প্রতিনিধি ২৩ আগস্ট ২০২২ , ৮:৩৩:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহীর তানোরে মেসার্স রহমান গ্রুপের দুটি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করে কৃষকেরা পথে বসেছে। স্থানীয়রা বলছে, অধিক মুনাফা লুটতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত আলু সংরক্ষণ করায় প্রতি বস্তায় ১০ থেকে ১৫ কেজি করে আলু পচে নষ্ট হয়েছে। এতে কৃষকেরা কোটি কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে হিমাগার মালিক মস্তান বাহিনী দিয়ে কৃষকের গলা কেটে ঠিকই নিজের পকেট ভারি করেছে। কিন্ত্ত সিংহভাগ আলুচাষি হিমাগার থেকে প্রায় কুড়ি শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে আলুচাষ করে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে।
যে কারণে প্রকাশ্যে কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারছেন না। আবার কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে হিমাগারের পোষা হোমরা-চোমরাদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এছাড়াও হিমাগার চত্ত্বরে অনুমোদনহীন গরুর খামারের জন্য পরিবেশ দুষণে অনেক আলু নষ্ট হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, উপজেলার তানোর-মুন্ডুমালা রাস্তার দেবীপুর মোড়ে রহমান হিমাগার -১ ও আড়াদিঘি মোড়ে রহমান পটেটো-২ নামে দুটি হিমাগার রয়েছে। তানোরে রহমান হিমাগার নির্মাণের পর থেকেই এখানে আলু সংরক্ষণ করে আসছেন। তিনি বলেন, প্রতিবছরই এখানে আলু সংরক্ষণ করে বিপাকে পড়তে হয়,
কিন্ত্ত হিমাগারের ঋণের জালে আটকা পড়ায় তারা ক্ষতি শিকার করেই আলু সংরক্ষণ করতে বাধ্য হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেন, হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৩ লাখ ২০ হাজার বস্তা, কিন্ত্ত প্রায় সাড়ে তিন লাখ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে, ধারণ ক্ষমতার বেশী আলু সংরক্ষণ করায় বস্তা প্রতি প্রায় ১০ কেজি এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ কেজি করে আলু নষ্ট হয়েছে। তারা আরো বলেন, সরকারি নির্দেশনা রয়েছে ৫০ কেজির বেশী ওজনের বস্তায় আলু সংরক্ষণ করা যাবে না, তবে এখানে ৬০ থেকে ৭৫ কেজি ওজনের বস্তায় আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কালনা গ্রামের কৃষক মাহাম বলেন,রহমান-২ হিমাগারে অবৈধ গরুর খামার আছে, তাদের বিরুদ্ধে যে কৃষক কথা বলবে তার আলু নষ্টসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। তিনি বলেন, তার এক আত্মীয় ৭০ কেজির বস্তায় আলু রেখেছিলেন, কিন্তু বিক্রির সময় দশ থেকে পনের কেজি করে আলু কম হয়েছে। আলুচাষি লুৎফর ও টিপু বলেন, রহমান স্টোর নব্য কাবুলিয়া এরা কৃষকদের শোষণ করছে, তারা এর প্ররিত্রাণ চাই। তানোর দেবিপুর মোড়ের রহমান হিমাগার -১ এর ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, তাদের এখানে সামান্য পরিমান আলু নষ্ট হয়েছে। তানোর রহমান-২ হিমাগারের ম্যানেজার আব্দুল হালিম বলেন, কাঁচামাল নষ্ট হতেই পারে তবে দুই কেজির বেশী নয়।
তিনি বলেন, কোন কৃষক অভিযোগ দিয়েছে বলেন,তার ব্যবস্থা করা হবে, তিনি বলেন, প্রয়োজনে আপনারা স্টোরের ভিতরে গিয়ে বস্তা পরীক্ষা করেন, আর তারা উড়ে আসেননি প্রয়োজনে সাংবাদিকের ব্যবস্থা করা হবে, তাদের মালিক বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান এমপির ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এবিষয়ে রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন জানান, ৫০ কেজির অতিরিক্ত আলু রাখার কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, পরিবেশ দুষণ ও আলু পঁচে গেলে এসবের জন্য পরিবেশ দপ্তর ও ভোক্তাধিকার সংরক্ষণের দেখার দায়িত্ব। তারা সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
এবিষয়ে রাজশাহী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কবির হোসেনকে হিমাগারে গরুর খামার ও পঁচা আলুর জন্য পরিবেশ নষ্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবেশ নষ্ট হলে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর গরুর খামার দিতে হলে প্রাণী সম্পদ বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। এবিষয়ে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বেলাল উদ্দিন জানান, আমাদের কাছ থেকে তারা কোন কিছুই নেই নি। এবিষয়ে হিমাগার মালিক ফজলুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে তিনি অবগত নন। এবিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রাজশাহীর সহকারী পরিচালক মাসুদ জানান, তারা কোনো অবিযোগ পাননি, তবে দ্রুত হিমাগার পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহা পরিচালক বেনজীর আলম জানান, ৫০ কেজির উপরে আলু রাখার কোনো সুযোগ নেই। তিনি এবিষয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যবস্হা নিতে বলবেন বলে জানান।