প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২১ , ৭:৪১:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ
প্রায় ১০ বছর ধরে ধানের পাশাপাশি আম চাষের ফলে পাল্টে গেছে এই নওগাঁর চিত্র। যদিও পায়ে জেলা কৃষি নির্ভরশীল তাছাড়াও চাল উৎপাদনের সর্বোত্তম এ জেলা।নওগাঁ কৃষি অধিদফতরের সূত্র,জেলা পরিষদ সূত্রে জানায় চলতি মৌসুমে আমের সম্ভাব্য আবাদ হবে ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় আম্রপালি ৭৬ শতাংশ, বারি-৪ আম ৬ শতাংশ, আশ্বিনা ৭ শতাংশ, ফজলি ৩ শতাংশ, ল্যাংড়া ৩ শতাংশ, ক্ষিরসাপাত ২ শতাংশ, গৌড়মতি ১ শতাংশ, কাটিমন ১ শতাংশ, অন্যান্য জাতের ১ শতাংশ জমিতে আমের বাগান গড়ে উঠেছে।
এর মধ্য আম সংগ্রহের তারিখ ও জানিয়েছে -আম সংগ্রহ শুরু হবে ২০ মে হতে- (১) গুটি আম-২০ (২)গোপালভোগ রানিপছন্দ-২৭ মে (৩) ক্ষীরশাপাতি, হিমসাগর-২ জুন (৪) নাক-ফজলি-৪ জুন (৫) ল্যাংড়া-১০ জুন (৬) ফজলি-২০ জুন (৭) আম রুপালি-২২ জুন (৮) আশ্নীনা, বারি-4, ঝিনুক -৮ জুলাই।
আমচাষিদের দাবি, নওগাঁ জেলা সবার কাছে পরিচিত হওয়ার কারণ একমাত্র পোরশা, সাপাহারের ধান আর আম। তারা বলেন, আগে চারদিকে শুধু ধানক্ষেত দেখা যেত। ২০০৯ সালের পর থেকে আস্তে আস্তে ধান চাষের পাশাপাশি সব আমবাগান হয়ে যাচ্ছে। আমরা নিজেরা আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম খুঁজতাম। এখন নওগাঁর আম কিনতে দেশ-বিদেশের মানুষ আসে আমাদের এলাকায়। ধানের চেয়ে বেশি লাভ আম চাষে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক মণ ধানের দাম ওঠে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে এক মণ আম হাজারের নিচে নেই। কমবেশি সব জায়গায় এখন আমের বাগান গড়ে উঠেছে। সারাদেশের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এসে আমবাগান কিনে নিচ্ছেন আর ফলনও হচ্ছে ব্যাপক। গত মৌসুমে আমের মণ চার হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছে। তাই সবাই এখন আমের দিকেই ঝুঁকছে।
এবং একসময় যাদের কোনো কাজ ছিল না, তারা এখন কেউ বাগান পাহারা দিচ্ছেন, কেউ বাগানের পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ ভ্যান-ট্রলি চালিয়ে আম পরিবহনের কাজ করবেন। কেউ আড়ত খুলে বসবেন, কেউ প্যাকেটিংয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করবেন। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোতে তখন উপচে পড়া ভিড় থাকবে। প্রতিদিন হাজার হাজার কেজি আম কুরিয়ারে করে যাবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ ছাড়া আম বাজারজাত করতে ধানের খড়, চটের বস্তা ও ঝুড়ির কদর বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁয় প্রায় ছোট-বড় ২৫০টি আমের আড়ত রয়েছে। গত বছর এই আড়তগুলোর অধীনে কাজ করছেন প্রায় ১০ হাজার মৌসুমি শ্রমিক। একজন শ্রমিক প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করেন।চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, নওগাঁ একটি খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা। বর্তমানে নওগাঁয় আম চাষ হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এ অঞ্চলে বাগান তৈরি করছেন জমি ইজারা নিয়ে। এ জেলায় আম্রপলি বা বারি-৩ জাতের আমের ফলন বেশি হচ্ছে।
যে হারে নওগাঁয় আম চাষের আবাদ বাড়ছে, উৎপাদনের ধারা বৃদ্ধি রাখলে দেশের অর্থনীতিতে আম বিশেষ অবদান রাখবে উল্লেখ করে বলেন, নওগাঁ জেলায় অন্তত ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নওগাঁয় দেশের সবচেয়ে বড় আমের বাজার গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
জেলার সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয় সাপাহারে ১ লাখ ১৯ হাজার ১৬০ টন, পোরশায় ১ লাখ ১৫ হাজার ১৯৯ টন, পত্নীতলায় ১ লাখ ১১ হাজার টন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সম্ভাব্য ২৫০০ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে জানা যায়। তাছাড়া ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কমবেশি আম চাষ হয়
আম রফতানিকারক ‘ফ্রুটস নওগাঁ’ স্বত্বাধিকারী বলেন, গত পাঁচ বছর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে জেলার ব্র্যান্ড আম্রপালি আম পাঠিয়েছি। তবে সাপাহারে যোগাযোগব্যবস্থা ও আম প্যাকিং ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হলে এ জেলা আম কৃষি পণ্য রফতানির জন্য শীর্ষ অবস্থানে থাকবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সামছুল ওদাদুদ সাংবাদিক দের বলেন, জেলার সব জায়গায় আম চাষ বাড়ছে। যদিও পোরশা ও সাপাহার,পত্নীতলা উপজেলায় বেশি আমবাগান দেখা যাচ্ছে। নওগাঁ বরেন্দ্র অঞ্চলভুক্ত এলাকা।
এ এলাকায় পানির পরিমাণ কম আবার সেচ-সুবিধাও নেই। তাই মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণেই প্রচুর ফলন হয় আমের।তিনি বলেন, এখন ফলনের পরিমাণ চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়েও বেশি হয়। নওগাঁয় নতুন নতুন বাগান হচ্ছে এবং ফলন বাড়ছে। গত বছর জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন।