প্রতিনিধি ৯ অক্টোবর ২০২২ , ২:৪৬:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ
মো আবুবকর মিল্টন-বাউফল পটুয়াখালী:
নদীর মাতৃক দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু নদী ভাঙ্গন নাজিরপুর বাসিন্দাদের কাছে এক আতংকের নাম। শব্দটি শুনলেই চোখের কোনে ভেসে উঠে সব হারানো কিছু অসহায় মানুষের ছবি। প্রতিবছরই এলাকায় মাইলের পর মাইল জমি নদী গর্ভে চলে যায়। এতে করে ফসলী জমি, বাড়ি-ঘর, বাজার-ঘাট, মসজিদ-মন্দির, অফিস, পাঠাগার সবকিছুই স্রোতের তোড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়, অসহায় মানুষ চেয়ে চেয়ে দেখা ছারা উপায় নাই
পটুয়াখালীর বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তেঁতুলিয়া নদির পারে শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাতেহাত ধরে প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় ভূক্তভোগি মানুষ। সব মানুষ গুলো নদির দিকে তাকিয়ে মিনতি করে যেন বলছে- ওরে নদি আর সামনে ভাঙ্গিস না, মোর এতটুকু মাথা গোঁজার ঠাঁই। কিন্তু নদীর তো আর মানুষের মিনতি শোনার মত কান নেই। সে তো আর মানব বন্ধন কি তা বোঝে না তার শক্তিতে সে সব নিয়েই যাচ্ছে
মানববন্ধনে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বক্তব্য রাখেন নাজিরপুর ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম মহসিন, প্রভাষক মো. জসীম উদ্দিন, ঢাকাস্থ ব্যাবসায়ী সেলিম মাতবর, আবুল হোসেন মীর সহ অনেকে । তাদের দাবি কর্তৃপক্ষ যেন অচিরেই টেকসই বাঁধ নির্মান করে ক্রমাগত নদী ভাঙ্গণের হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করে তা না হলে হয়ত তেঁতুলিয়ার সর্বনাশা গ্রাসে বিলীন হবে নাজিরপুর ইউনিয়নের সিংহভাগ অঞ্চল।
আন্দোলনে অংশ নিয়ে স্থানীয় জানান, প্রতিদিনই তেঁতুলিয়া গ্রাস করছে ভিটাবাড়িসহ ফসলী জমি। সত্তর দশক থেকে তেতুঁলিয়ার অব্যহত ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে ঐতিহাসিক গঞ্জ আবে-আবদুল্লাহর হাট, ভাওয়াল রাজার বংশউদ্বুত কচুয়ার জমিদার বাড়ি, নিমদী সরকারি প্রাইমারিসহ বহু সামাজিক প্রতিষ্ঠানএকাধিকবার স্থানান্তরের পরেও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে নিমদী সরকারি প্রাইমারি, ধানদী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ধানদী ফাজিল মাদ্রাসা, দক্ষিন ধানদী সরকারি প্রাইমারি, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অনেকগুলো সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
ইতিমধ্যে হাজারো পরিবারের লোকজন ভূমিহীন হয়েছে ও পেশা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি নেমেছে মানববিপর্যয়। ভাঙনরোধে বৃহত্তর কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মানববন্ধনে আসা বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজন টেকসই প্রকল্প গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন। এদের কয়েকজন জানায়, নদীর অব্যহত ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে নাজিরপুর ইউপির মুলভূখন্ডের মানচিত্র।
ভিটা-বাড়ি আর সহায়-সম্বল হারিয়ে রাস্তার পাশে কিংবা আত্মীয়-স্বজনসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন বহু পরিবার। কামলা খেটে কিংবা মানবেতর দিন পাড় করছেন অনেকে। অনেকে আবার সাধ্য অনুযায়ী ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছেন অন্য এলাকায়। সবসময় আতঙ্ক বিরাজ করছে ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজনের মধ্যে। শীগ্রই পরিবেশ ও মানব বিপর্যয় ঠেকাতে ভাঙন রোধে টেকসই প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নিমদী, ধানদী, ডালিমা, কচুয়া ও তাঁতেরকাঠী এলাকা রক্ষার দাবি জানায় এলাকাবাসী।