প্রতিনিধি ১১ এপ্রিল ২০২১ , ৪:১০:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
শাকিল হোসেন পত্নীতলা (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ
এক দশক আগেও রোগীর রক্তের প্রয়োজন হলেই শঙ্কা জেঁকে বসত স্বজনদের মনে, কোথায় মিলবে রক্ত। উপায়ান্তর না দেখে অনেকেই ধরনা দিতেন পেশাদার রক্তাদাতাদের কাছে। টাকা দিয়ে কেনা রক্ত রোগীর শরীরে দিয়ে সাময়িক প্রয়োজন মিটলেও ভর করত আরেক দুশ্চিন্তা। রোগ সারাতে আরেক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে না তো? আশার কথা, রক্ত নিয়ে দুশ্চিন্তার সময় এখন অতীত।।
একজন রক্তযোদ্ধা মিজান সারাক্ষণ অপেক্ষায় থাকেন একটি আহ্বানের, ‘একজন মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে রক্তের প্রয়োজন।’ খবর পেলেই ছুটে। এর পর ডোনারের খোঁজ, যত রাতই হোক প্রয়োজনে নিজস্ব বাইকে করে ডোনার কে বাড়ী থেকে নিয়ে আসা এবং পৌছে দেন, রোগীর ঠিকানা নিয়ে পৌঁছে যান হাসপাতালে। রক্ত দিয়ে ফেরেন হাসিমুখে। এ কাজটি তিনি নিজ উদ্যোগে শুরু করেন তার দেখে অনুপ্রানিত হয়ে এখন অনেকেই এগিয়ে এসেছেন।
এতক্ষন যার কথা বলছিলাম সেই রক্তযোদ্ধা রক্তের ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত সেই যুবকের নাম এ.জেড মিজান , তিনি ১৯৭৭ সালের ২৮ শে মে পত্নীতলার এক সমভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন ।
মানুষের প্রতি ভালোবাসা ,মানুষের সাথে মিশে থাকা হয়তো এ কারনে তার চাকুরী করা হয়নি , তিনি
নজিপুর বাসষ্ট্যান্ড বণিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ৩ বার নির্বাচিত হন ,তারপর লোকজনের সাথে মেলামেশা আরও বেড়ে যায়।
মিজানের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানা যায়, কোনো একদিন এক রোগীর ও+ রক্তের প্রয়োজন পড়লে আমি তাকে এক ব্যাগ রক্ত দান করি, এতে ঐ পরিবারের যিনি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেঁচে যান। ফলে পরিবারটি ধ্বংস হওয়ার থেকে বেঁচে যায়। আমার এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে যে এত উপকার হবে ভাবতেই পারিনি। এ এক তৃপ্তিদায়ক শান্তি যা কখনো পরিবর্তন হবার নয়। তারপর মনে মনে নিয়ত করি যেভাবেই হোক আমি বা অন্যের থেকে রক্ত ম্যানেজ করে দিব ‘‘ ইনশা আল্লাহ’’। তারপর থেকে আল্লাহর রহমতে এই কাজ(রক্ত সংগ্রহ) চলছে। আমৃত্যু চলবে ‘‘ইনশা আল্লাহ’’ । এতে যারা রক্ত দান করেন তাদের সাথে কোন চুক্তি থাকে না আমাদের ব্যক্তিগত ভালোবাসার সম্পর্কের কারনে রক্তদাতারা রক্ত দান করেন। আসলে যারা রক্ত দান করেন তাদের মনও অনেক বড় এবং অন্যের উপকার করতে চান ফলে কাজটি সহজ হয়, মুমূর্ষ রোগী ও পরিবারকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো জনসাধারনের পাশে দাঁড়ানো। যেকোন মহৎ কাজে লোকজনকে সাহায্য করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এ পর্যন্ত কত জন কে রক্ত দিয়েছি তা গণনা করা সম্ভব না। রক্তের বিনিময়ে আমি রক্ত নেই না, তবে কেউ ইচ্ছা করে দিলে নেই। এই কাজটি একটি শিকলের মতো যিনি রক্ত পান উনার মাধ্যমে যেন আমি অন্যের কাছ থেকে রক্ত পাই সেই চেষ্টা করি। এটাতে অনেক বেগ পেতে হয়।
মানবতার কল্যাণে আমি আমার এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের উপকার করতে চাই ।
মিজান বলেন আমরা জীবন দিতেও পারি না বাঁচাতেও পারি না। কারন আমরা মানুষ। মানুষের উপকারে নিজেদেরকে উৎসর্গ করি, আসুন রক্ত দান করে অন্যের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করি।
