প্রতিনিধি ২১ জুলাই ২০২০ , ৮:৫২:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
মু,হেলাল আহম্মেদ(রিপন)-পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ
কলাপাড়ার মহিপুর থানার ওসি। মনিরুজ্জামানে’র বিরুদ্ধে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, দূর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। তার কাছে কোন অভিযোগ, মামলা কিংবা আদালতের ওয়ারেন্ট ছাড়াই নিরাপরাধ সহজ-সরল নারী, পুরুষকে থানায় এনে আটক রেখে টাকা আদায়ের মত একাধিক অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।।
এবিষয় নিয়ে পুলিশের আইজিপিসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ওসির রোষানলে পড়েছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। থানায় যোগদানের মাত্র ক’ মাসের মধ্যেই ওসি মনিরুজ্জামানের এসব কর্মকান্ডে ফুঁসে উঠতে শুরু করেছে এলাকার সাধারন মানুষ।
৭ দিনের অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে সব ভয়ংকর সব অজানা তথ্য, ঘটনার সাথে জড়িতরা জানায়, মহিপুর থানার অন্তর্গত মহিপুর, ডালবুগঞ্জ, লতাচাপলি, ধূলাসার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাসহ কুয়াকাটা পৌর এলাকায় সহস্রাধিক ভাড়াটে মোটরসাইকেল থেকে মাসোয়ারা আদায় করছেন ওসি। নিজ এলাকা লালমোহনের কনেষ্টবল (পিকআপ ড্রাইভার) আরিফ হোসেন (কনেষ্টবল নং ৯৭৫) তাঁর ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। মাসোয়ারা না দিলে নানা অজুহাতে মোটর সাইকেল আটক করে গাড়ী প্রতি আদায় করা হচ্ছে ৫-৭ হাজার টাকা।
উক্ত করোনাকালীন লকডাউনের সময় মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুরে দোকানঘর সংস্কার কাজ করলে তা বন্ধ করে দেন ওসি মনির। পরে সংস্কার কাজের ধরন অনুযায়ী ২০/৫০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করার অনুমতি দেন তিনি। এমনকি রেকর্ডীয় জমিতে বাড়ীর ছাদ ঢালাই দিতে ছাদ প্রতি বেশ ক’জন বাড়ীর মালিককে দিতে হয়েছে ওসিকে টাকা।
কোভিট১৯ করোনা সংক্রমন এড়াতে মহিপুরের প্রায় ২০টি স্ব-মিল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর ছেলের মাধ্যমে ৮০ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে অএ এলাকায় পূনরায় চালু হয় ঐসকল স্ব-মিল।
মৎস্যবন্দরের একটি সূত্র জানায়, সমুদ্রে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের সরকারী অবরোধ চলাকালীন সময় মাছ ধরার জন্য মহিপুর-আলীপুর মৎস্যবন্দরের আড়ত মালিক সমিতি থেকে ৩ লক্ষ টাকা ঘুষ নেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। বন্দরের বরফকল গুলোতে বরফ উৎপাদনের জন্য বরফ কল প্রতি চাহিদানুযায়ী দিতে হয়েছে টাকা । ট্রলার মালিকদের কাছ থেকেও সমুদ্রে যেতে তাঁকে ট্রিপ প্রতি দিতে হয়েছে অর্থ এমন অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
১৩ জুলাই সোমবার রাত দুইটায় মৎস্যবন্দরের মজনু গাজীর ঘাট থেকে ট্রলারে বরফ নেয়ার সময় ওসি’র নির্দেশে ৮টি ট্রলার আটক করা হয়। পরে ৭টি ট্রলারের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের সমুদ্রে যেতে দেয়া হয়। টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় মনু খাঁ’র মালিকানাধীন এফবি ফাহিম নামের ট্রলারটি আটক করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মহিপুর ইউনিয়নের নজিবপুর গ্রামের ট্রলার মালিক জাকির, তোতা মিয়া, নাসির, রকিব খাঁ, জয়নাল গাজী, শাহজাহান মাঝি, শাহআলম মাঝি, ফুল মিয়া জানান, বরফ নিয়ে সমুদ্রে যেতে ওসি মনিরুজ্জামানকে বড় সাইজের ট্রলার প্রতি ২০ হাজার ও ছোট সাইজের ট্রলার প্রতি ১০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
এনিয়ে জানতে চাইলে এসআই মনির হোসেন সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, টিমের নেতৃত্বে ছিলেন এসআই তারেক। আর এসআই তারেক সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, তিনি কুয়াকাটা থেকে ওসি’র নির্দেশে টিমের সাথে যুক্ত হয়েছিলেন।
লতাচাপলি ইউনিয়নের লক্ষীপাড়া গ্রামের আবুল কালাম সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, দু’ভাইয়ের ছেলে জাকির ও হৃদয়’র মধ্যে পারিবারিক বিষয় নিয়ে সামান্য হাতাহাতির ঘটনায় একপক্ষ থানায় গেলে কোনরকম তদন্ত ছাড়াই ওসি মনিরুজ্জামানের নির্দেশে এএসআই সাদেক
গত ২৩ মে সকালে লক্ষীপাড়া গিয়ে আমাকে ধাওয়া করে। ভয়ে দৌড় দিলে আমাকে লক্ষ্য করে ইট বা রাবার জাতীয় ভারী কিছু একটা নিক্ষেপ করে। এতে পায়ের গোড়ালীর উপর পড়ে হাড় ফেটে যায় ধূলাসার ইউনিয়নের নয়াকাটা গ্রামের ইব্রাহিম (৫০) বলেন, ’আমার মেয়ে’র ভাশুর, ননদের সাথে পারিবারিক বিবাদ থেকে মারামারি হয়।
এনিয়ে ওসি’র নির্দেশে চরচাপলি থেকে আমার মেয়েকে থানায় ধরে আনে। প্রায় দুই রাত একদিন থানা হাজতে আটক রাখার পর অ্যাডভোকেট আনোয়ার সাহেবকে সাথে নিয়ে ওসিকে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে রোজার ঈদের আগের দিন শনিবার (২৩ মে) রাত দুইটার দিকে তাকে ছাড়িয়ে আনি।
সুধিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গীর ব্যাপারী সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, ২৩মে আমার বাড়ীতে মেহমান আসলে তাদেরকে বিনা অপরাধে ওসি সাহেব আটক করে থানায় নিয়ে ২ ঘন্টা রোদে দাড় করিয়ে রাখে। পরে মেয়ে জামাই জাকির আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাদেরকে মুক্ত করে।
মহিপুর ইউনিয়নের মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের রাসেল (৩৫) বলেন, পক্ষিয়াপাড়া গ্রামের রাখাইন মংবাচু এর কাছে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা বাবদ আমি ২৫ হাজার টাকা পাওনা হই। গত ২২ মে সমুদয় টাকা দেয়ার কথা থাকলেও মংবাচুর ভাগনে অংজুয়েন ১০ হাজার টাকা নিয়ে আসে। এতে আমি অংজুয়েনকে টাকার জন্য চাপ দিলে অংজুয়েন বিষয়টি মহিপুর খানায় অবগত করে।
এরপর মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামানের নির্দেশে এসআই তারেক আমাকে ও অংজুয়েনকে থানায় নিয়ে আসে। মহিপুর ওসি আমাকে অন্য মামলায় চালান দিবে বলে হুমকি দিয়ে সারাদিন থানা হাজতে আটকে রাখে। এরপর ওসিকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে আমাকে বাড়ী ফিরতে হয়েছে।
ওসি’র এমন ঘুষ বানিজ্যের প্রতিকারে আমি পুলিশের আইজিপি বরাবর অভিযোগ দিয়েছি। নিজামপুর গ্রামের হান্নান সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, রেকর্ডীয় জমিতে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটতে গেলে ওসি সাহেব এসআই তারেককে পাঠিয়ে ভেকু মেশিনের চাবি নিয়ে নেয়।
পরে ওসি মনিরুজ্জামান’র কাছে গেলে তিঁনি বলেন, জমির খাজনা পরিশোধ করে দাখিলা দেখিয়ে জমিতে প্রবেশ করতে হবে। পরে ১০ হাজার টাকা নিয়ে মেশিনের চাবি ফেরত দেন ওসি। ইব্রাহিম (৪২) নামের এক ভাড়াটে মোটর সাইকেল চালক বলেন, কলাপাড়া পৌরশহরের সদর রোডে মহিপুর ওসি’র পুলিশ পিকআপ আকস্মিকভাবে ব্রেক করার ফলে আমার মোটরসাইকেলটি পিকআপের ব্যাক লাইটের সাথে লাগে।
এতে ব্যাক লাইটটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ওসি আমার মোটর সাইকেলটি আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ৫/৭দিন ঘুরিয়ে ব্যাক লাইটের খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা নিয়ে মোটর সাইকেলটি ছাড়ে।
লতাচাপলি ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মিজানুর রহমান খাঁন সিএনএন বিডি ২৪.কমকে বলেন, পুত্র সোহেলের ভালবাসার অপরাধে মেয়ে পক্ষের মৌখিক অভিযোগে তার পিতা সেলিম মিয়া (৪৫) কে আটক করে থানার লকআপে আটকে রাখে ওসি।
পরবর্তীতে উভয় পরিবারে এবিষয় স্থানীয়রা জানায়, আমরা এর ছোবল থেকে মুক্তি চাই। এর সঠীক বিচারের দাবী জানিয়ে উদ্ধর্তন কতৃপক্ষের জোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।।