প্রতিনিধি ২০ জুন ২০২২ , ৫:০৪:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ
আহমাদুল্লাহ হাবিবী-স্টাফ রিপোর্টারঃ
তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাস থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বসবাসরত মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে প্রায় ৫০ বছর আগে তারাপুর ইউনিয়নের ঘগোয়া থেকে বেলকা-কাপাসিয়া হয়ে সদর উপজেলার কামারজানি পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরপর ২০১৪ সালে এই বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচলের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি সড়ক নির্মাণ করে। সড়ক নির্মাণের দুই বছরের মাথায় বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দে ভরে যায় বাঁধের রাস্তাটি।
সংস্কারের অভাবে সেই বাঁধ ও সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় বড় বড় ভাঙন। দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় এবারের বর্ষায় ভাঙা বাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন উপজেলার ৮ ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ। উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের পশ্চিম বেলকা গ্রামের আনোয়ার হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, গতবার বানত বান্দের আস্তাটা ছিড়ি যাবার ধচ্ছিল, এলাকার সগলে মিলি আইত দিন বস্তা ফেলে-টেলে বান্দটা ছিড়বের দেইনেই। এইবের কয়দিন থাকি দিন আইত একাকার করি যে ঝড়ি পড়বের নাকছে, তাতে বান্দের আস্তাটা আর মনে টিকপের নয়৷ আস্তাটা ছিড়ি গেইলে হামরা বানের পানিত ভাসি যামো বাবারে।
হামার এই বান্দের আস্তাটা কোন চেয়ারম্যান-এমপি চোখে দেকেনা। এমরা খালি ভোটের সম আইসে, আর ভোট চায়। আর কয় এটা করমো, ওটা করমো৷ এইদ্যান করি কয়া হামার মন গলেয়া খালি ভোট নিয়ে যায়। পরে ওমারগুলেক হারিকেন দিয়েও আর খুঁজি পাইনে। মোস্তা মিয়া নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, তোমরা সাংবাদিকরা কয়দিন পর পর আইসেন আর ছবি তুলি নিয়ে যান। হামার এই বান্দের আস্তার তো কোন কাম হয়না। এই আস্তাটার কোন বাপ-মাও নাই। বাপ-মাও থাকলে ঠিকে এইটের কাম অনেক আগে হইলো হয়। এই আস্তাটার জন্যে হামার বেটি-ভাস্তিক কেউ বিয়ে করবের চায়না। হামরা খুবে কষ্টত আছি। তোমরাগুলে এইবার একনা ভালো করি ন্যাকোতো হামার বান্দের আস্তাটা নিয়ে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিনেও বাঁধটি সংস্কার না করায় বাঁধটি ভেঙে গিয়ে ৩০-৩৫ মিটার পরপর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বাঁধটিতে ঝুঁকিপূর্ণ প্রায় শতাধিক গর্ত রয়েছে। অপরদিকে বাঁধটি সংকুচিত হওয়ায় যান চলাচলও বন্ধ রয়েছে। উৎপাদিত ফসল মালামাল নিয়ে অতিরিক্ত ২০ কিলোমিটার পথ ঘুরে সুন্দরগঞ্জ সদরে যাতায়াত করতে হচ্ছে ওই ৮টি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের। এছাড়াও প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। এতে অনেকের জীবন হয়েছে দূর্বিসহ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ মেরামত না করায় এলজিইডি সড়ক সংস্কার কাজ করতে পারছে না। ফলে ওই বাঁধের ওপর দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে লাখো মানুষের দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বাঁধ দিয়া চলা যায় না। দুই দিকে ভেঙে চিকন হয়ে গেছে। বাঁধ মেরামতের কোনো খবর নাই। বাঁধ ঠিক না করলে এবার পানিত ডুবে থাকতে হবে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘বাঁধটি মেরামত না করায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। বাঁধ ও সড়ক মেরামতের জন্য একাধিকবার বলার পর ইউএনও স্যার পরিদর্শন করেছেন। কিন্তু উপজেলা প্রকৌশলী এখন পর্যন্ত বাঁধটি পরিদর্শন করতে আসেননি। প্রকৌশলীর অবহেলার কারণেই বাঁধটি মেরামত হচ্ছে না। চলতি বর্ষায় বাঁধটি ভেঙে গেলে ৮টি ইউনিয়ন পানির নিচে প্লাবিত হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘বাঁধটি পরিদর্শন করে ৫০টি গর্ত চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান মিয়া বলেন, ‘বাঁধটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করে গেছে। আশাকরি, খুব দ্রুত একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।