নওগাঁর ধামইরহাটে বিভিন্ন হাটবাজারে সরকারি খাজনার কয়েক গুণ বেশি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারদের বিরুদ্ধে। আদায়কারীদের চাপের মুখে ক্রেতা-বিক্রেতারা অতিরিক্ত খাজনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে ভোক্তাপর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি খাজনার দর হাটবাজারে প্রকাশ্যে টাঙানোর কথা থাকলেও ধামইরহাট উপজেলার বেশির ভাগ হাটে তা নেই। ফলে ইজারাদার ও খাজনা আদায়কারীরা ইচ্ছেমতো শোষণ করছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের। সরকারি দর না জানায় ক্রেতা-বিক্রেতারাও তেমন কিছু বলতে পারেন না।
হরিতকীডাঙ্গা হাটে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে সরকার নির্ধারিত কোনো খাজনার তালিকা নেই। ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি দর সম্পর্কে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। খাজনা আদায়কারীরা যে টাকা চান, তা-ই তাঁদের দিতে হয়।এই বাজারে খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে প্রতিটি গরু ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ছাগলের ওপর শতকরা ১০ টাকা(সর্নিম্ন ৪০০টাকা) হাস-মুরগিতে ৭ টাকা, মাংসের দোকান ৩০০ টাকা, কাঁচামাল-সবজি বিক্রেতা চটিপ্রতি ১২০ থেকে ২০০ টাকা, তরমুজ ২৫০, কাপড় ৫০ থেকে ৬০, মসলা ৫০ থেকে ৮০,
ভ্রাম্যমাণ খাদ্যপণ্য ৬০, মাছ ১২০, গুড় ৫০, বাঁশের তৈরি ঝুড়ি-ঝাঁকা ২০ থেকে ৩০ ও পান বিক্রিতে ২০০ টাকা খাজনা দিতে হয়। এর বাইরে পাইকারি ক্রয়-বিক্রয়েও প্রতি হাটে বিপুল পরিমাণ খাজনা তোলা হচ্ছে। শুধু তাই নয় খাজনার রশিদে টাকার পরিমাণ বসানো হয় না তবে জেলা প্রশাসন নির্ধারিত সরকারি দর—ছাগল ২০০টাকা, গরু-মুহিষ ৫০০ টাকা, মাংসের দোকানপ্রতি ১০, পান ৬, মসলা ৭, তরমুজ ও অন্যান্য ফল ১৬ টাকা, গুড় ৮টাকা, কাঁচামাল—সবজি ৭ টাকা ও মসলা দোকানপ্রতি ৮ টাকা। সরকারি দরের বেশি খাজনা আদায় করলেও বিষয়টি কেউ তদারকি করেন না।
জাহিদুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘শুনেছি হাটে খাজনা দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি দর রয়েছে। কিন্তু আমরা কোনো দিন সরকারি দর সম্পর্কে শুনিনি, দেখিওনি। জানতে চাইলে ইজারাদারের লোকেরা আমাদের সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, সরকারি হাটবাজারগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীরা ইজারা নেন। তাঁরা ইচ্ছেমতো জবরদস্তি করে খাজনা আদায় করেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের মতো সাধারণ ব্যবসায়ীরা সরকারি দর দেখার কথা বললে মার খেতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসাও বন্ধ করে দিতে হয়।
শুধু হরিতকীডাঙ্গা নয়; ধামইরহাট উপজেলার সকল হাটগুলোতেই একইভাবে খাজনা আদায় করা হয় বলে অভিযোগ। একই পণ্যের বারবার খাজনা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। ফলে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অতিরিক্ত খাজনা আদায় ও প্রকাশ্যে সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা না থাকার বিষয়ে সম্প্রতি জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে। সেখানে নিজ-নিজ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ধামইরহাট বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কাশ্মীর আহমেদ বলেন, হাটবাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ফলে ভোক্তাপর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সরকারি কোনো তদারকি নেই। গত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো সমাধান হয়নি। অতি দ্রুত প্রতিটি হাটে সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা টানিয়ে দিয়ে সহনীয় পর্যায়ে খাজনা নেওয়ার দাবি জানান তিনি। হরিতকীডাঙ্গা বাজারের ইজারাগ্রহীতা শাকিল বলেন, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি দরের থেকে কম নেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে বেশিও নেওয়া হয়। শুধু আমরা বেশি নেই এমন তো নয় উপজেলার সব হাটেই তো এমনভাবে কমবেশি খাজনা আদায় করা হয়ে থাকে।
সরকার নির্ধারিত খাজনার মূল্যতালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে শাকিল হোসেন বলেন, এটা ইজারাদারেরা টানান না, এটা জেলা প্রশাসনের টানানোর কথা।উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণপতি রায় বলেন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে ইজারাদারদের বিরুখূদ্ধে অতিরিক্ত খাজনা নেওয়ার বিষয়ে নানা অভিযোগ পেয়েছেন।ঐ এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে যাতে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউ ক্ষতির সম্মুখীন না হন।
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.