প্রতিনিধি ৩ জানুয়ারি ২০২২ , ৩:১৯:১১ প্রিন্ট সংস্করণ
শাকিল গাজী-খুলনা জেলা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবজনক ভূমিকা রয়েছে। বহু ত্যাগী রাজনীতিবিদ-ছাত্রনেতা রয়েছেন, যারা তাদের আরাম-আয়েশ ও ভোগ-বিলাসের কথা কখনও ভাবেননি। কিন্তু এখন হানাহানির রাজনীতি ছাত্রদের বিপথে পরিচালিত করছে। ক্ষমতা, অর্থ আর অস্ত্র পেশিশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। অনেক ছাত্র সংগঠন এখন মাস্তানি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি নিয়েই ব্যস্ত।
ছাত্র রাজনীতির সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশে দীর্ঘ ত্রিশ বছর যাবত আদর্শিক ছাত্র রাজনীতি চর্চা করছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। তারই ধাাবাহিকতায় সংগঠনের ঢাকা মহানগরীর ছাত্রনেতা মো. মাহবুবুর রহমান বছরব্যাপী মানবিক ও সৃজনশীল কর্মকৌশলের মাধ্যমে আলোচনায় ছিলেন। রাজধানী ঢাকার ডেমরার বাসিন্দা ঢাকা কলেজের মেধাবী ছাত্র কিশোর বয়স থেকেই যুক্ত ছিলেন আদর্শিক ছাত্র রাজনীতি চর্চায়।
২০২১ সেসনে ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মনোনীত হন মাহবুব। গত ২১ জানুয়ারী শাখার বার্ষিক সম্মেলনের প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের হাতে শপথ পাঠের মাধ্যমে পরিকল্পনা ও পরামর্শভিত্তিক কার্যক্রম শুরু করেন। ছাত্রদের অধিকার আদায় ও জনকল্যাণকর ছাত্র রাজনীতি চর্চায় শুরু থেকেই তিনি ছিলেন দৃড়প্রতিজ্ঞ।৫২-এর ভাষা আন্দোলন এ ছাত্রদের ভূমিকা বিশ্ববাসী আজো স্মরন করে।
সে চেতনাকে বুকে ধারণ করে ২১-এ ফেব্রুয়ারী সকালে মোঃ মাহবুবুর রহমান এর নেতৃত্বে রাজধানীর দনিয়া কলেজ প্রাঙ্গন হতে বর্ণমালা মিছিল করে ইশা ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর পূর্ব। স্বাধীনতা দিবসে শাখার উদ্যোগে ঢাকা মহানগরব্যাপী ক্রিকেট টুর্ণামেন্ট, শহীদদের জন্য কুরআন খতম ও দোয়া মাহফিল আয়োজনের ব্যবস্থা করেন তিনি।বছরের শুরুতেই করোনার প্রকোপ আবারো বেড়ে যাওয়ায় জীবিকার সংকটে কষ্টে দিনাতিপাত করে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তাদের কষ্ট লাঘবে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্পটে অসহায় দুঃস্থ মানুষদের মাঝে খাবার বিতরন করেন তিনি।
এছাড়াও পবিত্র মাহে রমজানে যেন সকলেই যথাযথ খাদ্য সামগ্রীর মাধ্যমে সেহরী ও ইফতার সম্পন্ন করতে পারে সে লক্ষে বিতরণ করা হয় খাদ্য সামগ্রী। পবিত্র ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতেও বিতরণ করেন ঈদ সামগ্রী।
করোনার প্রকোপে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। করোনার প্রকোপ কমে আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার যৌক্তিক আন্দোলনে মাঠে সরব ছিলেন তিনি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা এবং একই সাথে দীর্ঘ সময়ের অবসাদ দূর করে জীবনের সঠিক লক্ষ্য নির্ধারনে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার দিক-নির্দেশনা সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সড়কে মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রাণহানীর যথাযথ বিচার ও হাফপাশ মেনে নেয়ার দাবীতে রাজপথে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন ছাত্রনেতা মাহবুব।শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘ বিরতির কারনে অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিমুখ হয়ে পরে। তাদের নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে ও শিক্ষার্থীদের বইপাঠের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের আগ্রহ বাড়াতে ঢাকা মহানগরব্যাপী বইপাঠ ও পর্যালোচনা প্রতিযোগীতার আয়োজন করেন। ঢাকা মহানগরীরর আওতাধীন ক্যাম্পাসগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য ইশা ছাত্র আন্দোলনের হেল্প ডেস্ক এর মাধ্যমে ভর্তি সহযোগীতায় ভূমিকা রাখেন তিনি।
দূষণ মুক্ত ঢাকা মহানগর গড়ার প্রত্যয়ে সংগঠনের ৩০ বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে পরিবেশ বান্ধব বাহন সাইকেল নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সাইকেল র্যালীর নেতৃত্ব দেন ছাত্র নেতা মাহবুব। এছাড়া চামড়া শিল্প, পাট শিল্প, করোনায় অসহায় হয়ে পড়া সাধারন মানুষের অধিকার রক্ষায় রাজপথে সরব ভূমিকা রাখেন তিনি।
সারাবছর এমন অসংখ্য সৃজনশীল ও মানবিক কর্মকৌশলের মাধ্যমে ছাত্র রাজনীতিতে আলোচনায় ছিলেন মোঃ মাহবুবুর রহমান। ছাত্র রাজনীতি কাউকে ক্ষমতার চেয়ারে বসানো বা নামানোর জন্য না হয়ে জনগণের কল্যানে ও শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য হওয়া উচিত। এদেশে ছাত্র রাজনীতির যে ঐতিহ্য রয়েছে তা ফিরিয়ে আনতে সৃজনশীল কর্মকৌশল ও জনহিতৌষী ছাত্রনেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। তবেই বাংলাদেশ হবে বিশ্বের দরবারে কল্যান রাষ্ট্রের মডেল। অপরাজনীতি চিরতরে বন্ধ হোক। আর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসুক শিক্ষা এবং ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ৷