প্রতিনিধি ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ , ১২:৪৮:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ
কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:
কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ওয়াহেদ বাজার সড়কে মেয়ে শান্তা হত্যার বিচার ও নিজের জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে ব্যানার নিয়ে দাঁড়ান মা রানুয়ারা বেগম।চল্লিশোর্ধ্ব এক মা রানুয়ারা বেগম। হাতে প্রয়াত মেয়ের ছবিসংবলিত একটি ব্যানার। তাতে লেখা, ‘আমার মেয়ে শান্তা হত্যার বিচার চাই- শাস্তি চাই এবং আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই।’ একমাত্র মেয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে আজ বুধবার বিকেলে উপজেলার ওয়াহেদ বাজার সড়কে এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
এলাকাবাসীর ব্যানারে বহুল আলোচিত শান্তা হত্যাকান্ডের বিচারের দাবীতে আয়োজিত ওই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়। ওই সময় ওয়াহেদপুর- দেবীদ্বার সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ মিছিলও করে। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বেসরকারী সংস্থা নিজেরা করি কর্মসূচী সংগঠক সুপ্রিয়া মন্ডল, ভূমিহীন নেত্রী রোকেয়া বেগম, মো. লিল মিয়া, শান্তার ভগ্নিপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম ও চাচা নূরু মিয়া প্রমূখ।
রানুয়ারা বেগমের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ৪ নং সুবিল ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে। গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বধূ বেশে স্বামীর সংসারে গিয়েছিল শান্তা আক্তার। মাস তিনেক সুখে-শান্তিতেই তাদের সংসার চলছিল। কিন্তু হঠাৎ তাদের সংসারে নেমে আসে কালো মেঘ। এর একটাই কারণ যৌতুক, কিন্তু একাধিকবার দাবি অনুযায়ী যৌতুক দেয়ার পরও স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার উপর প্রায়ই অমানবিক নির্যাতন করতো।
দেবীদ্বারে মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে রাস্তায় অসহায় মা
যৌতুককে কেন্দ্র করে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকদের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকারও হতে হয় শান্তাকে। অবশেষে এসব অত্যাচার করেও ক্ষ্রান্ত না হয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মুখে বিষ ঢেলে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে শান্তার স্বামীর পরিবার। এমনটাই অভিযোগ শান্তার মায়ের।
এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতয়ালী থানা এবং দেবীদ্বার থানায় মামলা না নেয়ায় অবশেষে ঘটনার ৩ দিন পর গত সোমবার দুপুরে শান্তার মা রানুয়ারা বেগম(৪২) বাদী হয়ে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ১ নং ট্রাইবুনাল আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে শান্তা আক্তারের স্বামী-সাজ্জাদুর রহমান শাওন(৩০), শ্বশুর মো. শুভ মিয়া (৫৫), শ্বাশুরী- ইয়াসমিন বেগম(৫০), চাচা শ্বশুর- মো. জহির(৫২), ননদ সুমি আক্তার (২৬), কলি আক্তার(২৮), ননস- জলি আক্তার(৩২)সহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বাদী নিহত শান্তার মা রানুয়ারা বেগম বলেন আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে, তার মুখে বিষ ঢেলে খবর দেয় আমার মেয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত-বিক্ষত রয়েছে, বাম কানের একাংশ ছেড়া, মাথা থেতলানো ও রক্তাক্তসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত ও রক্তাক্ত ছিল। শান্তার স্বামী সাজাদ্দুর রহমান ব্যবসার নামে ৩ লক্ষ টাকা ধার নেয়,
তার পরও আরো টাকা যৌতুক এনে দিতে আমার মেয়েকে প্রায়ই চাঁপাচাপি করত। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্বামীসহ পরিবারের সবাই মিলে মারধর করত। তিনি আরও জানান হত্যার বিষয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি থানার ওসি। তবে আদালতে করা মামলাটি বর্তমানে কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ১ নং ট্রাইবুনাল আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুনের আদালতে বিচারাধীন আছে।
রানুয়ারা বেগমের অভিযোগ, এই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখন তাঁকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। আপস না করলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন আসামিপক্ষের লোকজন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান বলেন, ‘হুমকির ঘটনায় রানুয়ারা বেহম থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি করেছেন কি না আমার জানা নেই। যদি তিনি অভিযোগ দায়ের করে থাকেন, তাহলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হবে।’
স্থানীয় লোকজন ও প্রতিবেশীরা জানান, বিয়ের এক বছর পর থেকে শান্তা- সাজ্জাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ শুরু হয়। প্রায় সময়ই যৌতুক নিয়ে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত। এর আগে যৌতুকের বিষয় নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আদালতে স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও করেছিলেন শান্তা। সে মামলা এখনো চলমান আছে। তাদের ছয় বছর বয়সের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।