প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২২ , ১০:৪৯:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ
নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি:
নরসিংদী সদর উপজেলার করিমপুরে অবস্থিত করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুর্নীতি স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ওই অফিসের অফিস সহায়ক (এলএমএস) কাদির মিয়া টাকা ছাড়া কোন কাজই করেন না। ভূমি সংক্রান্ত যেকোন বিষয়ে তিনি গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। আর এতে করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের হয়রানি নিত্য নৈতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।আর তিনি অসৎপথে উপার্জিত টাকা দিয়ে গড়ে তুলেছে তিনতলা বিশিষ্ট বৃহৎ অট্টালিকা। সরেজমিনে দেখা যায়, করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে ঢুকতেই চোখে পড়ে অফিস সহায়ক কাদির মিয়ার টেবিল।আর সেই টেবিলের চেয়ারে বসে আছেন তিনি। তার টেবিলের চারপাশে সেবা নিতে আসা গ্রাহকরা জড়ো হয়ে কেউ চেয়ারে বসে বা কেউ দাঁড়িয়ে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজ সমাধান করার চেষ্টা করছে। সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায়, জমির পর্চা (খসড়া) তুলা সহ ভূমি সংক্রান্ত সকল কাজে সরকারি নিয়মকে তোয়াক্কা না করে অনৈতিক ভাবে টাকা নিচ্ছেন অফিস সহায়ক কাদির। তিনি গ্রাহকদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে টাকার বিনিময় ছাড়া কোন ফাইলই নাড়ে না। টাকা না দিলে নির্ধারিত সময়ে কোন কাজ আদায় করা যায় না। ওই ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এলএমএস) কাদির গ্রাহক থেকে বাড়তি টাকা নেয়ার পরও বিভিন্ন ভাবে হয়রারি করছে বলে এমনটাই অভিযোগ উঠেছে।সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অগোচরে মাঠ পর্যায়ের করিমপুর ইউনিয়ন ভুমি অফিসের অফিস সহায়ক কাদির বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে বলে জমির কাজে আসা ভূক্তভোগীদের দাবি। করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আসা এক গ্রাহক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, এই অফিসের নায়েব সাব কোন কিছু না।নায়েব এর দায়িত্ব পালন করেন কাদির।কাদিরই জায়গা সম্পত্তির নামজারি করেন।আমার জায়গা নামজারির জন্য কাদির আমার নিকট ২০,০০০/= টাকা দাবী করে।পরে আমি নামজারির জন্য তাকে নগদ ২০,০০০/= (বিশ হাজার) টাকা দেই। আজ ৪/৫ মাস হয়ে গেলেও সে আমার জায়গার নামজারি করে দিচ্ছে না। তাকে বারবার তাগিদ দেওয়া শর্তেও সে আজ না কাল না পরশু বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন আর আমাকে ঘুরাচ্ছেন। শুধু আমি না আমার মত অনেকেই এখানে সেবা নিতে আসা ৮০ শতাংশ লোকই চরম হয়রানির শিকার হতে হয় আজ না-কাল সময়ক্ষেপন করে।তার দাবিকৃত উৎকোচ না দিলে সেবা গ্রহীতারা পান না তাদের কাঙ্খিত সেবা। কে এই কাদির? কাদিরের পরিচয় জানতে সদ্য বিদায়ী করিমপুর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সোহরাব তার মুঠোফোনে প্রতিনিধিকে বলেন :- কাদির একজন করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহায়ক বা এলএমএস।অফিস সহায়ক বা তার দ্বায়িত্ব হচ্ছে অফিস গুচ্ছিয়ে রাখা। নামজারি, জমাভাগ, খাজনা আদায় করা তার কাজ না। এগুলো নায়েব সাহেবের কাজ। আমার জানার বাকি নাই। আমি করিমপুর থাকাকালে তার বিরুদ্ধে সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ শুনতে শুনতে আমার কান জ্বালা পরা হয়ে গেছে।লোকজন তাকে খোঁজ করতো। পরে ঐসব লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারি সে (কাদির) নামজারির কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নিতো এবং মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নামজারি করে দিতো।তিনি আরও বলেন, তার মূল কাজ হচ্ছে অফিসের ফাইল বের করে দেওয়া, অফিস পরিস্কার রাখা এবং বিশেষ প্রয়োজনে ব্যাংকে যাওয়া। আমার সময়ে আমি যতটুকু পেরেছি ভুক্তভোগীদের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছি।এ বিষয়ে সদ্যযোগদানকারী ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মোঃ ইব্রাহিম খান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র ৪/৫ দিন হয় অফিসে যোগদান করলাম।এবিষয়ে আমি তেমন কিছু জানিনা।অফিসে সিটিজেন চাটার ও করিমপুর ভূমি অফিসের সাইনবোর্ড কেন নাই তা অফিস সহায়ক কাদিরই ভাল জানেন।খোঁজ নিয়ে প্রতিনিধি জানতে পারেন যে, নরসিংদীর সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া পূর্বপাড়া (বায়তুল নূর জামে মসজিদ) এর পাশে ৬ তলা ভিত্তির উপর তিনতলা বিশিষ্ট এক বৃহৎ অট্টালিকা গড়ে তুলেন তিনি। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা এন্তাজ জানান যে, কাদির মিয়া এলাকায় কাদির মোক্তার নামে পরিচিত।তিনি করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে চাকরি করেন।বছরখানেক আগে কাদির এই বাড়িটি তৈরি করেন। এর আগে এখানে টিনশিট ঘর ছিলো। কাদিরের তিন মেয়ে এক ছেলে।ছোট ছেলে কয়েক বছর ধরে প্রবাসে থাকে বলেও জানান এন্তাজ। এব্যাপারে কাদিরের মুঠোফোনে (০১৮১৯-০১৯৫৫৩) কথা হলে তিনি জানান যে, ২০১৩ সালে করিমপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (এলএমএস) পদে যোগদান করে অদ্যবধি পর্যন্ত ওই অফিসেই কর্মরত আছেন।