প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২৩ , ১০:৫৭:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ কাওছার হাবিব-স্টাফ রিপোর্টার:
পবিত্র ঈদুল আজহা কোরবানির ঈদ আর মাত্র ১ দিন। ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে মুখোর কামারশালা, ব্যস্ত সময় পার করছেন পত্নীতলার কামার শিল্পীরা। চলছে হাঁপর টানা, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাতুড়ি পিটিয়ে কামার তৈরি করছেন চাপাতি, ছুরি, চাকু, দা, বঁটিসহ মাংস কাটার বিভিন্ন সরঞ্জাম ।
টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে এসে গেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস সাইজ করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ এবং প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এ উপকরণ তৈরি ও শান বা লবণ-পানি দেওয়ার কাজে প্রয়োজন কামারদের। পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারপাড়ায় ঢুঁ-মারছেন। আবার কেউ কেউ পুরাতন সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।
প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। পাশাপাশি কয়লা আর কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমেছে বলেও জানায় কার্মকার শিল্পীরা। বর্তমান অধুনিক যন্ত্রপাতির প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে জমে উঠে এ শিল্প। শান দেওয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখে মুখে প্রচন্ড ক্লান্তির ছাপ। তবুও থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে তাদের কাজের ব্যস্ততা।
যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে বিক্রি খুব কম। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করলেও তাদের মুখে নেই কোনো উচ্ছাস, নেই প্রাণভরা হাসি। তারপরও আসন্ন কোরবানির ঈদের কথা মাথায় রেখে নতুন আশায় বুক বেঁধে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার শিল্পীরা। হাতুড়ি আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার দোকানগুলো। ঈদের দিন পর্যন্ত চলবে এমন কর্ম ব্যস্ততা। কিন্তু অনেকেই আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান সময়ে কয়লা, লোহাসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লোহার জিনিসপত্র তৈরি করলেও তেমন কোন লাভ হয় না। অনেক সময় কয়লা একেবারেই পাওয়া যায় না। কি আর করব পূর্ব পুরুষের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই হবে।
সরেজমিনে দেখা যায় পত্নীতলার নজিপুর বাসস্ট্যান্ডে এলাকার নওগাঁ রোড, মাতাজি রোড, ধামইর রোডে কামারশালাতে কর্মব্যস্তা চলছে কর্মকার উত্তম কুমার, গয়েশ্বর, উজ্জ্বল, দুলাল বলেন, বছরের কোরবানী ঈদে আমাদের মূল টার্গেট থাকে। বছরের কয়েকটা দিন ভালো টাকা, ভালো উপার্জন করার চিন্তা করলে এই দিনগুলা ঘিরেই করা হয়। ভেবেছিলাম কোরবানি কেন্দ্র করে বেশি অর্ডার আসবে। কিন্তু পরিস্থিতি এখন একেবারেই ভিন্ন। অন্যান্য কামার ব্যবসায়ীরাও একই রকম কথা জানান। এখন তাদের আশা ঈদ এগিয়ে আসছে যদি বিক্রি কিছুটা বাড়ে। সেই লক্ষ্যেই থেমে না থেকে একের পর এক জিনিসপত্র তৈরি করে চলেছেন তারা।
বর্তমানে ভালো মানের প্রতিটি দা তৈরিতে মজুরি নেওয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। চাকু তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ১২০ টাকা। বড় ছুড়ি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বঁটি তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
নারায়ণ চন্দ্র কর্মকার বলেন, দা-বঁটি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায়। আকার, আকৃতি ও লোহাভেদে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ছুরি প্রতিটি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা মূল্যেও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে হাড় কাটার চাপাতি (স্প্রিংয়ের) কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায়, সাধারণ লোহার চাপাতি কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরু জবাইয়ের ছুরি প্রতিটি ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা। পুরোনো যন্ত্রপাতি শাণ দিতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে
দেখা যায় প্রতিবন্ধী কর্মকার শিল্পী দুলাল হোসেন, তার দোকানে নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সবাই যখন মটাররের সাহায্যে বাতাস দিয়ে কয়লাতে আগুন দিয়ে কাজ করছে আর তিনি মান্ধাত্যা আমলের সেই হপার টানিয়ে কাজ করছে দোকানে নেই কোন সহযোগী একাই হপার টানা, হাতুড়ি পেটানো চালিয়ে যাচ্ছে সব। অনেকেই বলেন বাপদাদার পেশা অনেকেই বদল করছে সারা বছর তেমন ইনকাম থাকে না ঈদ আসলেই একটু হয়।