প্রতিনিধি ১ জানুয়ারি ২০২২ , ২:১৭:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক:
কর্মকর্তাদের অপরাধ প্রমাণিত হলে ছাড় নয় -দুদক কমিশনার * এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ তবে অনুসন্ধান যেন লোক দেখানো না হয়-নির্বাহী পরিচালক টিআইবি
নিজস্ব কর্মকর্তাদের ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে দুর্নীতি প্রতিরোধে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত করার জন্য কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে দুদকের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. আহসান আলীর সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। কমিশন যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে এসব অভিযোগের সত্যতা নিরূপণের চেষ্টা চালাচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের নির্দেশনা অনুযায়ী এমন ‘হার্ডলাইনে’ কাজ শুরু করেছে দুদক। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, কমিশনের এ অনুসন্ধান যেন লোক দেখানো না হয়। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের মতো সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানও যেন সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার সঙ্গে করা হয়। দুদকের সাবেক কর্মকর্তার পাশাপাশি বর্তমানে কর্মরত কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করে অপরাধী প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
৯ ডিসেম্বর ‘আজন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রপতি দুদককে নিজ ঘর থেকে অভিযান শুরুর নির্দেশনা দেন।
জানতে চাইলে দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান যুগান্তরকে বলেন, সাবেক ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে কমিশনে আলোচনা হয়েছে। অনুসন্ধানসহ অন্যান্য কার্যক্রম শিগগিরই শুরু হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কমিশনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান করা হবে। অনুসন্ধানে অপরাধ প্রমাণিত হলে অন্য সবার মতো কমিশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, কমিশনের কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি কাজ করে চলেছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নজির রয়েছে।
জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সম্প্রতিকালে দুদকের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিষয়টি বেশ আলোচিত। কমিশনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ। তবে এ অনুসন্ধান যেন লোক দেখানো না হয়। সাবেক ওই কর্মকর্তা অপরাধী প্রমাণিত হলে দেশের অন্য সব নাগরিকের মতো তার বিরুদ্ধেও যেন যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এটি করা সম্ভব হলে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হবে। যা অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক হবে। শুধু সাবেকই নয়, বর্তমানে দুদকে কর্মরত কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ওইসব অভিযোগগুলোর যথাযথ অনুসন্ধানের ব্যবস্থা নেওয়া এবং অপরাধী প্রমাণিত হলে আইনের আওতায় আনার পরামর্শ দেন তিনি।
আহসান আলীর সম্পদের অনুসন্ধান : দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে আহসান আলীর বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কমিশন বৈঠকে আহসান আলীর জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অভিযোগে বলা হয়, প্রতারণা ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ অদায়ের পাশাপাশি প্রশ্নপত্র জালিয়াতি সিন্ডিকেটের গডফাদার হিসাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন। দুদকের সাবেক উপ-পরিচালক হওয়া সত্ত্বেও তিনি বর্তমান পরিচালক পরিচয় দিয়ে মানুষকে ভয়ভীতি, হয়রানি ও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।
তিনি বেনাপোল স্থলবন্দর কমিশনারকে অবৈধভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা মালামাল ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখান। এতে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা জিএম আশরাফুল আলম বাদী হয়ে একটি মামলাও করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বেনাপোল থানায় মামলাটি করা হয়।
আহসান আলীর সম্পদের ফিরিস্তি : আহসান আলীর রাজধানীতে তিনটি বাড়ি, রাজশাহীতে বাড়ি ও জমি, কোটি টাকার এফডিআরসহ নামে ও বেনামে অঢেল অবৈধ সম্পদ অর্জনের কথা অভিযোগে বলা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়, দুদকের সাবেক ওই কর্মকর্তা রাজধানীর খিলগাঁওয়ে (৩৬৪/সি) ৬ তলা বাড়ি করেছেন। ওই জমি ও বাড়ির নির্মাণ ব্যয় ১৫ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। খিলখেতে (নিকুঞ্জ-১, রোড নং-৫, বাসা-৪৭) ৩ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। জমি ক্রয় ও বাড়ি নির্মাণ ব্যয় দেখানো হয়েছে ১০ কোটি টাকা। রাজধানীর উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে ৬ তলা বাড়ি গড়েছেন তার শ্বশুরের নামে। রাজশাহী জেলার চারঘাট থানা এলাকায় একটি বাড়ি ও ৬০ বিঘা জমি রয়েছে তার। যার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তার শ্বশুর, শ্যালক, ভাই, স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ও বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন। বিভিন্ন ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকার এফডিআর।
এছাড়া সরকারি চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন জালিয়াতি সিন্ডিকেটের গডফাদার হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে আহসান আলীর ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। আর শুক্রবার সকালে ওই মোবাইল নম্বরে এসএমএস করা হলেও রাত ৯টায়।