প্রতিনিধি ১৯ নভেম্বর ২০২০ , ৫:২২:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
অাবেদ অাহমেদ-স্টাফ রিপোটার:
শ্রীমঙ্গলে কলেজ ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনা থেকে বাঁচতে গিয়ে বিয়ের নাটক করে সটকে পরেছে কিশোর নামের এক প্রতারক। সে উপজেলার উত্তরসুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামীর ছেলে। ভিকটিম মামলা করে পড়েছেন বিপাকে। তাকে প্রভাবশালী কিশোরের পরিবার ও একটি মহল থেকে মামলা তোলে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ভিকটিমসহ ভিকটিমের পরিকবারের লোক দের কে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়ানো হবে বলে প্রচার করে বেড়াচ্ছে কিশোরের পরিবার ও তার সহযোগীরা। তাকে এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিশোরের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে ধর্ষিতার পরিবারকে। জানা গেছে শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তরসুর গ্রামের প্রাণকৃষ্ণ গোস্বামীর ছেলে কিশোর গোস্বামীর পাতানো ফাঁদে একটি গানের অনুষ্ঠানে কিশোর গোস্বামীর সাথে ২০১৯ সালে ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রীর পরিচয় হয়। ওই সময়ে কিশোর গোস্বামী কলেজ ছাত্রীর মোবাইল নম্বর নিয়ে যায়।
তারপর হইতে মোবাইলে এবং রাস্তাঘাটে নিয়মিত তার সাথে আলাপ-আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে কলেজ ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রতারক ও ধর্ষক কিশোর গোস্বামী বিভিন্ন ধরনের কথা বলিয়া মন জয় করে ফেলে। এক পর্যায়ে কিশোরের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১০/২/২০১৯ ইং সকালে কিশোর গোস্বামী তাকে বেড়ানোর কথা বলে বিটিআরআই পুলের নিচে নিয়ে যায় ।
একপর্যায়ে কলেজ ছাত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে এবং ধর্ষনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে।এরপর কিশোর গোস্বামী ধর্ষনের দৃশ্য ইন্টারনেটে ছাড়িয়া দেওয়ার হুমকি দিয়া তাকে জিম্মি করিয়া বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে।
পরে কিশোর গোস্বামী ৯/০৫/২০১৯ ইং তারিখে ফুলছড়া চা বাগানের লাল টিলা কালিমন্দিরে নিয়া মন্দিরে থাকা পুরোহিতের মাধ্যমে তাকে সিন্দুর পড়াইয়া বিবাহ করে। এর পর কিশোর গোস্বামী প্রায়ই স্বামী-স্ত্রীর দোহাই দিয়ে তাকে ভোগ করিতে থাকে এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের আগে ও পরে ঔষধ সেবন করায়।
সরল বিশ্বাসে এক পর্যয়ে কলেজ ছাত্রীর অন্ত:স্বত্ত্বা হয়ে পড়লে কিশোর গোস্বামী প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শ্রীমঙ্গলের কলেজ রোডস্থ কেয়ার মেডিকেল সার্ভিসে ২৩/০৮/২০২০ ইং তারিখে নিয়া তাকে প্রকৃত নাম গোপন করিয়া মিস প্রিয়া নাম লেখাইয়া প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে। প্রেগন্যান্সি টেস্টে রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ায় কিশোর গোস্বামী জোরপূর্বক ঔষধ সেবন করাইয়া ২৫/০৮/২০২০ ইং তারিখে গর্ভের সন্তান নষ্ট করে। সু
চতুর কিশোর গোস্বামী জীবন যৌবন ধ্বংস্ব করিয়া সটকে পড়ার চেষ্টা করিলে কলেজ ছাত্রীর পিতাসহ স্থানীয় মুরুব্বিয়ান অসীম মজুমদার, গৌরাঙ্গ বণিক, পরিমল পাল গণদের মাধ্যমে কিশোর গোস্বামীর অভিভাবকগণকে নিয়া আপোষ মিমাংসার চেষ্টা করেন। গত ২৭/০৯/২০২০ তারিখে উভয় পক্ষের লোকজন অসীম মজুমদার বাসায় সালিশ বৈঠকে বসার কথা থাকলেও তাহারা সালিশে বসে নাই।
