• আমার দেশ

    বাড়ি পেলেন হোটেলে কাজ করা সেই শিক্ষক

      প্রতিনিধি ১৮ ডিসেম্বর ২০২১ , ৬:১৮:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ লুৎফর রহমান লিটন -সলংগা সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

    এক সময়ের জনপ্রিয় শিক্ষক রইচ উদ্দিন। তিনি জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক এখন হোটেল বয়’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নজরে আসে তাঁর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের। পরে তাদের সহায়তায় একখন্ড জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ি তৈরী করে উপহার দেন সেই শিক্ষকে। বাড়িটির নাম দেওয়া হয় ‘প্রতিশ্রুতি ভিলা’।শুক্রবার বিকেলে কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে উপজেলার কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রইচ উদ্দিন টিপুকে বাড়ি উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুর রহমান, উপজেলা আ.লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মোকছেদ আলী, সাধারণ সম্পাদক ও রুকিন্দীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আহসান কবির এপ্লব, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এ.কে.এম মোস্তাফিজার রানাসহ সকল শিক্ষক ও সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।জানা গেছে, শিক্ষক রইচ উদ্দিন টিপু গত ২০১৮ সালের ২৪ মে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। অর্থ সম্পদ তেমন না থাকলেও চাকুরী জীবনে বেশ কিছু সঞ্চয়ও করেছিলেন। তিনি কয়েক বছর আগে বিদ্যালয় থেকে বাই-সাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘনায় তার বাম পা ভেঙ্গে যায়। পায়ের চিকিৎসায় খরচ করেন জমানো সঞ্চয়ের সব টাকা। শুধু তাই নয় নিজের বসত ভিটা পর্যন্ত বিক্রয় করতে হয় তাকে।এ বিষয়ে ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর বিডি২৪লাইভে “ “সহকারী প্রধান শিক্ষক এখন হোটেল বয়” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর পর সামাজিক মাধ্যম ফেইসবুকে বিষয়টিশারীরিকভাবে সুস্থ্য হলেও এক পা ছোট আর এক পা বড় হয়ে যায়, এতে খুরিয়ে হাঁটতে হয় তাকে। অবসর গ্রহনের পর কর্মের জন্য পারি জমান রাজধানী ঢাকায়। চাকরী নেন একটি পলিথিন কারখানায়। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য সেখানে বেশি দিন চাকুরী করতে পারেনি তিনি। নিরাশ হয়ে ফিরতে হয় নিজ এলাকায়। জীবন জীবিকা চালাতে হোটেল বয় হিসাবে কাজ নেন জয়পুরহাট শহরের রেড প্লেস নামক চাইনিজ হোটেলে। খাবারের প্লেট ধোয়া, টেবিলে পানি দেওয়া, গ্লাস পরিষ্কার, টিস্যু পেপার সরবরাহ করা তার কাজ। এ কাজে তিনি প্রতিদিন ১০০ টাকা পারিশ্রমিক পান। পরিবারে দৃষ্টি প্রতিবন্ধি স্ত্রীসহ রয়েছে দুইটি কন্যা সন্তান। অর্থের অভাবে ভর্তি করাতে পারেননি কোন স্কুলে। ভাইরাল হলে স্থানীয় প্রশাসন এবং তার প্রাক্তন ছাত্রদের বিষয়টি নজরে আসে। তার ছাত্ররা বিভিন্ন হৃদয়বান ব্যক্তিদের সহায়তায় একটি ফান্ড গঠন করে। এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম হাবিবুল হাসানসহ তার কর্মস্থলের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। তাদের সহায়তায় তার কর্মস্থল কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে একখন্ড জমি ক্রয় করে সেখানে বাড়ি নির্মান করে তাকে উপহার দেওয়া হয়। এসময় তিনি আবেগআপ্লুত হয়ে পরেন।খতার স্ত্রী জয়নব খাতুন বলেন, ‘ছাত্রদের সহযোগীতায় বাড়িটি পেয়ে খুব ভাল লাগছে। আমাদের মাথা গোঁজার কোন ঠাঁই ছিল না। সন্তানদের ভাল খাওয়াতে পারিনি, ছেঁড়া কাপড় পরিয়ে রেখেছি তাদের। এক বেলা খাওয়া হলেও অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়েছে। ছাত্ররা নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে’।কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র হাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২০ সালের ২০ নভেম্বর জানতে পারি আমাদের শিক্ষক হোটেল বয়ের কাজ করছে। স্টেশনের পাশে ঝুপরি ঘরে ভাড়া থাকছেন, এমন সংবাদ দেখে খুব মর্মাহত হয়েছে। তখন চিন্তা করেছি তার জন্য কিছু করা যায় কিনা। সেই মোতাবেক আমাদের বিদ্যালয়ে সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে ফেইসবুকে পোস্ট দেই। পরে এক মাসের মধ্যে আমরা প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার ফান্ড গঠন করে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তায় প্রিয় শিক্ষকে ‘প্রতিশ্রুতি ভিলা’ নামক বাড়িটি উপহার দিয়েছি’।কানুপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রিয় সহকর্মীকে ছাত্রদের সহায়তায় বাড়িটি উপহার দিতে পেরে আমরা আনন্দিত । তাঁর অবসর ও কল্যাণ তহবিলের টাকা অতি দ্রুত উত্তোলনের জন্য ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি অতি তারাতারি তিনি টাকা পেয়ে যাবেন’।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