প্রতিনিধি ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:৪০:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ আজিজুলহক-নরসিংদী প্রতিনিধি:
নরসিংদীর শিবপুরের শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে দুই যু্বকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি ঝোপ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মধ্যে রুবেল মিয়া (২৬) নামে একজন প্রাইভেটকার চালকের পরিচয় নিশ্চিত করেছে পুলিশ। রুবেল পলাশ উপজেলার খানেপুর বটতলা এলাকার সিএনজি চালক তোফাজ্জল মিয়ার ছেলে। ধারনা করা হচ্ছে, রুবেলকে হত্যা করে তাঁর প্রাইভেটকার ছিনতাই করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মহাসড়কের পাশে বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পেয়ে বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ চাদরে মোড়ানো দুটি লাশ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে নরসিংদী পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান, সহকারী পুলিশ সুপার (শিবপুর সার্কেল) মেজবাহ উদ্দিন ও শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে রুবেলের বাবা ঘটনাস্থলে এসে লাশ শনাক্ত করেন।
পরিবারের লোকজন রুবেলের সহকর্মীদের বরাত দিয়ে জানায়, পড়াশুনা শেষ করে চাকুরি না পেয়ে রুবেল তাঁর এক বন্ধুর প্রাইভেটকার ভাড়া নিয়ে চালাত। গত বুধবার সকাল ১০টার দিকে ভাড়া আছে বলে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে দুপুরের দিকে রুবেল তাঁর সিএনজি চালক বাবাকে নরসিংদীর ভেলানগর আসতে বলেন।
কিন্তু তাঁর বাবা সিএনজি নিয়ে পুলিশের ভয়ে ভেলানগর আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাঁর পর থেকে রুবেলের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গাড়ির জিপিআরএসে শেষ গন্তব্য শিবপুরের বড়ইতলা দেখিয়েছে। এরইমধ্যে দুর্বৃত্তরা রুবেলের মাধ্যমে বিকেলে পলাশ মাইক্রোস্ট্যান্ড থেকে শাহজালাল নামের আরেকজন ড্রাইভারের গাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়।শাহজালালের গাড়িতে পলাশের গজারিয়া এলাকা থেকে একজন উঠেন। পরে শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বড়ইতলা এলাকা থেকে আরো চারজন উঠেন।
দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন জায়গা ঘোরাঘুরি করে রায়পুরাতে নিয়ে যান শাহজালালকে। রাতের খাবার খেয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন বলেন একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে প্রথমে মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে গিয়ে মারধোর করেন। সেখান থেকে শাহজালাল গাড়ি রেখেই রাতে কৌশলে পালিয়ে গিয়ে রায়পুরা থানায় খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ি কিংবা কাউকে পায়নি। ঘটনার শুরু থেকে রুবেলের সঙ্গে শাহজালালের সরাসরি দেখা হয়নি।
নিহত রুবেলের বাবা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গতকাল বুধবার দুপুরে রুবেল আমাকে ভেলানগর আসতে বলে। কিন্তু সিএনজি নিয়ে মহাসড়কে আসলে পুলিশ জরিমানা করে বিধায় আমি আসিনি। আমি তো আর জানতাম না আজকে আমার ছেলের লাশ দেখতে পাব। রাতে যখন সে বাড়ি না আসে তখন তাঁর ফোনে ফোন করলে বন্ধ পাই। পরে পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও তাাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। দুপুরে শিবপুরে মহাসড়কের পাশে দুটো লাশ পড়ে থাকার খবরে ঘটনাস্থলে এসে রুবেলের লাশ শনাক্ত করি।
শিবপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়া বলেন, লাশের সুরতহাল ও প্রাথমিক তদন্তে ধারনা করা হচ্ছে, নিহতদেরকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে একজনের গলায় মাফলার পেঁচানো ও অন্যজনের গলায় ওড়না পেঁচানো ছিলো। নিহতদের মধ্যে রুবেল মিয়া নামের একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাঁর বাবা ও ভাই এসে লাশ শনাক্ত করেছেন। সে পেশায় একজন প্রাইভেটকার চালক। ধারনা করা হচ্ছে, তাঁর গাড়ি ছিনতাই শেষে তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে মহাসড়কের পাশে লাশ ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলমান। উদ্ধার হওয়া অপর লাশের পরিচয় সনাক্তের চেষ্টা চলছে।