।
আঃ কাদের কারিমী-বরিশাল জেলা প্রতিনিধি:
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়্যদ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই বলেন, শিক্ষা আলো। শিক্ষা থেকে যদি বঞ্চিত রাখা যায় তবে জাতিকে ধ্বংস করা যায়। মাদরাসার বইতে সালামের পরিবর্তে প্রণাম দেয়ার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।মাদরাসার পুস্তকে ছেলে মেয়েদের অবাধ চলা ফেরা দেখানো হয়েছে। মা বাবার দ্বীনি পরিবেশ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে কৃষি শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। গার্হস্থ্য শিক্ষা বাদ দেয়া হয়েছে। এখন শিল্প সংস্কৃতির মধ্যে ঢোল তবলা দেয়া হয়েছে। এটা শিল্পকলার কাজ, জাতীয় কারিকুলামে এটা হতে পারে না। মুসলিম সন্তানদেরকে একত্রে নাচতে গাইতে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। ছেলে মেয়েদেরকে বন্ধুদের হাত ধরে চলতে শিক্ষা দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশকে বেরিকেড করা হয়েছে।
ট্রান্সজেন্ডার এর নামে জাতিকে বলৎকার ও সমকামী করা হচ্ছে। আবুল ফজল ফয়েজীর গোষ্ঠী কিছু আলেম শরীফ শরীফার গল্পকে বৈধতা দিয়েছে। লোভের কারনে শরীফ শরীফার গল্পের মধ্যে ঐ আলেমরা কোন ত্রুটি দেখেনা। আমাদের দাবী ছিলো প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার। সে দাবী কর্নপাত না করে ৫ হাজারের অধিক নাচ গান শেখানোর টিচার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আমরা ইসলামের কথা বললে সাম্প্রদায়িক হয়ে যাই। মুসলমানদের জন্য করা সলিমুল্লাহর ইউনিভার্সিটিতে নামাজ, ইফতার করতে আপত্তি থাকলেও মঙ্গলশোভা যাত্রা করতে কোন আপত্তি নেই। দূরদর্শী প্লান নিয়ে আগ্রাসনের কালোথাবা এগিয়ে আসছে। যারা শরীফ শরীফার মধ্যে কোন কিছু দেখেনা তারা আবুল ফজল ফয়েজীর গোষ্ঠী। ওরা ইসলাম ও দেশের দুশমন। এই সরকার তাদেরকে অর্থদিয়ে লালন-পালন করছে।
জাতীয় শিক্ষক ফেরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক মো: নাছির উদ্দিন খান এর সভাপতিত্বে ১০ মে, বিকেলে, রাজধানীর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে "নতুন পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন: আমাদের করণীয়" শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন। এতে বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, মগজ বিকৃত কিছু বুদ্ধিজীবী শিক্ষা থেকে ইসলামকে দূরে রাখতে অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সংকীর্ণতা দূর করে লোভকে পরিহার করে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তবে ভবিষ্যতে প্রজন্ম ঈমান ইসলাম নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, বাংলাদেশে আগ্রাসন বহুমুখী। এই আগ্রাসন থেকে মুক্ত হতে না পারলে আমাদের কপালে দুর্ভোগ আছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডক্টর আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, ইসলাম কাউকে গোলাম তৈরী করে না, ইসলাম মানুষকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে উতসাহ দেয়। মানুষ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য পাশ্ববর্তী রাস্ট্র বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। আমাদের একটি নতুন শিক্ষা কমিশন গঠনের ঘোষণা সময়ের দাবী। স্বাধীনতা রক্ষা করতে চাইলে রক্ত দিয়ে এ সরকার কে উৎখাত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস বলেন, বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে হাবুডুবু খেয়ে বেড়ে উঠেছে তারাই এই কারিকুলাম তৈরী করেছে। বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আলিয়া মাদরাসা। আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা সংরক্ষণে দলমত নির্বিশেষে উদ্যোগ নেয়া দরকার। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম বলেন, ৬ষ্ট শ্রেণীর শিক্ষার্থীদেরকে গুপ্তাঙ্গ শিখিয়ে বর্তমান শিক্ষা ব্যাবস্থাকে কলুষিত করা হচ্ছে। দেশের মানুষের অর্থে পরিচালিত শিক্ষা ব্যাবস্থাকে কলুষিত করতে দেয়া হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আরিফুল ইসলাম বলেন, সরকার আগামী প্রজন্মকে দুর্গন্ধের মধ্যে রাখতে চায়। এদেশের মানুষ এই বিতর্কিত শিক্ষা ব্যাবস্থা চায় না।
প্রিন্সিপ্যাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, সরকার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে ভারতের প্রেসক্রিপশন শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করছে। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোঃ নাছির উদ্দীন খান বলেন, আমরা মনে করি সকলের মেধা ও প্রতিভা কখনই এক হবে না। কিন্তু সরকার, অভিভাবক এবং ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য ও প্রতিভার বিভিন্নতা বিবেচনা না করে বাধ্যতামূলকভাবে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একমুখী মডেলে তৈরি করতে চান। শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ এ সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো প্রায় প্রতিটি বিষয়ই সবচেয়ে কম মেধাবী ছাত্রের কথা বিবেচনা করে পাঠাপুস্তক প্রণীত হয়েছে যা বিজ্ঞান বইগুলোতে চোখ রাখলেই এর বাস্তবতা লক্ষ্য করা যাবে। এতে করে আমাদের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মেধার বিকাশ করতে পারবে না। ফলে বহির্বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। জাতি হিসেবে আমরা আরো পিছিয়ে পড়বো।
দেশের স্বার্থে এবং আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্যের মেধা বিকাশের লক্ষ্যে; আমরা জাতীয় শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে নিন্মোক্ত দাবি উপস্থাপন করা হয়-
০১.বিতর্কিত শিক্ষা কারিকুলাম-২০২১ বাতিল করা এবং যুগোপযোগী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দেশপ্রেমিক এবং দ্বীনদার শিক্ষাবিদদের সম্পৃক্ত করা।
০২.পাঠ্যপুস্তকের সকল বিষয় হতে বিতর্কিত ও ইসলামী আক্বীদা বিরোধী প্রবন্ধসমূহ বাদ দেয়া। স্কুল ও মাদরাসার সকল পাঠ্যপুস্তকে বিজাতীয় সংস্কৃতি, অনৈসলামিক শব্দ এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা
০৩.মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম শিক্ষানীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার, ইসলামিক স্কলার শিক্ষকদের দ্বারা পরিমার্জন করা ও আলিয়া মাদরাসার স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বতন্ত্র কারিকুলাম প্রণয়ন করা।
০৪.শিক্ষকদের স্বতন্ত্র উচ্চতর বেতন কাঠামো এবং শিক্ষক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে হবে।
০৫.প্রকৃতি বিরুদ্ধ ও দেশীয় সংস্কৃতি বিরোধী ট্রান্সজেন্ডার মওবাদ পাঠ্যপুস্তক থেকে বাতিল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেনো ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিল করা। সমাজে অবহেলিত হিজড়া জনগোষ্ঠীর সুশিক্ষা নিশ্চিত করনের লক্ষ্যে দুস্পষ্ট নীতিমাল প্রণয়ন করা
০৬.ধর্মীয় শিক্ষার ভিত্তি স্ব-স্ব ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী এবং পাঠা-পুস্তকের নামকরণ নিজ ধর্মের নাম অনুসারে করা।
০৭.নৈতিকতা সমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
০৮.শিক্ষার সকল ব্যয়ভার রাষ্ট্র কর্তৃক বহন করা এবং ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল এমপিওভূক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ করা।
০৯.পুরুষ ও মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক বেকারত্ব ও খাদ্য ঘাটতির সমাধান এবং অর্থনীতিকে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে "কৃষি শিক্ষা" ও "গার্হস্থ্য বিজ্ঞান" শিক্ষা সকল শ্রেণীর পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১০.শিক্ষা নিয়ে আপত্তি ও বিতর্কের ঝড় সমাধানের লক্ষ্যে নিরপেক্ষ দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবি ও দ্বীনদার ইসলামিক স্কলারদেরকে নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা করা।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.