প্রতিনিধি ১৮ নভেম্বর ২০২২ , ১:১৩:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
এস এম শামীম হাসান-মহাদেবপুর প্রতিনিধিঃ
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন লাইসেন্স ছাড়া কেউ ধান-চালের ব্যবসা করতে পারবেন না। লাইসেন্স নেই এমন অনেক ব্যক্তি ধান-চাল কিনে মজুত করলে বাজারে ধান-চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়ে থাকে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ যদি অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদ করে সেসব ব্যাবসায়ীদেরকে মজুদদার হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হবে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে আমন ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় মন্ত্রী নওগাঁ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোণা ও দিনাজপুর জেলার সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নওগাঁয় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ও সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান। এ সময় নওগাঁর পুলিশ সুপার রাশিদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারীসহ সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও সাংবািদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গত বোরো মৌসুম থেকে ধান-চাল ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিলের নিয়ম চালু করা হয়েছে। যারা ধানের ব্যবসা করছেন, প্রতি সপ্তাহে কতটুকু ধান কিনছেন, কতটুকু ধান কোন মিলে বিক্রি করছেন, সেই হিসাব তাদের সরকারকে দিতে হবে। চালকল মালিকদেরও এই নিয়ম মেনে চলতে বলা হয়েছে। যারা এই হিসাব দেবেন না, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি সপ্তাহের রিটার্ন দাখিলের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। যে মিলাররা করপোরেট গ্রুপের কোনো ব্রান্ডের নামে চাল বাজারজাত করার চেষ্টা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবছর আমন মৌসুমে নওগাঁ জেলার ১১ উপজেলায় ২৮ টাকা কেজি দরে ১১ হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টন ধান এবং ৪২ টাকা কেজি দরে ২২ হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধান এবং ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত চাল কেনা হবে।
নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর, নিয়ামতপুর, রানীনগর ও পোরশাসহ পাঁচটি উপজেলায় কৃষকের অ্যাপের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হবে। অন্য উপজেলাগুলোতে সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির নির্বাচিত কৃষকদের তালিকা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করা হবে। নওগাঁ সদর, মহাদেবপুর ও নিয়ামতপুর উপজেলায় ‘ডিজিটাল চাল সংগ্রহ ব্যবস্থাপনা’ এর মাধ্যমে মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নওগাঁয় চলতি বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন ও সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান। এ সময় নওগাঁর পুলিশ সুপার রাশিদুল হক, রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারীসহ সরকারি কর্মকর্তা, কৃষক, চালকল মালিক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য মন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে ধান বিক্রির সময় কোনো কৃষক বা মিলার যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হন এবং মধ্যস্বত্বভোগীরা যাতে গুদামে ধান দিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধান-চাল সংগ্রহের সময় অপচয় না করে ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সঙ্কট হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য আমদানি করা হচ্ছে। তবে কৃষকদেরও এই পরিস্থিতিতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে। নিজেদের যে সব জমি আছে তার সবটুকুতে ফসল আবাদ করলে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে খাদ্য আমদানি করতে হবে না।
কৃষকদের সরকারি গুদামে ধান বিক্রির আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহিত করতে সার ও বিদ্যুতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কৃষকদের দায়িত্ব তাদের উৎপাদিত ধানের কিছুটা সরকারি গুদামে দেওয়া। ২০১৮-১০১৯ সালে ধানের দাম বাজারে অতিরিক্ত পরিমাণে কমে যায়। তখন কৃষকেরা হা-হুতাশ করতে শুরু করেন। সেই পরিস্থিতিতে সরকার কৃষকদের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে মৌসুমের শুরুতেই ধান-চাল ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।