শিশুরা সবকিছু হতে চাইলেও কেউ সাংবাদিক হতে চায়না বড় হলে তুমি কি হবে? শিশুদের কাছে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চাওয়া হলে ডাক্তার, ম্যাজিষ্ট্রট, এসপি-ডিসি, মন্ত্রী-বাহাদুর সবকিছুই স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সাংবাদিক হতে ইচ্ছুক এমন উত্তর কেউই দেয়না।
কেননা; কোন ক্লাশের বইয়ে গণমাধ্যম, সাংবাদিক কিংবা সাংবাদিকতা বিষয়ক কোন শব্দই নাই। বইগুলোতে প্রয়োজনীয়-@অপ্রয়োজনীয় নানা প্যাচাল থাকলেও রাষ্ট্রের চতুর্থস্তম্ভ খ্যাত গণমাধ্যম নিয়ে কোন লেখার দেখা মেলেনা।
যার কারনে শিশুরা এই পেশার সাথে পুরোপুরি অপরিচিত। নিম্ম ক্লাশগুলোতে সাংবাদিকতা পেশা, পেশার সাথে জড়িতরা কেমন আছেন, পেশাটির প্রয়োজনীয়তা, রাষ্ট্রের সাথে গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতাসহ নানাবিধ অালোচনা থাকা উচিত।
ক্লাশের বইয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ের ওপর লেখাজোখা থাকলে তা পড়ে ছাত্ররা সাংবাদিকতা পেশায় পড়ার আগ্রহ পেত। ফলে দেশে শিক্ষিত সাংবাদিক তৈরী হতো। মাধ্যমিক -উচ্চ মাধ্যমিক পেরিয়ে সম্মান পর্যায়ে দেশের হাতেগোনা কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার ওপর কোর্স রয়েছে।
আশ্চ্যর্যের ব্যাপার যে, সকল পেশার উন্নয়নের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ একাডেমীও রয়েছে। কিন্তু একমাত্র সাংবাদিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র নাই। রয়েছে শিক্ষক প্রশিক্ষন একাডেমি, পুলিশ প্রশিক্ষন একাডেমি, ইমাম প্রশিক্ষন একাডেমি, আনসার প্রশিক্ষন একাডেমিসহ নানান পেশার মানুষের প্রশিক্ষন কেন্দ্র।
তবে কী অদৃশ্য কারনে এই পেশাটিকে নিয়ে দেশের কোন শিক্ষাবোর্ড দু'কলম বইয়ে স্থান দিতে পারলোনা। যা হতাশা ও ক্ষোভের বিষয়। তবে এই দাবিতে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফের পক্ষ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছিল( যা গুগলই প্রমান)।
রাষ্ট্র তার দায়বদ্ধতার অনীহার ফলশ্রুতিতে এই পেশাটিতে আজ কম শিক্ষিত, প্রশিক্ষনহীন সংবাদকর্মীতে দেশ ছেয়ে গেছে। বাড়ছে অসাংবাদিক, কুসাংবাদিক, অপ-সাংবাদিক, হলুদ সাংবাদিক, ভুয়া সাংবাদিক ও রাক্ষুসে সাংঘাতিক। স্বাধীনতার অর্ধ শতবছর পেরিয়ে গেলেও পেশাটি আজো মুক্তি পায়নি।
নানান অপশক্তির কাছে পেশাটি যুগযুগ ধরে অনেকাংশে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সাংবাদিকের রুটি-রুজির মুক্তির জন্য ১৪ দফার আন্দোলন চলছে-চলবে। সরকারের কাছে পত্রিকাগুলোর তথ্য থাকলেও সাংবাদিকের সংখ্যা গুনে পায়নি আজো। মনে হয় যেন সরকার সাংবাদিকের সংখ্যা গুনে বের করতে পারবেন না। তাই ২০১৮ সাল থেকে আজও প্রকৃত তথ্য দিতে পারেনি সরকারের প্রেস কাউন্সিল। ঐ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সারাদেশের সাংবাদিকের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল।
দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে বুড়ো ঘোড়ার ন্যায়চালিত প্রেস কাউন্সিল ১৫ দিনের কাজ গত ৩ বছরেও আলোর মূখ দেখাতে পারেনি আর-দেখবেওনা। সারাদেশের পেশাদার সাংবাদিকের তালিকা প্রণয়নের দাবিতে তিন/চারবার সকল জেলা-উপজেলা থেকে স্মারকলিপি পাঠিয়েছিল বিএমএসএফ (যা গুগলে)। এবং দাবিটি বাস্তবায়নে আন্দোলন চলমান।
সংগঠনটির অন্যতম দাবির মধ্যে জাতীয় গণমাধ্যম সপ্তাহের (১-৭মে) রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে বিগত চারবছর ধরে সারাদেশে একযোগে গণমাধ্যম সপ্তাহ পালন করে আসছে। সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা, সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন, পাঠ্য বইয়ে গণমাধ্যম বিষয়ক একটি অধ্যায় অন্তভূক্তকরণ, পত্রিকাগুলোকে পূবর্বের ন্যায় প্রয়োজনীয় কাঁচামাল (কাগজ) সরবরাহ করাসহ ১৪ দফা দাবি আদায়ে বিএমএসএফ কাজ করছে।
তাইতো সময়ের প্রয়োজনে সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও জার্নালিস্ট শেল্টার হোম গঠিত হয়েছে। পেশার মর্যাদা রক্ষায় সাংবাদিকরা ধীরেধীরে সংগঠিত হচ্ছেন।
এ সকল অসঙ্গতির কারনে পেশাটি আজ ঐতিহ্য হারিয়ে সমাজের মানুষের কাছে বোঝায় পরিনত হয়েছে। এই জায়গা থেকে সাংবাদিকদের বেরিয়ে আসতে হবে। পেশাটিকে সম্মানজনক পেশায় রুপ দিতে সাংবাদিকদের আরো কার্যকর সামাজিক দায়বদ্ধ হতে হবে। সর্বপরি রাষ্ট্রের পক্ষে একজন সাংবাদিককে দায়বদ্ধ হতে হবে।
তাই আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে সাংবাদিকতা পেশার হারানো ঐতিহ্য রক্ষায় বিএমএসএফ ঘোষিত ১৪ দফা আন্দোলনকে বেগবান করতে যে যার জায়গা থেকে কাজ করি।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফ ও সাংবাদিক নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি, বাংলাদেশ।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.