নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধিঃ-
["কি আর করমু বাজান, জামাইডা কয়েক বছর ধইরা বিছানায় পড়া। আমি নিজেও অসুস্থতার লাইগা খুড়ায়া খুড়ায়া হাডি। কোন কাম কাজ করার পাই না। পুলাডার ও তেমন কামাই নাই, ওর পরিবার ই পালতে পারে না আংগরে দেখবো কেমন কইরা। আংগরে দেহার মতো কেও ই নাই তাই বাধ্য হইয়াই ভিক্ষা করন লাগে। থাহনেরও কোন ঘর নাই, ভাঙ্গা ঘরেই কোন রহমে রাইত পার করি। সরকার থাইকা একটা ঘর আর কামাইয়ের কোন রাস্তা যদি কইরা দিতো আংগরে অনেক উপকার হইতো।]
শুনছিলাম শেরপুরের নকলা উপজেলার ৯নং চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বালিয়াদী গ্রামের হানিফ মিয়ার স্ত্রী হামিদা বেগমের কথা। তার হৃদয় বিদারক কথাগুলো থেকেই বুঝা যায় কতটা অসহায় হয়ে কতটুকু মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই পঙ্গু। স্বামী একদম অচল হয়ে বিছানায় পড়ে আছে আর স্ত্রী খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে পারলেও নেই কোন কাজ করার সামর্থ্য। অপরদিকে তাদের একমাত্র ছেলে নিজেই তার পরিবার নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। ঢাকায় কাজ করে ছয় সদস্যের পরিবার চালানোর পর বৃদ্ধ মা-বাবাকে দেখাশোনা করার মতো সাধ্য তার হয়ে উঠেনা।
তাই লোকলজ্জাকে ভূলে বেঁচে থাকার তাগিদে বাধ্য হয়ে এই বৃদ্ধ অসহায় দম্পত্তি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভিক্ষাবৃত্তিকে। সমস্যার এখানেই শেষ নয় সারাদিন ভিক্ষা করে বাড়ী ফেরার পর নেই রাতে মাথা গোঁজার ভালো কোন জায়গা। ছোট একটা ভাঙ্গা ঘরে কোনরকমে চলছে তাদের ভালবাসাময় সংসার। ঘরে নেই কোন খাট কিংবা চৌকি, মাটিতে চাদর কাথা বিছিয়ে মানবেতর ভাবে রাত্রি যাপন করছেন এই অসুস্থ অসহায় দম্পতি।
এদিকে কিছুদিন আগে অসহায় এই পঙ্গু দম্পত্তির অসহায়ত্বের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চোখে পড়ে জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তাদের। তাদের পক্ষথেকেও দেওয়া হয় ঘরসহ পূনর্বাসনের যাবতীয় আশ্বাস। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি দীর্ঘ এক থেকে দেড় মাসেও আশ্বাসের কোন বাস্তবিক পদক্ষেপ এখনো লক্ষনীয় হয়নি।
এমতাবস্থায় সরকারি সহায়তা দ্রুত প্রদানের মাধ্যমে অসহায় পঙ্গু এই দম্পতিকে দ্রুত পূনর্বাসনের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
অসহায় পঙ্গু ভিক্ষুক এই দম্পতির পাশে দাঁড়িয়েছে "নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থা" নামক একটি সহায়তামূলক সংগঠন। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে উক্ত সংগঠনটির পক্ষ থেকে কয়েকজন সেচ্ছাসেবী খোঁজ খবর নিতে এই অসহায় দম্পতির বাড়িতে হাজির হন। এসময় "নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থা"র পক্ষ থেকে এই অসহায় দম্পতির হাতে নগদ ২০ (বিশ) হাজার টাকা এবং রমজান উপলক্ষে পুরো একমাসের খাবার তুলে দেওয়া হয়।
এসময় নকলা অদম্য মেধাবী সংস্থার সভাপতি শফিকুর রহমান শফিক,সাধারন সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন, ত্রান বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর রউফ শিবলু, সদস্য মোশারফ হোসেন শ্যামল, সুজন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।এছাড়াও এসময় জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাব্বীনুর রহমান জুয়েল সহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.