মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে এমওপি (পটাশ) সার নিয়ে রীতিমতো তুঘলকি কারবার শুরু হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি মতাদর্শী ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের আগে সরকারের ভাবমুর্তিক্ষুন্ন করতে সার নিয়ে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করেছে। এসব ব্যবসায়ীর বাড়ি ও গুদামে অভিযান পরিচালনা করা হলে তাদের কারসাজি ধরা পড়বে। নায্যমুল্য সার না পেয়ে কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে আসলে সারের সংকট না সিন্ডিকেট।কৃষকদের অভিযোগ একশ্রেণীর সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী সার সংকটের অজুহাত ৭৫০ টাকা বস্তার সার সাড়ে ১৪শ' টাকা থেকে ১৬শ' টাকায় বিক্রি করছে। এতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ কৃষক। কৃষকেরা এক বস্তা পটাশ সারের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা এক দোকান থেকে আরেক দোকান ধর্না দিয়েও সার পাচ্ছেন না। তবে বাড়তি দাম দিলেই সার পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আবার বাড়তি দামে সার দেয়া হলেও কোনো ক্রয় রশিদ দেয়া হচ্ছে না। ফলে এসব সার আসল-নকল না ভেজাল সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সংকট অর্থ নাই, তাহলে বাড়তি দাম দিলেই সার পাচ্ছেন কি ভাবে। আর এসব সার আসছে কোথা থেকে ? স্থানীয়রা জানান, অধিকাংশ সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী জামায়াত-বিএনপি মতাদর্শী। এরা নির্বাচনের আগে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করতে সার নিয়ে সিন্ডিকেট সৃষ্টি করেছে। কৃষি বিভাগ কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বেশী দামে সার বিক্রি বন্ধ করতে পারলেই সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। তারা বলেন, যদি বেশী দামেই সার কিনতে হয়, তাহলে বিআইসির ডিলারদের সেই নির্দেশনা দেয়া হোক, এতে কৃষকরা এক জায়গা থেকে সার কিনতে পারলে তাদের দুর্ভোগ কিছু লাঘব হবে। অসমর্থিত একাধিক সুত্র জানায়, তানোর পৌরসভার তালন্দ বাজারের মেসার্স লাবনী ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গণেশ, চৌধুরী ট্রেডার্সের মনিরুল ইসলাম, কামারগাঁ বাজারের মেসার্স শাহরিয়ার ট্রেডার্সের মালিক জাকির হোসেন জুয়েল, দরগাডাঙ্গা হাটের মুগ্ধ ট্রেডার্সের মোজাম্মেল হক, কালীগঞ্জহাটের মিজান ট্রেডার্সের মালিক মহব্বত আলী,আজিজপুর মোড়ের নজরুল ইসলাম, কৃষ্ণপুর হাটের আলম, মান্দা উপজেলার সাবাইহাট, দেলুয়াবাড়ী ও চৌবাড়িয়া, মোহনপুরের কেশরহাট ও ধুরইলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাপথে রশিদ বিহীন সার কিনে অবৈধভাবে মজুদ ও কৃষকের কাছে দ্বিগুন দামে বিক্রি করছেন। এদিকে এসব সার আসল নকল না নিম্নমাণের সেটা বোঝার ক্ষমতা নাই সিংহভাগ কৃষকের। আবার রশিদ বিহীন এসব সার কিনে কৃষকেরা প্রতারিত হলে পরে ব্যবসায়ীরা অস্বীকার করে, ক্রয় রশিদ না থাকায় কৃষকরা কোনো প্রতিকার পায় না। তালন্দ ইউপির কালনা গ্রামের মৃত রমজান আলীর পুত্র দুলাল বলেন, তিনি তালন্দ বাজারের গণেশের দোকান থেকে ১৪৫০ টাকা বস্তা টিএসপি সার কিনেছেন, কিন্ত্ত তাকে কোনো রশিদ দেয়া হয়নি। এদিকে বিষয়টি স্থানীয় কৃষি বিভাগকে জানানো হলেও তারা রহস্যজনক ভুমিকা পালন করছে। ফলে কোনো প্রতিকার না পেয়ে কৃষকেরা বাধ্য হয়ে দ্বিগুন দামে সর কিনছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স লাবনী ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী গণেশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সাবাইহাট থেকে মেমো ছাড়াই বেশী দামে সার কিনে আনছেন, কমদামে তো বিক্রি করতে পারেন না, আর এসব নিম্নমাণের নয় ভাল মাণের সার। তিনি বলেন, শুধু তিনি না সবাই বাড়তি দামে সার বিক্রি করছেন। এবিষয়ে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, সারের সংকট নাই বাড়তি দামে সার বিক্রির অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, তাদের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এবং বেশ কিছু ব্যবসায়ীর জরিমানা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত,গত ১৬ নভেম্বর বুধবার কালোবাজার থেকে চোরাই পথে সার এনে দ্বিগুন দামে বিক্রি করার অপরাধে তালন্দ বাজারের চৌধুরী এন্টার প্রাইজের ৭০ হাজার টাকা ও ৭০ বস্তা ডিএপি সার জব্দের পর নায্যমুল্য বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। এছাড়াও একই বাজারের লাবনী ট্রেডার্সকে ১০ হাজার ও টিপু নামের আরেক ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমান আদালতের বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট তানোর সহকারী কমিশনার (ভূমি) আদিবা সিফাত। তবে, চৌধুরী ও লাবনী ট্রেডার্সকে জরিমানা করে আসার পরপরই তারা পুনরায় কালো বাজার থেকে এমওপি সার নিয়ে এসে বেশী দামে বিক্রি করছেন বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.