প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ১১:১৪:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
শেখ জাহাঙ্গীর আলম:
আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বসন্তের এ দিনে বাগানে ফুটেছে নানা রঙের কত শত ফুল। কত ফুল আজ শোভা পাচ্ছে রমণীর নোটন খোঁপায়। প্রিয় মানুষের সঙ্গে হাতে হাত রেখে চলতে চলতে আজ কত ফুল হবে অনুষঙ্গ। কিন্তু ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের জন্য ভালোবাসার ফুল ফোটেনি। ফুটেছিল দিপালী সাহা, জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, কাঞ্চনের বুকের তপ্ত রক্তের রঞ্জিত হওয়া রাজপথের রক্তাক্ত গোলাপ।
সেদিন ছিল স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের সচিবালয় অভিমুখে প্রতিরোধ মিছিল। তিন দফা দাবির ভিত্তিতে সেই প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি বাতিল, সব ছাত্র ও রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তিদান ও সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এই তিন দফা দাবিতে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সমাবেশ ও সচিবালয় অভিমুখে মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
১১ জানুয়ারি সকালে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী যখন বটতলায় সমবেত হয়েছে তখন কেন্দ্রীয় নেতারা আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক নেতা ছিলাম তাদের ঘরোয়াভাবে ডেকে বললেন, অনিবার্য কারণবশত আজকের কর্মসূচি পালন করা যাবে না। ক্ষুব্ধ হয়ে যখন আমরা প্রশ্ন করলাম, কেন? কী সেই অনিবার্য কারণ? নেতারা একান্তে বললেন, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন প্রস্তুত নয়। সেদিনই বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের হাতে বটতলায় আমাদেরই পরম পূজনীয় নেতারা লাঞ্ছিত হলেন। পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হলো ১৪ ফেব্রুয়ারি।
সেই ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বটতলায় সমবেত হয়েছিল জীবন বাজি রেখে সামরিক স্বৈরাচারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় কানাডা ও ফ্রান্স। ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সাহিত্য সম্মেলন পদব বাংলা একাডেমীতে ।রএই মাসেই ভাষার জন্য শহিদ হয়েছেন অনেকেই। আজ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ঐতিহাসিক স্বৈরাচার বিরোধী দিবস। ১৯৮৩ সালের এই দিনে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়।
১৯৮৩ সালে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দী মুক্তি ও জনগণের মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে ছাত্র-জনতা এক ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালী সাহা, মোজাম্মেল, আইয়ুবসহ প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী শহীদ ও শতাধিক আহত হন। যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিলো, তাদের প্রতি
গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।