প্রতিনিধি ১৬ নভেম্বর ২০২২ , ৮:০৪:৩৮ প্রিন্ট সংস্করণ
এস এম শামীম হাসান-মহাদেবপুর প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর মহাদেবপুরে একটি বহুতল মার্কেট নির্মাণের জন্য হাটের সরকারি খাস জায়গার দখল নিতে গিয়ে দোকানীদের বাঁধার মুখে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করা হয়েছে। দোকানীরা বলছেন উচ্ছেদের জন্য তাদেরকে কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। আর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় এই স্থানে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫টি পাকা শেড থাকার কথা গোপন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান থানা পুলিশ, প্রয়োজনীয় শ্রমিক, ভেকু মেশিনসহ উপজেলা সদরের হাটের পিঁয়াজ হাটি এলাকায় গিয়ে দোকানীদের উচ্ছেদ শুরু করেন। তারা সেখানকার সুলতান হোসেনের পিঠার দোকানের অস্থায়ী শেড খুলে ফেলে চুলা ভাঙচুর করলে ওই এলাকার ৯৯ জন দোকানী এর প্রতিবাদ জানান।
মহাদেবপুর উপজেলা সদরের আত্রাই নদীর বাঁধের বস্তি এলাকার বাসিন্দা পিঠা বিক্রেতা সুলতান হোসেন কান্নাজড়িত কন্ঠে অভিযোগ করেন যে, উচ্ছেদের জন্য তাকে কোন নোটিশ দেয়া হয়নি। তিনি সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে প্রতিবছর সরকারি ঘরে নানান কর জমা দেন। হঠাৎ করে তার ক্ষুদ্র দোকান বন্ধ করা হলে তাকে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। অন্য দোকানীরা অভিযোগ করেন, প্রতিযোগিতার বাজারে অনেকেই মোটা টাকার বিনিময়ে পজিশন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এখানে ক্ষুদ্র ব্যবসায় পরিচালনা করে আসছেন। এই অবস্থায় হঠাৎ করে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা পথে বসবেন। উচ্ছেদের আগে তাদেরকে পূণর্বাসনের দাবি জানান। নতুন মার্কেট নির্মিত হলে সেখানে তাদেরকে পজিশন দেয়ার বিষয়ে একটি চুক্তিনামা স্বাক্ষরেরও দাবি জানান।
এক পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের বাঁধার মুখে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ করে সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফিরে যান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ইতিপূর্বে কয়েকবার মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়া ওই জায়গা খালি করে দেয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ থাকতেই পারে। তাদের কথা শোনার জন্য অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মহাদেবপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের হাটের ৫৭৭ নং দাগে ২৪ শতক জায়গার উপর একটি চারতলা ভীত দিয়ে দোতলা গ্রামীণ মার্কেট ভবন নির্মাণ করা হবে। এজন্য ৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। নথি পর্যালোচনা করে জানা যায়, এই জায়গার উপর ইতিপূর্বে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে হাটের ৫টি বড় শেড নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু নতুন মার্কেট ভবন নির্মাণের সাইট সিলেকশন, প্লান, ডিজাইন,
এস্টিমেট কোথাও সে ৫টি শেড থাকার কথা উল্লেখ নাই। শেডগুলো কিভাবে ভেঙ্গে ফেলা হবে তারও কোন পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি স্থাপনা ভেঙ্গে নতুন স্থাপনা নির্মাণ করতে হলে যেসব নিয়ম কানুন পালন করার বিধান রয়েছে সেগুলো মানা হচ্ছেনা। সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুসরাত জাহান জানান, উর্ধতন কর্মতর্কার নির্দেশে তিনি ওই জায়গা খালি করবেন। সেখানে যা কিছুই থাক না কেন সেগুলো ভাঙ্গা হবে। উপজেলা প্রকৌশলী সৈকত দাশ জানান, উপজেলা প্রশাসন জায়গা খালি করে দিলে তবেই তারা নির্মাণ কাজ শুরু করবেন। তিনি বলেন, উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের দেয়া নক্সায় প্রকল্প এলাকায় সরকারি ৫টি হাট শেড থাকার কথা উল্লেখ নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান জানান, ওই স্থানে সরকারি হাট শেড আছে কিনা, থাকলে সার্ভেয়ার কেন তা উল্লেখ করলেন না, এসব বিষয় তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। স্থানীয়দের দাবি, কোটি টাকার সরকারি স্থাপনা থাকার কথা গোপন করে এখানে বহুতল মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই তথ্য গোপন করে সরকারের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ও সরকারি শেড না ভেঙ্গে অন্য কোন স্থানে নতুন মার্কেট নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।