প্রতিনিধি ৩ মে ২০২১ , ৬:২৮:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টারঃ
আজ ৩ মে , “বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস”। প্রতিবছর এই দিনে সারা বিশ্বজুড়ে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত হয়। এবারে দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে “তথ্য জনগণের পণ্য”। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশ গত বছরের তুলনায় এ বছর আরাে এক ধাপ পিছিয়েছে। কারণ সাংবাদিক নির্যাতন নিপীড়ন সহ নানান জটিলতা। গত ২০ এপ্রিল রিপাের্টার্স উইদাউট বর্ডারস ( আরএসএফ ) ২০২১ সালের এই সূচক প্রকাশ করে। ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছর সেই সূচকে এক ধাপ করে পেছাচ্ছে বাংলাদেশ। সূচকে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫২ তম। সূচকে সবার শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে। ২০২০ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫১ তম। আর ২০১৯ সালের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫০ তম। অর্থাৎ , গতবারের সূচকেও বাংলাদেশের এক ধাপ অবনতি হয়েছিল বলে জানা যায়।
এবারের সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলাের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। বাংলাদেশের চেয়ে ভালাে অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান ( ১৪৫ ) , ভারত ( ১৪২ ) , মিয়ানমার ( ১৪০ ) , শ্রীলঙ্কা ( ১২৭ ) , আফগানিস্তান ( ১২২ ) , নেপাল ( ১০৬ ) , মালদ্বীপ ( ৭৯ ) , ভুটান ( ৬৫ )। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণমাধ্যম কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে , তার ভিত্তিতে ২০০২ সাল থেকে আরএসএফ এই সূচক প্রকাশ করে আসছে। ১৯৯১ সালে ইউনেস্কোর ২৬ তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ অনুসারে , ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এরপর থেকেই দিবসটি বিশ্বজুড়ে পালন করা হচ্ছে ।
সাংবাদিকরা এ দিবসটি পালন করে আসছেন। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ, বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মূল্যায়ন, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনদানকারী সাংবাদিকদের স্মরণ ও তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয় দিবসটিতে। জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় থেকে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রােববার মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের একটি বার্তা প্রচার করা হয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব ‘ উইন্ডহােক ঘােষণার ৩০ বছর “শীর্ষক বাণীতে গণমাধ্যম বিষয়ে বলেন, কোভিড -১৯ মহামারির সময় আমরা বিশ্বব্যাপী যে চ্যালেঞ্জ মােকাবিলা করেছি , সেগুলাে জীবন বাঁচাতে, শক্তিশালী, স্থিতিশীল সমাজ গঠনে নির্ভরযােগ্য, যাচাইকৃত এবং সর্বজনীন ভূমিকাকে চিহ্নিত করে। মহামারি এবং জলবায়ুর জরুরি অবস্থাসহ অন্যান্য সংকটময় সময়ে সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমকর্মীরা ক্ষতিকর ভুল এবং মিথ্যাচারকে মােকাবিলাসহ আমাদের দ্রুত পরিবর্তিত ও প্রায়ই অপ্রতিরােধ্য তথ্যের দৃশ্যপট তুলে ধরতে সহায়তা করে। তিনি আরাে বলেন, সাংবাদিকতা হলাে একটি গণসম্পদ। মহামারির অর্থনৈতিক প্রভাব অনেক প্রচার মাধ্যমকে কঠোরভাবে আঘাত করেছে , যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ।
এছাড়া বাজেট সংকটের সঙ্গে সঙ্গে নির্ভরযােগ্য তথ্য পাওয়াও কঠিন মনে হচ্ছে। এ শূন্যস্থান পূরণ করতে গুজব , মিথ্যা এবং চূড়ান্ত বা বিভাজিত মতামত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি সব সরকারকে তাদের ক্ষমতানুযায়ী একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুমুখী প্রচার মাধ্যমকে সমর্থন করার জন্য সবকিছু করার আহ্বান জানাচ্ছি। গুতেরেস আরাে বলেন, ভুল তথ্য এবং অপপ্রচাররােধে মুক্ত এবং স্বাধীন সাংবাদিকতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। জাতিসংঘ সাংবাদিক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মপরিকল্পনার লক্ষ্য হচ্ছে , বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন মনে করি। কারণ তথ্য হচ্ছে একটি গণসম্পদ।
আজ আমরা একটি মুক্ত, স্বাধীন এবং বহুত্ববাদী আফ্রিকান সংবাদমাধ্যম উন্নয়নের জন্য উইন্ডহােক ঘােষণাপত্রের ৩০ তম বার্ষিকী উদযাপন করছি ।
দিবসটি উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ( টিআইবি ) বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে , কোভিড ১৯ অতিমারিকালে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের পেশাগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও প্রকট হয়েছে। বহু গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত কিংবা পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন। তাই মুক্ত গণমাধ্যম এবং তথ্যের অবাধ প্রবাহের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে অবিলম্বে স্বাধীন ও পেশাদার গণমাধ্যমের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
আজ গণমাধ্যম দিবসটি উপলক্ষ্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড . ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে । কিন্তু প্রকাশ্য ও প্রচ্ছন্ন নানামুখী চাপ ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে সাংবিধানিক এই অধিকার মলাটবদ্ধ নথিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
আজ ০৩ মে সােমবার বাংলাদেশ তৃণমূল সাংবাদিক কল্যাণ সোসাইটি এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মীর মোঃ সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদুল আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া পলাশ সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য মত প্রকাশ করেছেন। এমনকি সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া পলাশ বলেন, ৩ মে বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা মূল্যায়ন করতে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ থেকে সুরক্ষা পেতে এবং সাংবাদিকতা পেশার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাণ হারানাে সাংবাদিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উদযাপন করতে সংগঠন এর দেশের প্রতিটি জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সকল সদস্যদের আহবান জানান।