প্রতিনিধি ২৩ অক্টোবর ২০২২ , ৪:২৭:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
এস এম শামীম হাসান-মহাদেবপুর প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে স্থানীয় আল নুর হেল্থ সেন্টার এন্ড হাসপাতালে ভূল অপারেশনে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রোগীর মেয়ে সুমি আক্তার তার মায়ের মৃত্যুর জন্য ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা: নাহিদুজ্জামান নাহিদকে দায়ী করে (২৩ অক্টোবর) রোববার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২২ অক্টোবর) ভোরে সুরাতন বেগম (৫৫) মৃত্যু হয়। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর মান্দা উপজেলার বৈলশিং গ্রামের জনাব আলীর স্ত্রী সুরাতন বেগমকে (৫৫) পিত্তথলির অপারেশন করানোর জন্য মহাদেবপুর উপজেলা সদরের আল নুর হেল্থ সেন্টারে নিয়ে আসেন। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫ টায় অপারেশনের জন্য ভর্তি করান। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সুরাতন বেগমের পিত্তথলীর পাথর অপসারণ করেন। অপারেশনের দুদিন পর থেকে সুরাতন বেগমের বমির সাথে রক্ত উঠতে লাগে। এ বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে ডাক্তাররা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেন। কিন্তু আরো দুদিনেও অবস্থার উন্নতি না হলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক রোগীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর রোগীর অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় তারা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষতে জানালে তারা আবারও রোগীকে হেলথ সেন্টারে নিয়ে আসতে বলেন। ৬ অক্টোবর বিকেলে আবারও ওই হেলথ সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত কর্মচারীরা রোগীর আত্বীয়-স্বজনদের সাথে অসৌজন্য আচরণ করে বলেন, তারা শুধু রোগীর অপারেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন, রোগীকে সুস্থ করার দায়িত্ব তাদের নয়। রোগীসহ তার আত্বীয়-স্বজনকে হেলথ সেন্টার থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। নিরুপায় হয়ে ওই রাতেই রোগীর আত্মীয় -স্বজনরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে রাজশাহী মেডিকেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, রোগীর কিডনিতে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। তারা ধারণা করেন, রোগীকে যেখানে অপারেশন করেছিলেন সেখানে পাইপ দিয়ে যে রক্ত বের হয়ে ব্যাগে জমা হওয়ার কথা ছিল সেটা সঠিকভাবে স্থাপন না হওয়ায় রক্তগুলো ব্যাগে না গিয়ে কিডনীতে জমা হয়ে ইনফেকশন সৃষ্টি করায় তার কিডনী ২ টি ডামেজ হয়ে যায়। ভুল অপারেশনের কারনে রোগীর এ অবস্থা হয়েছে বলেও তারা ধারনা করেন। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখে হোমা ডায়ালেসিস করানো হয়। কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় ডাক্তার তাকে আইসিইউতে নেয়ার পরামর্শ দেন। পরে ১৯ অক্টোবর বুধবার রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২২ অক্টোবর) ভোর ৪ টার দিকে তার মৃত্যু হয়। শনিবার দুপুরে বৈলশিং গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত ছেরাতুন বেগমের বাড়িতে শোকের ছায়া। তার তিন মেয়ে সুমি আকতার, মইফুল বেগম ও মানসিক প্রতিবন্ধী আদরী খাতুন কান্নায় গড়াগড়ি করছেন। সুমি আকতার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে জানালেন, তার মাকে নিয়ে মহাদেবপুর আল নুর হেল্থ সেন্টারে গেলে সেখানকার ডাক্তার অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলীর পাথর অপসারণ করেন। অপারেশনের পর থেকে তার মায়ের বমির সাথে রক্ত বের হচ্ছে। কিন্তু রক্ত বের হবার জন্য পেটের পাশে যে ব্যাগ দেয়া হয়েছিল, নল দিয়ে সেখানে কোন রক্ত বের হয়নি। সুমি আকতার কান্নাজড়িত কন্ঠে আরো জানান, তার মায়ের কখনোই কিডনীর সমস্যা ছিলনা। এমনকি অপারেশনের আগে ডাক্তারও এ ব্যাপারে তাদেরকে কিছু জানাননি। অপারেশনের সমস্যার ফলেই কিডনী আক্রান্ত হয়েছে। তার গরীব পিতা বাড়ির গরুবাছুর বিক্রি করে ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তার মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে এখন পথের ফকির হয়ে গেছেন।জানতে চাইলে মোবাইলফোনে মহাদেবপুর আল নুর হেলথ সেন্টারের মালিক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা: রাশেদুজ্জামান জানান, অপারেশন পরবর্তী জটিলটা হতেই পারে। তার প্রতিষ্ঠানের কেউ রোগীর সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ করেনা। বরং রোগীকে ৫ দিন ক্লিনিকে রেখে সেবা দেয়া হয়। সে পর্যন্ত ওই রোগীর অবস্থা ভাল ছিল। পরে তার কিডনীর সমস্যা দেখা দেয়। কোন ওষুধের পাশ্ষ প্রতিক্রিয়ায় কিডনী আক্রান্ত হতে পারে বলেও তিনি জানান। তিনি আরো জানান, মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা: নাহিদুজ্জামান ওই অপারেশনটি করেন। ডা: নাহিদুজ্জামান জানান, পিত্তথলির পাথর অপারেশনে কোন ত্রুটি ছিলনা। অপারেশনের আগে ওই রোগীর কিডনীর সমস্যাও ছিলনা। তিনিও জানান যে, কোন ওষুধের পাশর্^প্রতিক্রিয়ায় কিডনী আক্রান্ত হতে পারে।