পরবর্তীতে ৪/১০/২০২০ তারিখে কিশোর গোস্বামী শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় এর অফিসে সালিশে বসেন। সালিশ চলা অবস্থায় উদনারপাড় গ্রামের আব্দুল কাদিরের পুত্র ফরিদ মেম্বার চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়কে মোবাইল করিলে চেয়ারম্যান উত্তেজিত মনোভাব প্রকাশ করিয়া পরদিন অর্থাৎ ৫/১০/২০২০ ইং কলেজ রোডস্থ কালী বাড়ীতে সালিশে বসবেন বলে জানান।
গত ৫/১০/২০২০ ইং তারিখ কালিবাড়ী মন্দিরে সালিশ বসে। উক্ত সালিশে ছেলের পক্ষে চেয়ারম্যান ভানুলাল রায়, ডা. হরিপদ রায়, অবিনাশ আচার্য্য, ভৈরববাজারের গৌরা বাবু, জহর তরপদারসহ আমরা ও পূজা কমিটির লোকজন এবং ধর্ষিতার পক্ষে তার বাবা ও অসীম মজুমদার, গৌরাঙ্গ বণিক, পরিমল পাল সহ ছেলের পক্ষের সালিশকারীরা সালিশে বসেন।
ধর্ষিতার পরিবারের কোন কথা না শুনে ছেলে উঁচু বর্ণের কারণে তাহাকে গুরুত্ব দিয়া ধর্ষিতার পরিবারকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য ক্রমে ৭২ ঘন্টার মধ্যে গর্ভ নষ্ট করার প্রমাণ দিতে বলা হয়। ধর্ষিতার পক্ষে গর্ভ নষ্ট করার প্রমাণ সহ সবকিছু দিতে পারবে বলে জানায়। এবিষয়ে দ্বিতীয় দফা ডাঃ হরিপদ রায় এর বাসায় সালিশে বসে। ওই সালিশে কলেজ ছাত্রীকে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। টাকা নেয়ার বিষয়টি ভিকটিমের পরিবার প্রত্যাখান করে।
সুষ্ট বিচার না পেয়ে গত ১৪/১০/২০২০ ইং তারিখে ভিকটিম তার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কিশোর গোস্বামীর বাড়ীতে যাইয়া গেইটের সামনে কলেজ ছাত্রী অনশন করে। অনশনরত অবস্থায় রাত ৯.৩০ ঘটিকার সময় চেয়ারম্যান ভানুলাল রায় শ্রীমঙ্গল থানার ওসি অপারেশন সোহেল রানা সহ আরো অনেকে যাইয়া কলেজ ছাত্রীকে ১৬/১০/২০২০ ইং তারিখ শুক্রবারের মধ্যে সমস্যা সমাধান করে।
দিবেন বলিয়া জানালে কলেজ ছাত্রী তাহাদের কথা বিশ্বাস করে অনশন ছেড়ে চলে আসে। শুক্রবার আসার পর কলেজ ছাত্রী জানতে পারে ছেলের বাবা অসুস্থ তাই সালিশ হবে না। ধর্ষিতার পিতা নিরুপায় হয়ে ট্রাক শ্রমিক পরিবহন সভাপতি নুরু মিয়া এবং সম্পাদক শাহজাহান সহ থানায় গিয়ে অফিসার ইনচার্জকে বিস্তারিত অবগত করেন।
তখন এ বিষয়ে একটি জি.ডি করা হয় এবং বিষয়টি মিমাংসা করিয়া দিবেন বলে জানান। কয়েকদিন অপেক্ষা করার পরও কোন কিছু সমাধান না হওয়ায় কলেজ ছাত্রী পুণরায় ৩০/১০/২০২০ ইং তারিখে নিজ অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কিশোর গোস্বামীর বাড়ী যায় এবং বারান্দায় অবস্থান করে। ঐদিন বাড়ীতে উপস্থিত ছিলেন ছেলের মাসি ও দিদা। উনারা কলেজ ছাত্রীর সাথে খারাপ আচরন করেন।
উক্ত বাড়ীতে অবস্থানকালে শ্রীমঙ্গল থানার এসআই আল-আমিন এবং এক মহিলা পুলিশ সহ কয়েকজন গিয়ে কলেজ ছাত্রীকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়েজোরে টানা-হেঁচড়া করে ওই বাড়ী হইতে বাহির করার চেষ্টা করেন। কলেজ ছাত্রী চিৎকারে আশে পাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। তখন এসআই আল-আামিন রাগান্বিত সুরে মিস বিহেভ করেন।
পরে গত ৩১/১০/২০২০ ইং তারিখে থানা কর্তৃপক্ষ আসামীগণকে গ্রেপ্তার করিবেন বলিয়া একটি কাগজে ভিকটিমের স্বাক্ষর নিয়ে তাহাদের মনগড়া কথা লিখিয়া থানায় মামলা রেকর্ড করেন। মামলা রেকর্ডের পরদিন ১/১১/২০২০ ইং তারিখে কলেজ ছাত্রীকে ডাক্তারী পরীক্ষার কথা বলিয়া মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। ধর্ষিতা জানান, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।