প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৮:০৭:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
কপিল উদ্দিন জয়-বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
পার্বত্য বান্দরবানে এক দশক ধরে চলা ৩৫০ টি প্রাথমিক বিদালয়ের ৪৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে বিনা মূল্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট বিতরণ কার্যক্রম তহবিল সংকটের কারণে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর বন্ধ হলে শিক্ষার্থীরা পুষ্টিহীনতায় ভোগার পাশাপাশি অনেকের ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে বলে মনে করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতায় ২০১৩ সাল থেকে বান্দরবানের ছয়টি উপজেলা ও একটি পৌরসভায় ৩৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে প্রতিদিন এক প্যাকেট পুষ্টিসমৃদ্ধ হাই এনার্জি বিস্কুট বিতরণ করা হয়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সহযোগিতায় দুটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন (এনজিও) এ কার্যক্রম পরিচালনা আচ্ছেন।
এগুলোর মধ্যে এন,জেড,একতা মহিলা সমিতি জেলার পাঁচটি উপজেলার ২৯৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪১ হাজার ৩৪৫ জন এবং হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন থানচি উপজেলার ৫১টি বিদালয়ের ৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে বিনা মূল্যে বিস্কুট দিয়ে থাকে। এন,জেড, মহিলা সমিতির রেকর্ড কর্মকর্তা মেহেদি হাসান জানান, রোয়াংছড়ি উপজেলার ৫০টি স্কুলে ৩ হাজার ৩৫২, নাইক্ষ্যংছড়িতে ৬৬টি স্কুলে ১০ হাজার ৭৮০, লামায় ৯১টি স্কুলে ১৮ হাজার ৫৫১, রুমায় ৪৮টি স্কুলে ২ হাজার ৭৪৯ এবং আলীকদম উপজেলায় ৪৪টি স্কুলে ৫ হাজার ৯১৩ জনসহ মোট ২৯৯টি স্কুলে ৪১ হাজার ৩৪৫ জন শিক্ষার্থী প্রতিদিন এক প্যাকেট করে উন্নত মানের ও পুষ্টিসমৃদ্ধ হাই এনার্জি বিস্কুট পেয়ে থাকে।
৬ উপজেলার ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে পেত ‘হাই এনার্জি বিস্কুট’।অর্থসংকটে ১৫ সেপ্টেম্বরের পর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াবে না ডব্লিউএফপি। শিক্ষার্থীরা পুষ্টিসংকটে ভোগার পাশাপাশি ঝরে পড়ার আশঙ্কা। এন,জেড, মহিলা সমিতি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে একজন মাঠ কর্মকর্তা (ফিল্ড মনিটর) ও একজন উপজেলা কর্মকর্তার (উপজেলা ফোকাল) মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রাথমিক বিদালয়ের ছাত্রছাত্রীর মাঝে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এন,জেড, মহিলা সমিতির স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম এর সমন্বয়ক অ্যান্ড্রো ডাইস বলেন, ৭৫ গ্রাম ওজনের প্রতিটি বিস্কুটের প্যাকেটে ১০-১১টি বিস্কুট থাকে। এগুলো ডব্লিউএফপি ও বাংলাদেশ সরকারের লোগোসংবলিত ‘হাই এনার্জি বিস্কুট’। এতে তেল, চিনি, চর্বি, প্রোটিন, আয়োডিনযুক্ত লবণসহ পুষ্টিকর উপাদান থাকে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীই এ বিস্কুট পেয়ে থাকে। এনজেড মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারা বেগম বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ডব্লিউএফপির স্কুল ফিডিং প্রকল্পে তহবিল-সংকটের কারণে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের পর মেয়াদ শেষে প্রকল্প আর বাড়ানো হবে না।
এতে এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশই সুষম পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে। স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া এই প্রকল্পের ৫০ জনের মতো স্টাফ বেকার হয়ে পড়বে।
নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রুমার বগামুখ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী দৈনিক মানব কন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি কে বলেন, বিনা মূল্যে পাওয়া বিস্কুট খেলে স্কুলে থাকা পর্যন্ত ক্ষুধা লাগে না। লেখাপড়ায় মনোযোগ থাকে। আগামী মাস থেকে এই বিস্কুট দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন। এতে তাদের মন খারাপ হয়েছে।
বাইশারীর সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবায়েদ নাহিদ নুর বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলের অধিকাংশ অভিভাবক দরিদ্র। অনেকেই সকালে খেতে পারে না। স্কুলে এসে বিস্কুট খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ ও পুষ্টি পায় শিক্ষার্থীরা। এতে অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তান স্কুলমুখী। প্রকল্পটি বন্ধ হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার সংখ্যা বাড়বে, অনেকে পুষ্টিহীনতায় ভুগবে।’ পুষ্টিহীনতার কারণে লেখাপড়ার মান কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন এ শিক্ষক। একই মন্তব্য করেন রুমা উপজেলার বগামুখ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক আমির হোসেন নয়ন।
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেসক্লাবের আহবায়ক এবং এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আবদুল হামিদ বলেন, প্রায় ১০ বছর ধরে চলে আসা এ প্রকল্প কেবল তহবিল-সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে, এটা কাম্য নয়। প্রকল্পটি চালু রাখতে তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ত্রিরতন চাকমা বলেন,‘স্কুল ফিডিং প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ হলে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের প্রাথমিক শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যেতে পারে। ডব্লিউএফপি এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখলে এখানকার প্রাথমিক শিক্ষায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’