প্রতিনিধি ২১ মার্চ ২০২৪ , ৭:২১:০১ প্রিন্ট সংস্করণ
শাহ সাহিদ উদ্দিন-কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি:
কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে দালালদের রাজত্ব। হাসপাতালে আসা রোগীদের নানান ভয় দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাচ্ছে দালালচক্র। এ দালাল চক্রে সক্রিয় আছে নারী-পুরুষসহ অন্তত ৩০/৪০ জন। এদের উৎপাতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। সম্প্রতি এক দালালের হাতে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক লাঞ্ছিতের ঘটনাও ঘটেছে। দালালদের কাছে অসহায় চিকিৎসকরাও। প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী একাধিক রোগী জানায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ ও বহি:র্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ২৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের ৩০ থেকে ৪০ জন দালালকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। এর মধ্যে বোরকা পরা নারী দালালও রয়েছে।
চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র লেখা শেষ করলেই রোগীদের কমদামে পরীক্ষা- নিরিক্ষা ও ভালো চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে প্রলোভন দেয় তারা। এভাবে রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যায় ওই দালাল চক্র। গতকাল বুধবার (২০মার্চ) সকাল সাড়ে ১০ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের মূল গেইটে অন্তত ৮ থেকে ১০জন দালাল রোগী বা রোগীর স্বজন সেজে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে আসা রোগীরা প্রেসক্রিপসন হাতে নিয়ে বের হতে দেখে তাদের পিছু নেয় কয়েকজন, এরা সবাই নারী দালাল চক্র। তারা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে রোগীদেও বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কে আগে রোগী ধরবে এ নিয়েও দালালদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটছে অহরহ। বহি: বিভাগের ভিতরের দৃশ্য আরও ভয়াবহ।
সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, ১১২ নং কক্ষ থেকে প্রেসক্রিপসন হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন ইউসুফপুর ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামের মমতাজ বেগম। তিনি নাতীকে নিয়ে হাসপাতালের বহি:বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তিনি বের হওয়ার সাথে সাথে চার পাঁচজন দালাল ঘিরে ধরে ব্যবস্থাপত্র টানাটানি করছে। খানিক পরে ওই নারী দালালরা আড়াল হয়ে গেছে। মমতাজ বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, কয়েকজন নারী আমার নাতীর প্রেসক্রিপসন ধরে টানাটানি করছিল, আমাকে বাহিরে কি যেন একটা হাসপাতালের নাম বলল, ওখানে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করাবে, চিকিৎসক কোন পরীক্ষা দেয়নি জানালে তারা প্রেসক্রিপসন ফেরত দিয়ে সরে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছে, আক্তার হোসেন, মর্জিনা বেগম, রেহেনা বেগম, পারুল আক্তার, জরিনা বেগম, রুবিনা আক্তার, হেলেনা আক্তার, মো. শাহ জাহান, বিল্লাল হোসেন, জাহাঙ্গীর, কবির হোসেন (মহেষপুর), আমজাদ, ঈসমাইল, আলমগীর, মোস্তফা, বাপ্পি, শিমুল, রহুল আমিন। হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, আমরা দূর থেকে এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে এসেছি। কিন্তু স্থানীয় দালাল চক্রের কাছে আমরা অসহায় জিম্মি। তারা আমাদের বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখিয়ে বাহিরে রোগী নিয়ে যায়। গত মঙ্গলবার আক্তার নামে এক দালাল জরুরি বিভাগ থেকে এক শিশু রোগীকে ভাগিয়ে নিতে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাধা দেয়, এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চিকিৎসককে বেদম মারধর করে। আমরা মান ইজ্জতের ভয়ে চুপ থাকি।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আলী এহসান বলেন, দালাল নির্মূলের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। আমরা অনেককে চিনি না, তাদের নাম পরিচয় জানিনা, তবে দালাল চক্রদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন থেকেও ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল দেয়া হয়েছে। জেল থেকে বের হয়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠছে।