আজ আলোকিত ৭১ সংবাদের এক বিশেষ আয়োজন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হলাম। আজকে আমরা একজন লেখকের সাক্ষাৎকার নিবো।আমাদের দেশের সাহিত্যে নতুন যে জনরাটি এগিয়ে আসছে তা হচ্ছে থ্রিলার।আজ আমাদের মাঝে উপস্থিত আছেন এই জনরারই একজন উদীয়মান লেখক। ২০২১ বইমেলায় বেস্টসেলার বই রুবি হাইস্ট এর স্রষ্টা সাদমান সাঈদ চৌধুরী।
চলুন শুনে আসি লেখকের কিছু কথা.!
★ কেমন আছেন?
সাদমান- আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।
★সামনে তো বইমেলা, ব্যস্ততা কেমন?
সাদমান- ব্যস্ততা কম নয়,তবে এসব পরিশ্রম করতে ক্লান্তি আসেনা।লেখালেখিটা ভালোবাসার ব্যাপার।
★সব জনরার মধ্যে থ্রিলার কেন বেছে নিলেন?
সাদমান- অন্যান্য জনরায় আলহামদুলিল্লাহ সমসাময়িক অনেক লেখকরা কাজ করছে।তবে তুলনামূলক ভাবে থ্রিলার জনরায় কাজ কম আমাদের দেশে।মানুষ এখনো এই জনরার জন্য বিদেশি সাহিত্যের উপর নির্ভর করে।
★- এইযে বললেন আমাদের দেশের পাঠকদের মাঝে বিদেশী থ্রিলারের প্রতি ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা, এটি কীভাবে দেখেন?
সাদমান - এটি ততক্ষণ পর্যন্ত ঠিক আছে, যতক্ষণ আপনি নিজের পছন্দের কারণে বিদেশী থ্রিলার পড়েন। যেই মুহুর্তে আপনি মনে করা শুরু করবেন যে, আমাদের দেশীয় লেখকরা থ্রিলার লিখতে পারে না, এজন্য আপনি বিদেশী থ্রিলার পড়বেন- ঠিক তখনই বিষয়টা বেশ দৃষ্টিকটু, এবং একইসাথে অসম্মানজনক হয়ে যায় আমাদের জন্য।
★ অসম্মানজনক ব্যাপারটা যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন?
সাদমান - বিষয়টা অসম্মানজনক কারণ আমাদের দেশের থ্রিলার লেখকরাও নিশ্চয়ই হামাগুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে না। গত কয়েকবছরে বাংলা সাহিত্যের থ্রিলার বেশ সমৃদ্ধশালী হয়েছে। মেডিকেল থ্রিলার, সাসপেন্স থ্রিলার, ক্রাইম-মিস্ট্রি থ্রিলার, কী লেখা হচ্ছে না? এবং সবচেয়ে ভালো দিকটা হলো, এসব বই শুধু বাংলাদেশেই নয়, ওপার বাংলার কলকাতার পাঠকদের কাছেও বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখন তাও যদি আপনি "আমাদের দেশের লেখকেরা থ্রিলার লিখতে পারে না" এই মাইন্ডসেট নিয়ে চলেন, তাহলে আমার আসলেই আর কিছু বলার থাকে না।
★ নির্দিষ্ট একটা পাঠক শ্রেণির এই ধরণের মনোভাব কি আপনাদের মতো থ্রিলার লেখকদের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে?
