মোঃ শাহ আলম-ক্রাইম রিপোর্টার:
আকস্মিক কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। মাটিতে নুয়ে পড়েছে ধান,আম,ভূট্টা ও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত সহ ভেঙ্গে পড়েছে কলাগাছ,গাছপালা ও ঘরবাড়ি। ঝড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ফসলের এমন পরিস্থিতি দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে কৃষক। বিশেষভাবে নওগাঁ জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় সবেমাত্র দানা পেতে শুরু করেছে বোরো ধান। এই অবস্থায় গাছ নিয়ে প্রায় পুরোপুরি দানাপুর দানাপুর না হওয়ার ফলে প্রতি বিঘায় ৫ থেকে ৭ মণ ধান কম হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক বোরো চাষী।
বুধবার ভোর রাত সাড়ে ৩টায় হঠাৎ কাল বৈশাখীর ছোবলে লন্ড ভন্ড হয়ে গেছে নওগাঁর সীমান্তবর্তী উপজেলা পোরশা, সাপাহার সহ প্রায় সকল উপজেলার গাছপালা, ঘরবাড়ি ও ফসলের ক্ষেত। ক্ষতি গ্রস্ত কৃষকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছে মাছের ফসল নিয়ে। মাঠ জুড়ে রয়েছে বোরো ধান,ভূট্রা,কলা সহ অন্যান্য ফসলের সমারোহ। ভোর রাতে হওয়া ঝড়ে মাটির সাথে নুয়ে পড়েছে হাজার বিঘার জমির ধান। এর সাথে যোগ হয়েছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার প্রান্তে বিভিন্ন প্রকার আম। বৃষ্টিতে আমের কিছুটা উপকার হলেও ঝড়ো বাতাসে ব্যাপক হারে আম ঝরে পড়ায় এখন দিশেহারা অনেক আম চাষি। প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী সবার উপকার হবে তেমন টা নয় "কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ" কিছু দিন পূর্বে "দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদে" প্রকাশিত তীব্র তাপদাহে আম ঝরে পড়া রোধে কৃষি কর্মকর্তাগণ শুধু পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন।
সরেজমিনে বুধবার উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ও বাগান ঘুরে দেখা যায় মাঠের ধান মাটিয়ে নুয়ে পড়েছে। প্রতি বাগানে বিশেষ করে যে সমস্ত বাগানে পানি সেচের ব্যবস্থা নেই সে সকল বাগানে ৭০ হতে ৮০ ভাগ আম মাটিতে বিছিয়ে পড়ে আছে। তবে যে সকল বাগানে পানি সেচের ব্যবস্থা ছিল ঝরে পড়ার হার সেসব বাগানে অনেকাংশে কম। কলা গাছ মোচা সহ ভেঙ্গে পড়ে আছে, কোথাও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ে আছে, বসতবাড়ির টিনের ঘরে ঝড়ের আঘাতে উড়ে গেছে ঘরের টিন। মাঠ ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। ধানের ফলন কমবে বলে এলাকার কৃষক জানান। হঠাৎ করে কাল বৈশাখীর ঝড়ে অনেক ঘর বাড়ির টিনের ছাউনি উড়ে যাওয়ার ফলে অনেকেই নিজের ছাউনি বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বেশ কয়েক জন আহত হওয়ার খবর গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আমচাষীরা বলেন প্রতি বাগানে যে পরিমাণ আম ঝরে পড়েছে তাতে প্রায় সকল আম চাষি দেনার মধ্যে পড়ে যাবেন। এতে কোন সন্দেহ নাই তবে সরকার যদি তাদের ব্যাংক লোন বিনা সুদে পরিশোধ করার সুযোগ প্রদান করেন তাতে অনেক কৃষক উপকৃত হবেন বলে মনে করেন পোরশা সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন আম সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এতে শুধুমাত্র আম চাষীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেন।
পোরশা উপজেলার ঘাটনগর ইউনিয়নের ডালমনি পাড়ার আলহাজ্ব আঃ মজিদের ছেলে জানান তাদের ১০-১৫ বিঘা বোরো ধান পড়ে গেছে। এছাড়া কৃষক কফিল আনোয়ার দেলোয়ার আব্দুল মালেক শামসুল হক খাদেমুল ইসলাম বেলায়েত হোসেন জালাল উদ্দিন সহ উপস্থিত সকলের মতামত একই।কৃষক শাহজাহান বলেন হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে আমার ৫বিঘার জমির ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে । আর দিন বিশেক পর ধান কাটা হবে। কিছু ধান পানির নীচে রয়েছে। শুয়ে পড়া ধান দাড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৃষি অফিস জানায়, বুধবার ২০ শে এপ্রিল ভোরে পোরশা উপজেলার সকল ইউপিতে কালবৈশাখী ঝড়ে আঘাত হানে। এতে পোরশা উপজেলার প্রায় ১৫৯৭ হেক্টর জমির ধান মাটিতে নুয়ে পড়েছে, এ ছাড়া ভূট্টা, কলা সহ আরো ১০০হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্রায় কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। কৃষি অফিস আরো জানায়, এ বছর বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৮৯০৫ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ২৯৭৬৫ হেক্টর যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৮৬০ হেক্টর বেশি। তবে ধান নুয়ে পড়ায় ফলন কিছুটা কম হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.