• আমার দেশ

    রান্নায় ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারে চলছে অটোরিকশা

      প্রতিনিধি ২১ ডিসেম্বর ২০২১ , ৭:৫৫:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    নিউজ ডেস্ক:

    যাত্রী আসনের পেছনে বাঁধা এ গ্যাস সিলিন্ডারেই চলে অটোরিকশা—ইত্তেফাকযাত্রী আসনের পেছনে বাঁধা এ গ্যাস সিলিন্ডারেই চলে অটোরিকশা—ইত্তেফাক
    মানিকগঞ্জের ঘিওরে সিএনজি অটোরিকশায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে রান্নার কাজে ব্যবহূত এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার। তিতাস গ্যাস এবং দাহ্য আইনে রান্না করার গ্যাস গাড়িতে ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না । ফলে যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

    সরেজমিন দেখা গেছে, ঘিওর থেকে জিয়নপুর ভায়া খলসী সড়কে কমপক্ষে ৪০টি সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। প্রতিটি গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির এলপি গ্যাস সিলিন্ডার। বিশেষজ্ঞরা জানান, খানাখন্দে ভরা ভাঙাচোরা রাস্তায় ঝাঁকুনিতে যে কোনো সময় গ্যাস সিলিন্ডারের সংযোগ বিছিন্ন হতে পারে। ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। জানা গেছে, ঘিওর থেকে জিয়নপুর সংযোগ সড়কের কুস্তা, নারচী নামক এলাকার রাস্তা চার বছর আগে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ফলে রাস্তাটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একপাশে আটকা পড়ে প্রায় অর্ধশত সিএনজিচালিত গাড়ি। সিএনজি অটোরিকশার চালকরা বলেন, বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে এসব গাড়িতে। তাই বাধ্য হয়েই তারা তাদের গাড়িতে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন সিলিন্ডারের গ্যাস। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্হা সচল রাখতেই নয়, জীবিকার প্রয়োজনে অথবা কারো ঋণ করে কেনা গাড়ির কিস্তি পরিশোধ করতেই তারা সচল রাখছেন তাদের গাড়ির চাকা।

    ঘিওর বাসস্ট্যান্ড থেকে কুস্তা ভাঙায় যাত্রীদের নেমে হেঁটে আবার ওপারে গিয়ে অন্য গাড়িতে ওঠতে হয়। প্রতিদিন খলসী, জিয়নপুর, নারচী, ছোট রঘুনাথপুর, পাড় পারমাস্ত্তল, বিষ্ণুপুরসহ প্রায় ২০টি গ্রামের লোকজন যাতায়াত করে। এছাড়া স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের অধিক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে যোগাযোগের বাধার কারণে। মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, ত্রুটিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্হার কারণে জিয়নপুর থেকে তাদের কলেজে পৌঁছাতে প্রায় তিন ঘণ্টা আগেই বাড়ি থেকে বের হতে হয়। খলসী গ্রামের এক যাত্রী জানান, প্রতিদিন তাকে সকালে-বিকালে ব্যবসার কাজে ঘিওর সদরে যাতায়াত করতে হয়। বিকল্প উপায় না থাকায় ঝুঁকি জেনেও এসব সিএনজি অটোরিকশায় চড়তে হয়। ভাঙনের ওপারের প্রায় ২০টি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা, জেলা এমনকি রাজধানীতে যেতে এই সিএনজি অটোরিকশার ওপরই ভরসা রাখতে হয়।

    সিএনজি গাড়িচালক কয়েকজন বলেন, কুস্তা ভাঙার ওপারে (পশ্চিম পাড়ে) প্রায় ৩৫/৪০টি সিএনজি গাড়ি আটকে রয়েছে। বিকল্প রাস্তা না থাকায় গাড়ি পারাপার করার কোনো সুযোগ নেই। আর তাই বাধ্য হয়ে বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে গাড়ি চালাচ্ছে তারা। সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, সম্প্রতি কুস্তা এলাকার রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ওপারে আটকে থাকা গাড়িগুলোতে বিকল্প পদ্ধতিতে রান্নাঘরের সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এ অবস্হা থেকে পরিত্রাণ পেতে গাড়ির চালক, মালিক ও এলাকার যাত্রীসাধারণ জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

    ঘিওর থানার ওসি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, ‘গাড়িতে এলপি গ্যাস ব্যবহার নিষিদ্ধ। সম্প্রতি কয়েকটি গাড়ি ও চালককে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। পরে জনপ্রতিনিধি এবং স্হানীয় মুরুব্বীদের অনুরোধে, তারা আর তাদের গাড়িতে রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করবে না এমন মুচলেকায় দেয়। খোঁজ নিয়ে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহণ করব।’ তিতাস গ্যাস মানিকগঞ্জ জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিউল আওয়াল বলেন, গাড়িতে রান্না করার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এলপি গ্যাস বাতাসের চেয়ে ভারী তরল দাহ্য পদার্থ। সিলিন্ডারে ত্রুটি কিংবা ব্যবহার, অসতর্কতায় ও পরিবহনের আগুনের আসা মাত্রই তা ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ইতিপূর্বে আমাদের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের সিএনজি অটোরিকশা গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে রান্নাঘরের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারে নিষেধ করা হয়েছে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