প্রতিনিধি ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৯:৩০:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে স্কুল সংলগ্ন একটি ব্যক্তি মালিকানধীন আমবাগানের ১ হাজার ফলগাছ কেটে জোরপুর্বক জমি দখল করে স্কুল ভবন নির্মান করা হয়েছে ৷ ৩ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরেও জমির মালিককে টাকা না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
জমির মালিক ফতেপুর গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন প্রধানের স্ত্রী ফিরোজা বেগম (৬৫) ও তার ছেলে মোঃ সেলিম জানান, ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রাতের আধারে গত ৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ ইং তারিখে তাদের আম বাগানের ১ হাজার ফল গাছ কেটে ৩৬ সতাংশ জমি জোরপুর্বক দখল করে ৪ ( চার তলা) স্কুল ভবন নির্মাণ করেছেন ৷তারা আরোও বলেন,বিভিন্ন লোকমারপত আমাদের জমির পাওনাদী পরিশোধ করে দিবে বলে গত ৩ বছর যাবৎ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগন ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক রজ্জব আলী মতলব উত্তর উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভুমি) এর কাছে গিয়েও আমাদের জমির টাকা পরিশোধ করে দেওয়া হবে মর্মে সময় চান কিন্তু পরবর্তিতে তারা কেউ আর সহকারী কমিশনার ( ভুমি) এর সাথে যোগাযোগ করেননি এবং বিভিন্নভাবে তালবাহানা করে আমাদের জমির টাকা পরিশোধ না করে তারা স্কুল ভবন নির্মাণ করছেন আমাদের জমির উপর যা সম্পুর্ণ বেআইনি ৷এ ঘটনায় ফিরোজা বেগম ( ৬৫) বাদী হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ইং তারিখে চাঁদপুর বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক, রজ্জব আলী, পিতা মৃত ইসহাক গাজি, করনিক দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ফারুক হোসেন (৪৮), ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মৃত মোজাম্মেল হক খানের ছেলে বাবুল খান (৪৯), মৃত ছৈয়দ আলী সরকারের ছেলে তপন সরকার রতন (৪২) ও মৃত আর্শাদ বেপারীর ছেলে জাকির (৪৫) কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। দরখাস্ত মামলা নং ১৪০/২০১৮। এছাড়াও নালিশী ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে বাদীর আবেদনে প্রেক্ষিতে ১৪৫ ধারা জারি করেন আদালত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১২৩নং ঠেটালিয়া মৌজার ৬৭ নং সিএস খতিয়ান ৬০০ দাগে ৮ ও ৬৮ মোট ৭৬ শতাংশ ভূমি ৪৮১১, ৬৩৮৫, ৬৬৯, ৫৯৫২ ও ৩৭৬২ নং দলিল মূলে খরিদ করে মালিক ও দখলদার হইয়া বিগত ১৫ বছর পূর্বে ফলজ বাগান করেন বাদী। বাগানে থাকা প্রায় ২০ লক্ষ টাকা মূল্যের ১৫০টি আম গাছ, ১০০ টি লিচু গাছ, ২০০টি লেবু গাছ, ১০টি সুপারি গাছ, ৫০টি কাঁঠাল গাছ, ২০০ টি বড়ই গাছ, ১০ পামওয়েল গাছ, ১০০ টি আনারস গাছ, ৫০ টি লটকন গাছ ৬০ টি পেয়ারা গাছসহ সহস্রাধিক গাছ কর্তন করে মামলার বিবাদীগণ জোড়পূর্বক জমি দখল করে। প্রতি বছর উক্ত বাগান থেকে ২ লক্ষ টাকার ফল বিক্রি করা হতো। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি দো-চালা টিনের ঘর ভাঙচুর করে, বাগানে কাটা তারের বেড়ার সীমানা কাটিয়া ৭০ টি পাকা সিমেন্টের পিলার ভাংচুর করে, যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ টাকা। ১৫ বছর আগে বাগানের অধিকাংশ চারা রাজশাহী থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। উক্ত বাগানটি একটি আদর্শ ফলের বাগান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় গত ২০১৪ সালে চ্যানেল আইয়ে হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়েছিল।স্কুলের লোকজন ৭৬ শতাংশ জমির মধ্যে বাগানের ৩৬ সতাংশ জমির সমস্ত গাছ কেটে ও টিনের ঘরটি ভাঙচুর করে নিয়ে বাগানে জোড় করে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে মাটি দিয়ে ভরাট করে আসামীরা। এতে বাধা দিতে গেলে মামলার বাদী ফিরোজা বেগমসহ বাদীপক্ষের আরো কয়েকজনকে কিল, থাপ্পর ও আঘাত করে এবং আসামীদের দেশীয় অস্ত্র দা, ছেনী, কুড়াল, রড, শাবল ইত্যাদি দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি প্রদর্শন করে।মামলার বাদী ফিরোজা বেগম বলেন, আমার জমি তারা স্কুলের নামে জোড়করে দখল করার লক্ষ্যে বালু ফেলেছে। জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ১ হাজারের বেশি ফলের গাছ লাগানো ছিল। ফলসহ সেই গাছগুলো কেটে ফেলেছে এবং বাগানে থাকা একটি দোচালা টিনের ঘর ছিল সেটিও ভাঙচুর করে নিয়ে গেছে। আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে তাদের কেউ কিছু বলতে পারে না। আমি সুষ্ঠু সমাধান না পেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করি। আদালতের কাছে আমার জমি দখল ও বাগানের গাছ কাটার সুষ্ঠু বিচার চাই। এদিকে মামলার বাদী ফিরোজা বেগমের আবেদনের প্রেক্ষিতে নালিশী ভূমিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৪৫ ধারা জারি করেন আদালত।
ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মারুপ বলেন, আমরা জমির মালিক কে টাকা দিয়ে দিব ৷ এ বিষয়ে ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রজ্জব আলী বলেন, আমরা অবশ্যই জমির মালিক মোঃ সেলিম প্রধানকে বর্তমানে জমির যে দাম রয়েছ সে অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করে দিব ৷ এব্যাপারে জমির মালিক ফিরোজা বেগম গংরা তাদের জমির ন্যায্য মূল্য টাকা পাওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ৷