সাদমান - শতভাগ ফেলে বলা যাবে না, কিন্তু কিছুটা হলেও ইফেক্ট তো করেই। এই যে ধরুণ একটা ফেসবুক থ্রিলার গ্রুপের ব্যাপরেই বলি, নাম নিবো না। এই গ্রুপে যখন কেউ বিদেশী থ্রিলার বই কিংবা নির্দিষ্ট কয়েকজনের থ্রিলার বই নিয়ে পোস্ট করে, তখন ব্যাপকহারে পজেটিভ কমেন্ট দেখা যায়। আপনি হারিকেন নিয়ে খুঁজলেও একটা নেগেটিভ কমেন্ট পাবেন না। কিন্তু যখনই সেই গ্রুপে বাংলাদেশের থ্রিলার বই কিংবা তাদের পছন্দের থ্রিলার লেখকদের যে বায়োবাবল তারা তৈরি করে রেখেছে, সেই বায়োবাবলের বাহিরের কোনো লেখক নিজের থ্রিলার বই নিয়ে পোস্ট করলেই শুরু হয়ে যায় ঠাট্টা-তামাশা, কটুক্তি। এমনসব কমেন্ট করবে, দেখে মনে হবে বিদেশী লেখক কিংবা তাদের পছন্দের লেখকদের নিয়ে তৈরি বায়োবাবল ছাড়া বাহিরের কেউ থ্রিলার লিখতেই পারে না। এই গ্রুপে আপনি নব্য থ্রিলার লেখকদের জন্য কখনোই পজেটিভ ভাইব টা পাবেন না। উৎসাহমূলক কোনো কমেন্ট পাবেন না। এসব আমাদের অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে দেখতে দেখতে, কিন্তু যাদের প্রথম বই আসবে কিংবা আসছে তাদের জন্য জিনিসটা খুবই ডিমোটিভেটিং!
★ কোনো একটা লেখককে কিংবা লেখক শ্রেণিকে টার্গেট করে এক শ্রেণির ক্রমাগত ট্রলিং এর ব্যাপারটাকে কিভাবে দেখেন?
সাদমান - প্রথমত, দেখিই না।
কারণ এসব একটু আমলে নিলেই আপনি শেষ। কেউ একটু সফলতা অর্জন করলে কিংবা কারো বই 'বেস্টসেলার' ট্যাগ পেলে তাকে ট্রল করাটা একটা ট্রেন্ড কিংবা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো মেয়ের বই বেস্টসেলার হলে, রূপ দেখিয়ে বেস্টসেলার এবং কোনো ছেলের বই বেস্টসেলার হলে, রকমারির সাথে লিংকআপ করে বেস্টসেলার- এসবই বলতে দেখবেন আপনি কিছু মানুষকে। কতদিন এসব আমলে নিবেন? একটা সময় পর তো আমাদের চামড়াও গন্ডারের মতো হয়ে যায়।
★ ট্রল টা কি শুধু বেস্টসেলার ট্যাগ নিয়ে হয় নাকি অন্যকিছুও জড়িত থাকে?
সাদমান - ট্রল আসলে বেশিরভাগ আমি হতে দেখি লেখার ধরণ নিয়ে। অমুক লেখক খুব বেশি শুদ্ধ বাংলায় লেখে, তাই তাকে নিয়ে ট্রল। তমুক লেখক খুব দীর্ঘ পরিসরে টেনে টেনে লেখে, তাই তাকে নিয়ে ট্রল। অমুক লেখক, খুব বেশি অনুভূতিপ্রবণ ন্যাকামি লেখা লেখে, তাই তাকে নিয়ে ট্রল...
★এটা একটা বড় সমস্যা। এর কোনো সমাধান আছে বলে মনেহয়?
সাদমান - এমদম সোজা বাংলায় বলি, যে লেখা কিংবা যার লেখা যার ভালো লাগে না, তার লেখা না পড়ার আহ্বান।একজনের লেখা পড়তে বিরক্ত লাগে, কারণ সে খুব বেশি শুদ্ধ বাংলায় লেখে...
ভালো না লাগলে তার লেখা পড়া বাদ দিক। ট্রল কেন করতে হবে? সে ট্রল কারিদের জন্য নিজের লেখার ধরণ নিশ্চয়ই পরিবর্তন করবে না, কারণ তার শুদ্ধ বাংলা লেখা পড়ার ফ্যানবেজ আছে।
কারো যদি একজনের লেখা পড়তে বিরক্ত লাগে, কারণ সে অনুভূতিপ্রবণ লম্বা টেনে টেনে লেখে...সে তবে তার লেখা পড়া বাদ দিক। ট্রল করার তো প্রয়োজন নেই। কারণ তার এসব লম্বা টেনে টেনে লেখা বইগুলো পড়ার পাঠকশ্রেণিও আছে। কারো ভালো না লাগার কারণে লেখক কেন লেখার ধরণ পরিবর্তন করবে? যার ভালো না লাগে বরং সেই এড়িয়ে যাক। সেই লেখক তো কাওকে বলেনি কখনো যে, তোমাকে আমার লেখা পড়তেই হবে!
