প্রতিনিধি ১০ নভেম্বর ২০২২ , ৩:৫১:৩০ প্রিন্ট সংস্করণ
আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:
সরকার নাস্তিকদের নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে দাবি না মানলে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন-গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, সরকার একদিকে থানায় থানায় দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করছে, অপরদিকে ধর্মীয় শিক্ষা পাবলিক পরীক্ষা থেকে বাদ দিয়ে জাতির সাথে ধোকাবাজি করছে। তিনি বলেন, ইসলামবিদ্বেষীদের নীল নকশা বাস্তবায়নে ধর্ম শিক্ষা বাদ দেয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে পীর সাহেব বলেন, আপনি মসজিদ বানাচ্ছেন, এই মসজিদে নামাজ কারা পড়বে, যদি ইসলামী শিক্ষার ব্যবস্থা না-ই থাকে। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ইসলামবিরোধী অবস্থান থেকে সরে না আসলে দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে; এতে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আয়োজিত পাবলিক পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা পূর্বের ন্যায় বহাল।
শিক্ষা সিলেবাস থেকে ঈমান-আকিদা বিধ্বংসী অবৈজ্ঞানিক ডারউইনের বিবর্তনবাদ বাতিল এবং শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিশাল গণমিছিল ও স্মারকলিপি পেশ পূর্ব জমায়েতে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ শেষে একটি বিশাল গণমিছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে রওয়ানা দিয়ে পল্টন মোড়, জিরোপয়েন্ট হয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের দিকে গেলে পুলিশ মিছিলের গতিরোধ করে। এসময় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিবের দফতরের কর্মকর্তা নাজমুল হক খানের হাতে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যগণ হলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম এবং কেএম আতিকুর রহমান। উল্লেখ্য যে, মিছিল সচিবালয় রোডে পৌঁছলেও গণমানুষের অংশগ্রহণের কারণে মিছিলের শেষ অংশ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে থেকে যায়। জমায়েতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান,
মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম ও ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, সহকারি মহাসচিব মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ ও মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেএম আতিকুর রহমান, অধ্যাপক সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাকী, বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম, শ্রমিকনেতা এইচ এম ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক নাসির উদ্দিন খান, মাওলানা মুহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম কবির, কেএম শরীয়াতুল্লাহ প্রমুখ। দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূমের পরিচালনায় গণমিছিল পূর্ব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, আমাদের সন্তানদেরকে নাস্তিক ও ধর্মহীন বানাতে দিতে পারি না। বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশ বাংলাদেশে আযানের সূরে মানুষের ঘুম ভাঙ্গে, আযানের আওয়াজে ছেলে-মেয়েরা ঘরে ফিরে যায়। এদেশে ইসলাম নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, দেশে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত চলছে। ডারইউনের বিবর্তনবাদ সম্পূর্ণ নাস্তিক্যবাদী মতবাদ। এ শিক্ষা কোনভাবেই মুসলমানের দেশে চলতে পারে না। মুসলমানদের তীব্র প্রতিবাদ সত্ত্বেও সরকার নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে এদেশের ধর্মপ্রাণ জনতা জীবন ও রক্ত দিয়ে তা প্রতিহত করবে। বিরানব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে ষড়যন্ত্র করলে, দেশবাসী তাদের আজীবনের জন্য প্রত্যাখান করবে।
দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু সরকার শিক্ষার মেরুদণ্ডকেই ভেঙ্গে দিচ্ছে। নাস্তিক্যবাদী ও হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতির মাধ্যমে সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তিনি সরকারকে এ ধরণের মনোভাব পরিহার করে ইসলামের পক্ষে ফিরে আসার আহ্বান জানান। স্মারকলিপিতে ১০ দফা দাবী জানানো হয়। দাবীসমূহ হলো: ১. শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দ্বীনদার আলেমদেরকে সম্পৃক্ত করা। ২. শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সকল পরীক্ষায় আবশ্যিক করা। ৩. ডারউইনের অপ্রমাণিত, ভ্রান্ত ও বিতর্কিত বিবর্তনবাদ শিক্ষার সকল স্তর থেকে বাদ দেয়া।
৪. পাঠ্যপুস্তকের সকল বিষয় হতে অনৈসলামিক ও ইসলামী বিশ্বাসবিরোধী বিষয় ও শব্দসমূহ বাদ দেয়া। ৫. ইসলাম ধর্ম শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ‘কুরআনুল কারীম’ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা। ৬. মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম, শিক্ষানীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার শিক্ষকদের দ্বারা পুনর্মাজন করা। ৭. নৈতিকতাসমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ৮. বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস বই হতে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদাবিরোধী প্রবন্ধসমূহ বাদ দেওয়া। ৯. স্কুল ও মাদরাসার সকল পাঠ্যপুস্তক অপ্রয়োজনীয় এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা। ১০. যেহেতু সাধারণ জনগণই এদেশের শিক্ষাব্যবস্থার ব্যয়ভারের সিংহভাগ বহন করেন, সেহেতু জোর করে চাপিয়ে দেয়া শিক্ষাব্যবস্থা নয় বরং দেশবাসীর ধর্মীয় চেতনার অনুকূল শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।