‘‘যদি করেন রক্ত দান, বেঁচে যাবে একটি প্রাণ’’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে স্বেচ্ছায় রক্ত দান ও রোগীদের গ্রুপ অনুযায়ী রক্ত সংগ্রহ করে দেওয়া শুরু এক যুবকের । প্রায় ৬ /৭ বছরে এপর্যন্ত নিজেই অনেক বার স্বেচ্ছায় রক্ত দান করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার রোগীকে রক্ত দান ও মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্ত দানে উৎসাহিত করে তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিয়েছে হাজার হাজার ব্যাগ রক্ত। যার ফলে বন্ধু-বান্ধব ও এলাকার মানুষের কাছে ‘রক্তের ফেরিওয়ালা’ নামে পরিচিতি লাভ হয়েছে। তাকে দেখলে বলে রক্তের ফেরিওয়ালা আসছে। মিজান যে তার নাম সেটা অনেকেই জানে না রক্তের ফেরিওয়ালা হিসাবে চিনে।
কালের পরিবর্তে আজ রক্তের ফেরিওয়ালা মিজানের ‘রক্ত ভান্ডার’ হয়েছে অনেক সমৃদ্ধ, রক্ত সংগ্রহ ও দান পেরিয়ে ৩ হাজার ৩০ ব্যাগ। যাতে উপকৃত হয়েছেন অনেক চেনা-জানার পাশাপাশি শত শত অজানা ব্যক্তিও। সৃষ্টিকর্তার করুণায় নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছেন কত-শত রোগী। যার পেছনে রয়েছে রক্তের ফেরিওয়ালা মিজানের অপরিসীম অবদান। কি রাত, কি দিন কারোও রক্তের প্রয়োজনে কেউ কোন সমস্যায় থাকলে এর সমাধান মানে মিজান। আর মিজান ও কাউকে নিরাশ করে না, যে কোন ভাবেই মিজান তার কাছে সাহায্য চাওয়া সেই ব্যক্তিটিকে রোগীর প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত মিলিয়ে দিবেই দিবে। গভীর রাত তিনি বাইকে করে ডোনারকে বাড়ী থেকে নিয়ে এসে আবার বাড়ীতে পৌঁছে দেন , মানুষের রক্তের গ্রুপ জানা, বিপদে থাকা মানুষকে সাহায্য করতে রক্ত দানে উৎসাহিত করতেই তার দিনের বেশির ভাগ সময় কেটে যায়।
রক্তের ফেরিওয়ালা মিজানের স্বপ্ন আর সে একা নয়, তার এ মহৎ কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলে এগিয়ে আসছেন ,আর নিজের আত্মীয়-স্বজনদের পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের মানুষরা স্বেচ্ছায় রক্ত দানে নিজ থেকে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসেন সেলক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছেন । ‘রক্তের অভাবে কাউকে মরতে দিবো না’ তার (মিজান ) প্রতিজ্ঞার মতো এ কথাটি হউক সকলের প্রেরণা। তিনি এলাকার হাস পাতাল ক্লিনিক সহ নওগাঁ, রাজশাহী ,বগুড়া, এমনকি রাজধানির অনেক হাসপাতালে ভর্তি রোগিদের ও রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছেন ।
তিনি আরও বলেন “মানুষ মানুষের জন্য জীবন জীবনের জন্য ”একজন সুস্থ মানুষ এক ব্যাগ রক্ত দিলে তার কিছু হবে না কিন্তু বিনিময়ে তার এক ব্যাগ রক্তের কারণে বেঁচে যাবে একটি জীবন তাই তিনি সকল সুস্থ মানুষকে রক্ত দানের জন্য আহবান জানিয়েছেন ।মিজানের মাধ্যমে রক্ত পাওয়া একাধিক রোগীর স্বজনরা জানান , মিজান ভাই এগিয়ে না আসলে আমরা রোগী কে বাঁচাতে পারতাম না, বিপদের সময় সৃষ্টিকর্তাই যেন ওনাকে পাঠিয়ে দেন , মিজান ভাই অনেক ভাল মানুষ আল্লাহ তাকে র্দিঘ্যজীবী করুক মানুষের কল্যাণে ।
গত সপ্তাহে উপজেলার পত্নীতলা গ্রামের নাজির উদ্দীন তার মায়ের অপারেশনের জন্য রক্তের প্রয়োজন মিজান কে জানান অনেক রাতে পাশের উপজেলা থেকে ডোনার নিয়ে এসে রক্ত দিলে সেই মায়ের অপারেশন হয়। নাজির বলেন ভাগ্যিস আমাদের একজন রক্তযোদ্ধা
ছিল।তার এ মহৎ কাজের জন্য এলাকার সকল মহলে তিনি সমাদৃত ,সূধী ও সচেতন মহলে মিজান এখন প্রশংশিত । রক্