প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২১ , ২:৫০:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্কঃ
মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলের ফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা
ফুটবলে গ্যালারির এমন উন্মাদনা দেখার সুযোগ কমই আসে। কিন্তু ম্যাচ যত সামনে এগোতে থাকে, একটা উৎকেণ্ঠাও বাড়ে। এই গ্যালারিভরা দর্শকের শেষটায় না হতাশা নিয়ে ফিরতে হয়। কারণ গোল যে হচ্ছিল না। একচেটিয়া খেলছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ভারতীয়রা প্রাণপণ প্রতিরোধ করে যাচ্ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মাঠে ডান প্রান্ত থেকে রাইট ব্যাক আনাই মোগিনির একটি লম্বা শট ভারতীয় গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়েও জালে পৌঁছে গেলে সব অপেক্ষার অবসান।
ম্যাচের তখন ৮০ মিনিট। সারাক্ষণ স্বাগতিকদের ফিরিয়ে যাওয়া ভারতীয়রা সেই গোল কি আর শোধ করতে পারে! পারেওনি। মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে তাই টানা দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা বাংলাদেশের। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে নেমেছিলেন মারিয়া, মনিকারা। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে কেন তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ার সেরা, কাল ম্যাচের প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়েছেন তাঁরা। এই অঞ্চলে যেকোনো খেলায় দাপট দেখানো ভারত কাল ফাইনালের শুরু থেকেই কোণঠাসা। প্রেসিং ফুটবলে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষের অর্ধে উঠে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করছিল। একের পর এক আক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল ভারতের বক্সে। ১৫ মিনিটে গোল পেতে পেতেও পায়নি বাংলাদেশ। বক্সের বেশ বাইরে থেকে মারিয়ার লং শট ছিল। ভারতীয় গোলরক্ষক হাতে জমাতে পারেননি।
সুযোগসন্ধানী তহুরা খাতুন আলতো টোকায় তা পোস্টের দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়, বলটা গোল লাইনের ওপরই ঘুরতে থাকে। সহকারী রেফারির সাহায্য নিয়ে মূল রেফারি অঞ্জনা রায় জানিয়ে দিলেন, গোল নয়। বাংলাদেশ প্রতিবাদ করেছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। তবে ততক্ষণে গ্যালারি ভরিয়ে তোলা দর্শক স্বাগতিকদের দাপট দেখে ফেলেছে। গোলটা তখন সময়ের ব্যাপার বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই সময়টা ক্রমে পিছিয়ে যাচ্ছিল।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে ডান দিক থেকে থ্রো ইনের পর আনাইয়ের প্রথম লং শট দূরের পোস্টে বাধা পেয়ে ফিরে আসে। তখন কে জানত এটিই গোলের রিহার্সাল ছিল তাঁর। সেবার স্রেফ ভাগ্যবঞ্চিতই মনে হয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু মেয়েরা হতাশ না হয়ে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ বাড়িয়েই চলে। এর মধ্যে ভারত কাউন্টারে ওঠার বার দুয়েক চেষ্টা করেছে। কিন্তু আঁখি খাতুনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের ব্যাক লাইন তারা টলাতে পারলে তো। তবে বাংলাদেশের গোলের অপেক্ষাতেই প্রথমার্ধ শেষ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ার্ধে একই রকম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশ। গোলের জন্য নাছোড়। তবে মাঝমাঠ থেকে আঁখির একটি লং শট প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফেরার পর শাহেদা খাতুনের অ্যাক্রোব্যাটিক ভলিটাও ক্রসবার কাঁপিয়ে চলে যায়। কোণঠাসা ভারত বারবার যেন শেষ আঘাত ফিরিয়ে যাচ্ছিল ম্যাচে নিজেদের ধরে রাখতে। বাংলাদেশের অর্ধে একরকম অলস সময়ই কাটিয়েছেন গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা। ৬৩ মিনিটের দিকে আমিশা বালার ক্রসে লিন্ডা ক্রম লাফিয়ে উঠে মাথা ছোঁয়ালে প্রথম পরীক্ষায় নামতে হয় তাঁকে। কিন্তু অনায়াসেই সেই বল গ্রিপে নিয়েছেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক। অন্য প্রান্তে শাহেদা খাতুনের কর্নারের পর বক্সের জটলা থেকে তহুরা বল জালেও ঠেলেছিলেন, কিন্তু সহকারী রেফারির অফসাইডের পতাকা উড়ে যায়।
এরপর ভারতই প্রথম বদলি নামায় ফরোয়ার্ড লাইনে। বাংলাদেশের সাইড লাইনে আনুচিং মোগিনিও তখন ওয়ার্ম আপে নেমেছেন। তাঁরই বোন আনাই সেই অপেক্ষায় গেলেন না। এবারও ডান দিকে মাঝমাঠের একটু ওপরে বল ধরলেন। ডান পায়ের লম্বা এক শট ভাসিয়ে দিলেন হাওয়ায়। তাতে যে গোলেরই ঠিকানা লেখা। ভারতীয় গোলরক্ষক তা ফিস্ট করে ওপর দিয়ে বের করে দিতে চাইলেন, কিন্তু পারলেন না। জড়িয়ে দিলেন জালে। সেই প্রার্থিত মুহূর্তের দেখা পেল বাংলাদেশ অবশেষে। কমলাপুর স্টেডিয়ামের হাজার দশেক দর্শক গগনবিদারী আওয়াজ তুলল। শেষ বাঁশির পর শিশুর মতো নাচলেন অধিনায়ক মারিয়া। ছুটলেন দিগ্বিদিক। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখলেন মেয়রা।