আলোকিত ইসলাম ডেস্ক:
রাসুল সঃ এর মেরাজ হয়েছিল এটা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এটা বরকতময় রাত ছিল।
কিন্তু উম্মতের জন্য উক্ত রাতকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান কিংবা কোন বিশেষ আমলের জন্য মনোনিত করার দলীল-প্রমাণ শরীয়তে নেই। কেননা সাহাবা-তাবেঈন থেকে মেরাজ উপলক্ষে কোনো কিছু পালন বা আমল করার কোন দলীল পাওয়া যায় না। এতে করণীয় কিছু থাকলে অবশ্যই তাঁরা করতেন।
এভাবে মেরাজ উপলক্ষে মসজিদে সমবেত হওয়া, অধিক বাতি জালানো, ওয়াজের আয়োজন করা, ‘মেরাজের নামায’ হিসেবে নামায পড়া ও পরের দিন রোযা রাখা- এ সবই শরীয়ত বহির্ভূত ও বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন আমীন।
শায়খ আবু উমামা ইবনে নাক্কাশ রাহ. (মৃ. ৭৬৩ হি.) বলেন,
‘শবে মেরাজের আমল উত্তম হওয়া সম্পর্কে কোন সহীহ বা দুর্বল হাদীসও বর্ণিত হয়নি। এ কারণেই রাসূল সাহাবায়ে কেরামকে উক্ত রাত নির্ধারিত করে দেননি এবং কোন সাহাবীও তা নির্দিষ্ট করেন নি। এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে বিশুদ্ধ সূত্রে কিছুই বর্ণিত হয় নি এবং কেয়ামত পর্যন্তও হবে না।
আর যে এ সম্পর্কে কিছু বলেছে, সে নিজ থেকেই বলেছে, যা তার কাছে প্রাধান্য পেয়েছে। এ কারণেই এত মতভেদ হয়েছে, যার কোন সুরাহা নেই। অতঃপর বলেন, শবে মেরাজে যদি উম্মতের জন্য সমান্যও করণীয় থাকত, অবশ্যই রাসূল তা সাহাবায়ে কেরামকে বলতেন।’ (আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ, কাসতাল্লানী, ৩/১৪)
ইমাম তকীউদ্দীন সুবকী রাহ. (মৃ. ৭৫৬ হি.) বলেছেন, ২৭ই রজব মেরাজ উপলক্ষে অনুষ্ঠান করা বিদআত। (আস-সায়ফুল মাসলূল পৃ. ৪৯২)
ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন, মেরাজ মনে করে কোন রাত নির্ধারণ করে ইবাদত বা অন্য কিছু করা মুসলমানদের জন্য জায়েয নেই। (যাদুল মা’আদ, ১/৫৮)
মুহাদ্দিস আজলূনী রাহ. (মৃ. ১১৬২ হি.) লিখেন,
وكذا صلاة عاشوراء وصلاة الرغائب موضوع بالاتفاق، وكذا صلاة ليالي رجب وليلة السابع والعشرين من رجب.
আশুরার নামায, সালাতুর রাগায়িব ও রজবের রাতসমূহে এবং রজবের ২৭ তারিখের রাতের নামায সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো সর্বসম্মতিক্রমে জাল ও বানোয়াট। (কাশফুল খাফা ২/৪১০)
অনুরূপ ‘যে ব্যক্তি রজবের ২৭ তারিখে রোযা রাখবে, আল্লাহ তার আমল নামায় ৬০ মাস রোযা রখার সাওয়াব লিখে দিবেন।’ বর্ণনাটিও অগ্রহণযোগ্য। (দেখুন, আদ-দ্বীনুল খালিস, মাহমুদ সুবকী মালেকী ৮/৪৩০; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৫/২১৪)
ইবনে রজব হাম্বলী রাহ. লিখেন,
وأما الصيام: فلم يصح في فضل صوم رجب بخصوصه شيء عن النبي صلى الله عليه وسلم ولا عن أصحابه.
‘রজব মাসের সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখে রোযার ফযীলত সম্বলিত বিশুদ্ধ কোন হাদীস রাসূল ও সাহাবা থেকে বর্ণিত হয় নি।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ পৃ. ২২৮)
প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. (মৃত্যু ৮৫২ হি.) ‘তাবয়ীনুল আজব’ রিসালায় লিখেন,
لم يرد في فضل شهر رجب، ولا في صيامه، ولا في صيام شيء منه معين، ولا في قيام ليلة مخصوصة فيه حديث صحيح يصلح للحجة.
‘রজব মাসের ফযীলত ও রোযা অথবা এ মাসের সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখে রোযা কিংবা বিশেষ কোনো রাত্রি উদযাপন সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোন হাদীস বর্ণিত হয় নি।’ (তাবয়ীনুল আজব বিমা ওরাদা ফী ফাযলি রজব, পৃ. ১১)
সুতরাং নির্ভরযোগ্য হাদীসে রজব মাস অথবা এর কোনো দিন বা রাতের কোনো ফযীলত নেই। কাজেই ‘বার মাসের ফযীলত’ বা এ জাতীয় বই-পুস্তকে এ মাস সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
তবে কেউ কেউ صُمْ مِنَ الْحُرُمِ وَاتْرُكْ (আবু দাউদ ২৪২৮; ইবনে মাজা ১৭৪১) হাদীসটি থেকে উদ্ভাবন করে বলেছেন, এ মাসে অনির্দিষ্টভাবে কিছু দিন রোযা রাখা মুস্তাহাব। (দ্র. ফাযায়েলে আওকাত, বায়হাকী পৃ. ৮৯ ও তাবয়ীনুল আজব, পৃ. ১২-১৪)
এছাড়া কিছু সাহাবা ও সালাফের মতে এ মাসে ওমরা পালন করা মুস্তাহাব। (লাতায়িফুল মাআরিফ, পৃ. ২৩২)
আর কুরআনে কারীমে যে চারটি মাসকে আল্লাহ পাক বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন, তন্মধ্যে রজব মাস অন্যতম। (সূরা তাওবা ৩৬) আয়াতটির ব্যাখ্যায় অনেক মুফাসসির বলেছেন, জুলুম ও গুনাহের কাজ সবসময় অপরাধ হলেও উক্ত চার মাস তথা রজব, জিলকাদ, জিলহজ ও মুহাররম এ তা আরো মস্তবড়। তদ্রূপ এ চার মাসে নেক-আমলের প্রতিদানও অনেক বেশি। (দেখুন আয়াতটির ব্যাখ্যায়, তাফসীরে কাবীর, কুরতুবী, ইবনে কাসীর, রুহুল মা’আনী এবং মোল্লা আলী কারী রাহ. রচিত আল-আদব ফী রজব, পৃ. ২৫)
সারকথা, রজব মাস কুরআনে বর্ণিত চার সম্মানিত মাসের একটি, সুতরাং এর পুরোটাই বরকতময়। তাই এ মাসের সবকটি দিন ও রাতেই ইবাদত-বন্দেগীর ব্যাপারে যত্নবান হওয়া চাই। এবং বর্ণিত নিচের দোয়াটি পড়া যায়
اللهم بارك لنا في رجب وشعبان، وبلغنا رمضان.
আর কোন নির্দিষ্ট রাতে বা দিনে বিশেষ আমল বা নামায-রোযা এবং রসম-রেওয়াজ পরিত্যাগ করা অপরিহার্য।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.