বিষয়টা খুব সোজাসাপটা।যেমন কেও বললো আমার 'সাদমান সাঈদ চৌধুরী'র লেখা ভালো লাগে না। আমি তার লেখা এড়িয়ে যাব। এক শ্রেণির মানুষ নিজের ফ্রাস্টেশন বের করতে গিয়ে এটাকে কমপ্লিকেটেড করে ফেলে।
আর যদি কারো সফলতায় হিংসার বসে কেও ট্রল করে তবে সে অধম।তাদের নিয়ে কথা বলাও বৃথা।
★ - ২০২২ বইমেলা নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
সাদমান - ২০২২ বইমেলায় আমার যে বইটি আসছে, সেটি একটি রহস্যোপন্যাস, নাম "মনশ্চক্ষু"। ২০২১ বইমেলায় "রুবি হাইস্ট" নামে যে বইটি এসেছে সেটিরই সিরিজ। এমন নয় যে "মনশ্চক্ষু" পড়ার জন্য আপনার আগে "রুবি হাইস্ট" পড়তে হবে। এমন কিছুই নয়। এটি কোনো সিক্যুয়েল না, এটি একটি সিরিজ। প্রতি উপন্যাসেই সমাপ্য কাহিনী।
★ - কোন প্রকাশনী থেকে আসছে?
সাদমান - বইটি আসছে 'তাম্রলিপি' থেকে।
★- যদি কোনো ধারণা দিতেন বই সম্পর্কে?
সাদমান - বইটির ঘটনাপ্রবাহ আমাদের দেশেরই কিছু সাধারণ মানুষদের নিয়ে। যারা নিজের অজান্তেই কারো ক্ষতি করে ফেলে এবং সেই থেকেই হয় নৃশংস এক খুন। সেই খুনের তদারকি এজ ইউজুয়াল স্টিফেন করবে। তবে এবার স্টিফেনের বর্তাবও পাঠকদের কাছে কিছুটা সন্দেহজনক মনে হবে। তার সাথে অনেক পর্দা উঠবে স্টিফেনের ব্যাক্তিগত জীবন থেকেও। উপন্যাসে একজন ইসলামিক স্কলারের কিডন্যাপিংও দেখা যাবে, যার দ্বারা বুঝাতে চেয়েছি কিছু অসৎ মানুষের গল্প যারা ধর্মীয় অনুভূতি কিভাবে কোথায় ব্যবহার করে উস্কে দিতে হবে তা খুব ভালোভাবেই জানে। আশাকরি পাঠকদের জন্য খুবই থ্রিলিং এবং রোলার কোস্টার রাইড হবে বইটি।
★- 'রুবি হাইস্ট' গত বইমেলার থ্রিলার ক্যাটাগরিতে বেস্টসেলার ছিল, 'মনশ্চক্ষু' কি সেটি ছাড়াতে পারবে?
সাদমান - রুবি হাইস্ট যদি আমার ১০০% এফোর্ট দিয়ে লেখা বই হয়, তাহলে মনশ্চক্ষু আমার ২০০% এফোর্টে লেখা বই। সেই কম্পেয়ারিজনে, ইনশাআল্লাহ পারবে।
★এত ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে আমাদের সাথে কথা বলার জন্য লেখককে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
সাদমান- এই সুন্দর আয়োজনের জন্য আপনাদেরও ধন্যবাদ। আলোকিত ৭১ সংবাদের প্রতি অনেক শুভ কামনা রইলো।
[সাক্ষাৎকার গ্রহণ - আসিফ খন্দকার।]
E-mil: dailyalokito71sangbad@gmail.com
তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত গণমাধ্যম দৈনিক আলোকিত ৭১ সংবাদ
@বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোক চিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বে-আইনি।
Copyright © 2024 alokito71sangbad. All rights reserved.