• কৃষি

    তীব্র তাপদাহে আম বাগানে ঝরে পড়ছে অর্ধেকেরও বেশি আম, লোকসানের আশঙ্কায় আম চাষীরা।

      প্রতিনিধি ১৮ এপ্রিল ২০২২ , ১১:৫৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

    মোঃ শাহ আলম-ক্রাইম রিপোর্টার:

    আমের রাজধানী খ্যাত নওগাঁর পোরশা ও সাপাহার, পত্নীতলা উপজেলায় চলমান তীব্র তাপদাহে এবং সেই সাথে বহুদিন যাবত অনাবৃষ্টির ফলে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে আম। চরম তাপদাহে ও অনাবৃষ্টির ফলে প্রায় প্রতিটি বাগান থেকে আম ঝরে যাচ্ছে। এই অবস্থা চলমান থাকলে লোকসানের আশঙ্কা করছেন আম চাষীরা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, আম গাছের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে আম। চলতি বছরে আমের পর্যাপ্ত পরিমাণ গুটি আসলেও অতিমাত্রায় খরার কারনে সেসব গুটি গাছ থেকে ঝরে পড়ছে।

    এছাড়াও গাছে থাকা আম গুলোতে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। রসের অভাবে আমের বোঁটাগুলো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে শুকিয়ে কালো হয়ে যাচ্ছে সেই সাথে আম ধরছে কপাল পুড়ছে আম চাষীদের। যার ফলে ধারণ ক্ষমতা না থাকায় বোঁটা থেকে আম খসে পড়ে যাচ্ছে। গত বছরে উপজেলা গুলোতে আম চাষীরা লাভবান হলেও বর্তমানে অনাবৃষ্টির কারনে আশঙ্কায় দিন গুণছেন তারা। স্থানীয় আম চাষী এনামুল, আঃ রশিদ, আনিছুর, জিয়া, আশরাফুল আমাদের উপস্থিতির কথা শুনে আম বাগানে এসে জানান আম চাষিরা এবার খালি হাতে বসে থাকতে হবে।

    তাদের দেওয়া তথ্য মতে উপস্থিত ৫/৬ জন আম চাষী প্রায় ১২০ হতে ১৩০ একর জমিতে আম চাষ করেছে। প্রচন্ড খরার কারনে আম ঝরে যাচ্ছে। বেশ কিছু বাগানে পানি সেচ দেবার মতো পানিরও তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। এর মূল কারণ জমিগুলো এক ফসলী হওয়ার ফলে জমি গুলো অধিকাংশ উচুঁ-নিচুর কারনে একমাত্র আকাশের বৃষ্টির পানি একমাত্র ভরসা। কিছু কিছু জমিতে পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ জমিতে পানি সেচ দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই নাই। আম বাগান হওয়ার পূর্বে তাদের সংসার পরিচালনায় হিমশিম খেতে হতো আম বাগান হওয়ার ফলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। সেই সাথে স্থানীয় অনেকের কর্মসংস্থান এর সুযোগ তৈরি হয়।

    কিন্তু সব জমিতে পানি সেচ দেওয়া সম্ভব না হওয়ার কারনে অধিকাংশ আম চাষির মূল পুঁজি ও আসবেনা। মূল পুঁজি হারিয়ে অধিকাংশ আম চাষি নিঃস্ব হয়ে পথে বসার আশঙ্কা করছেন। এর পাশাপাশি রাসায়নিক সার কীটনাশক এর দাম বৃদ্ধির কারনে লোকসানের আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় গাছের ৭৫% আম মাটিতে পড়ে রয়েছে বাকি ২৫% যদি গাছে থাকে তাহলে লাভের পরিমাণ না হলেও মূল পুঁজি হাতে থাকবে যার ফলে কমপক্ষে নিঃস্ব হতে হবে না। উপজেলার অধিকাংশ আম চাষীর নিজস্ব জমি না হওয়ার ফলে লিজ আকারে গ্রহণ করা প্রতি মৌসুমে জমির মালিক কে নির্ধারিত মূল্যে পরিশোধ করতে হয়।

    এখানে এলাকা ভেদে ৩৩ শতাংশ (এক বিঘা) জমিতে ২০ হতে ২৫ হাজার টাকা হিসাবে জমির মালিককে দেওয়ার জন্য লিখিত কাগজ করা থাকে। যা বিভিন্ন মেয়াদে হতে পারে তবে বেশির ভাগ ১০ থেকে ১২ বছরের জন্যই লিজ গ্রহণ করছেন অনেক আম চাষি। আম চাষী আলতাফ বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ভালো মুকুল ছিলো সব গাছেই। গুটির পরিমাণ সন্তোষজনক ছিলো। কিন্তু দীর্ঘ্যদিন অনাবৃষ্টিতে আমের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বৃষ্টি নেই, তার ওপর তীব্র গরমে আমে পচন ধরে আম পড়ে যাচ্ছে। উপজেলার কৃষি অফিসার সার্বক্ষণিক সহযোগিতা যোগাযোগ ও সমাধানের প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছেন।

    যে সকল জমিতে পানি সেচ দেওয়ার কোন ভাবেই সম্ভব নয় সেসব বাগানে ঠান্ডা পানি ও বোরণ মাত্রা অনুযায়ী স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছেন সেই সাথে বাগানে পানি সেচের বিকল্প কিছু নেই বলে জানান কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা। তবুও আম ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছেনা। এছাড়াও বৃষ্টির অভাবে তুলনামূলক হারে আমের সাইজ বর্তমানে যতটুকু হবার কথা তার চেয়ে অনেক ছোট হয়েছে।তবে অভিজ্ঞরা বলছেন, শঙ্কার তেমন কোন কারণ নেই বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলা করে চলতি মৌসুমে আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে তবে আমের বাজার দর যদি ভালো পাওয়া যায় তাহলে কোন আমচাষি লোকসানের মধ্যে পড়বে না।

    তবে আম গাছেও পানি স্প্রে করা যেতে পারে। চলতি মৌসুমে উপজেলা গুলোতে ৩০ হাজার ৮ শত ৭২ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লক্ষ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এর সাথে আবহাওয়া গত বিষয়টিও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে সেই সময় কাল বৈশাখী ঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায় তবে যে পরিমাণ আম বাগানে রয়েছে প্রাকৃতিক কোনো কারণে যদি আম না ঝরে পড়ে তাহলে লক্ষ্যমাত্রা কেও ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করেন অনেক আম চাষি বাকিটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে নিজেদের সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আম চাষি ওবায়দুল হক শাহ।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