প্রতিনিধি ১৪ নভেম্বর ২০২১ , ৪:২৮:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ
আবুবকর মিল্টন:
পটুয়াখালী জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি, বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি ও প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতা লক্ষ্য করা গিয়েছে। পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে সকাল থেকেই ছিলো উৎসবমূখর পরিবেশ। সর্বক্ষণ ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী সহ গণমাধ্যমর্কমীদের দেখা গেছে গেছে তাদের দায়িত্ব পালন করতে। কিছু সাধারণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রায় সকল ইউনিয়নেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেলা ১২ টার সময় নির্বাচন বর্জন করেন ২ নং বদরপুর ইউনিয়নের অটোরিক্সা মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ আবদুস সালাম শরিফ।
তিনি জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠভাবে সম্পূর্ণ হয়। কিন্তু ১০ টার পর থেকে নৌকা প্রার্থীর পক্ষের কিছু সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্রগুলোতে ঢুকে আমার এজেন্টদের মারধর করে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এরপর তারা প্রয়োজন মোতাবেক ব্যালটে সীল মেরেছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে আশংকা করে আমি আগে থেকেই নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছিলাম। আমার মেয়ে বিথী শিয়ালী সেন্টারের ৩নং বুথে এজেন্ট হিসেবে ছিলো।
তাকেও নৌকার প্রার্থীরা নির্যাতন করেছে। আমার বিপুল সমর্থকেরা এমন পরিস্থিতির কারণে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে না পারায় বেলা ১২ টার সময় আমি নির্বাচন “বর্জন”করেছি। নির্বাচনে বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নসমূহে চেয়ারম্যান পদে ১৯ টি ইউপিতে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ১৩ জন এবং দলীয় মনোনয়নবিহীন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন। পটুয়াখালী সদর উপজেলাধীন বদরপুরে তানজিন নাহার সোনিয়া (নৌকা), লোহালিয়ায় মোঃ কবির হোসেন তালুকদার (নৌকা), মাদারবুনিয়ায় মোঃ আমিনুল ইসলাম মাসুম (নৌকা), ছোটবিঘাইয়ে মোঃ আলতাফ হোসেন হাওলাদার (নৌকা), বড়বিঘাইয়ে মোঃ জাফর হাওলাদার (বিদ্রোহী), আউলিয়াপুরে মোঃ কবির (নৌকা) এবং মরিচবুনিয়ায় মোঃ মাসুম মৃধা (নৌকা) চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নওমালা ও সূর্যমণি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন শঙ্কার ভোট থাকলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এতে নৌকা মার্কার দুই পার্থী বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছেন। তফসিল ঘোষনার পর থেকে নওমালা ইউনিয়নে নৌকা ও বিদ্রোহী (ঘোড়া) প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে ব্যাপক সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও ভোটের দিন পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। নির্বিঘ্নে জনসাধারন ভোটারেরা ভোট প্রদান করেন। ভোটে বড় ধরনের কোন বিশৃঙ্খল ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ তথ্য মতে নওমালা ইউনিয়নে ১৬৭০১ ও সূর্যমণি ইউনিয়নে ১৮৭৭২ ভোটের মধ্যে প্রায় ৭০শতাংশ ভোট প্রহণ হয়েছে। এতে নওমালা ইউনিয়নে প্রথম বারের মত ইভিএমে ভোট গ্রহণ হয়েছে।
সাধারন ভোটাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ হয়েছে। নওমালাতে ইভিএমে ভোট হওয়ায় ভোটারদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে। ভোট কেন্দ্র গুলোতে নারী পুরুষ সমান সংখ্যক উপস্থিতি চোখে পড়ে। নতুন ভোটারদের সংখ্যাও ছিল ব্যাপক। নওমালা ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. কামাল হোসেন বিশ্বাস বলেন, খুব সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশে মানুষ ভোট দিয়েছে। নৌকা ১৯৫০ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছে।
সূর্যমণি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন বাচ্চু জানান, সূর্যমনিতেও খুব সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশে মানুষ ভোট দিয়েছে। এখানেও নৌকা বিজয়ী হয়েছে। দুই ইউনিয়নেই নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। গলাচিপা উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার জয় ৩ টি।
টানটান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে গলাচিপার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলীয় প্রার্থী ৩জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ৫ জন। পানপট্টিতে মাসুদ রানা (বিদ্রোহী), গলাচিপায় জাহাঙ্গীর হোসেন টুটু (নৌকা), চরবিশ্বাসসে বাবুল মুন্সি (নৌকা), চরকাজলে হাবিব মোল্লা (বিদ্রোহী), ডাকুয়ায় বিশ্বজিৎ (নৌকা), গজালিয়ায় হাবিব বিশ্বাস (বিদ্রোহী), বকুলবাড়িয়ায় শহিদুল ইসলাম (বিদ্রোহী), এবং কলাগাছিয়ায় মাইনুল সিকদার (বিদ্রোহী) চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম, তিনি ১২১৭ ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার দশমিনা ইউনিয়নে মোঃ ইকবাল মাহমুদ (নৌকা) এবং সানকিপুরে মোঃ মশিউর রহমান (নৌকা) চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।