৭ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সার্বক্ষণিক পরিচর্যার ফলে সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় ৩০থেকে ৩৫ মন সরিষা পাওয়ার আশা করছি। কাটা ও মাড়াই করা দিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে। উল্লাপাড়া উপজেলা উধুনিয়া ইউনিয়নের বিনায়েকপুর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া বলেন, ৬ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সার্বক্ষণিক পরিচর্যার ফলে সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় ৩০থেকে ৩৫ মন সরিষা পাওয়ার আশা করছি। কাটা ও মাড়াই করা দিয়ে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা খরচ হবে।

    উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ই্য়ামিন সুমি বলেন, সারা বাংলাদেশের মধ্যে এ জেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে উল্লাপাড়ায় সর্বোচ্চ। আমরা সরিষার আবাদ সম্প্রসারণে কৃষকদের মাঝে কৃষি প্রণোদনা এবং বিভিন্ন প্রদর্শনী স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি । যেহেতু ভোজ্য তেলের উপর আমাদের আমদানির নির্ভরতা কমাতে হবে, এই জন্য আমরা সরিষার আবাদ যাতে বেশি হয়,তার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আগমনী ৩ বছরে ভোজ্য তেলের ৪০% বাড়াতে হবে। সেই হিসাবে এই জেলায় গত বছরের চাইতে ৮ হাজার ৮শ’ ৪৫ হেক্টর জমিতে বেশি সরিষার চাষ হয়েছে। এছাড়াও সরিষার ফলন যেন আরো ১৫% বৃদ্ধি পায় সেই কারনে সরিষার জমিতে মৌ-বক্স বসানো হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে সরিষার ফলন ১৫ থেকে ২০% বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরিষার জমি থেকে আমরা খাঁটি মধু উৎপাদন করতে পারবো। এ বছরে জেলায় মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩ শ’ ৫০ মেট্রিকটন। এখন পর্যন্ত মধু উৎপাদন হয়েছে ৮০ মেট্রিকটন। আশা করছি বাকি সময়ের মধ্যে আমাদের মধু সংগ্রহের লক্ষ্য মাত্রাও পুরন হবে বলে তিনি জানান।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