প্রতিনিধি ১৪ আগস্ট ২০২৪ , ১২:৩৭:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোর সরকারী একে সরকার সরকারি কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাক্ষ সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এমনকি দলীয় প্রভাব বিস্তার করে কোন ধরনের নিয়োগ পত্র ছাড়াই ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব নেন তিনি। বিগত ২০২৩ সালের জুন মাসের দিকে দায়িত্ব নিয়ে বিভিন্ন কায়দায় লাখ লাখ টাকা তছরুপ করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার দায়িত্ব বৈধ করতে মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিল সভা আহবান করা হয়েছে। এমনকি অর্থ খরচ করার কোন বিধান না থাকলেও (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাক্ষ ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় শিক্ষক দের ম্যানেজ করে লুটপাট করেছেন বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। সরজমিনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অনিয়ম দূর্নীতি ধরা পড়বে বলে নিশ্চিত করেন একাধিক শিক্ষকরা।
জানা গেছে, উপজেলায় এক মাত্র সরকারি কলেজ পৌর সদর এলাকায় অবস্থিত আব্দুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজ। বিগত আ”লীগ সরকারের সময় কলেজটি সরকারি করন হয়। ওই সময় কলেজের অধ্যাক্ষ ছিলেন হাবিবুর রহমান। তার স্থলাভিষিক্ত হন আব্দুল আজিজ। তিনি এক দিবসে ভুলবশত শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষনের জায়গায় জিয়ার ভাষন বাজানোর দায়ে বরখাস্ত হন। তারপর ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পান হাবিবুর রহমান শেলি। তিনি অবশরে গেলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক সাইদুর রহমান। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই কলেজেটিতে রাজনৈতিক প্রভাব ও নানা অনিয়ম দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
বেশকিছু প্রভাষকরা জানান, ২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ব্যবস্থাপনা ফি মাত্র ৫০ টাকা হলেও ৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়। প্রায় ৪১৭ জন শিক্ষার্থীর নিকট এটাকা আদায় করে তছরুপ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ। অনার্সে প্রায় ২২০০ জন শিক্ষার্থী আছে। সেখানেও ব্যবস্থাপনা ফি ৫০ টাকার জায়গায় ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রে টাকা আদায় করে নয়ছয় করেন তিনি সহ তার অনুসারী শিক্ষক রা। বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পুরুন চলছে। সেখানেই ব্যবস্থাপনা ফি ৫০ টাকার বিপরীতে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য দের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নেয়ার জন্য রেজুলেশন করা হলেও ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।এসব নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে শহরে থাকা কলেজের শিক্ষক ও গ্রামে থাকা শিক্ষক দের মাঝে ব্যাপক দলাদলি এবং গ্রুপিং লবিং শুরু হয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। একারনে কলেজে পাঠদান তেমন হয়না বলেও একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। আবার কোন শিক্ষক পরিষদ না থাকলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ সাইদুর রহমান তার নিকটতম অনুসারী নেকছার আলী নামের এক শিক্ষক কে সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেছেন। যা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ। তার মাধ্যমে যাবতীয় কাজ করে থাকেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক। যেদিন থেকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পান, সেদিন থেকে কোন ক্লাস নেন না তিনি। যার কারনে শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগের পড়ালেখা থেকে চরম ভাবে বঞ্চিত।এদিকে শহরে থাকা শিক্ষক রা কলেজেই আসেন না। মাসের পর মাস কলেজে না এলেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চায় না ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ।সুত্র জানায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পেতে হলে ডিজির নিকট থেকে লিখিত কাগজের প্রয়োজন। কিন্তু সাইদুর রহমান আ”লীগ নেতাদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দায়িত্বে আছেন। সে কোন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবেন না। কিন্তু কিছু নেতাদের হাতে রেখে যাবতীয় অনিয়ম করে চলেছেন তিনি।সরকার পতনের এক সপ্তাহের মধ্যে তার টনক নড়েছে। মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহবান করেছেন তিনি। সভা থেকে জোরপূর্বক রেজুলেশন করে তার দায়িত্বে বৈধতা আনবেন।
এক সিনিয়র শিক্ষক জানান, সরকার পতনের পর থেকে নেতারা আত্মগোপনে। দেশ পরিচালিত হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ মনে করেছিল আ”লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে নয়ছয় ভাবে চলে যাবে। আমি চাই সরেজমিনে তদন্ত করে যোগ্য সিনিয়র শিক্ষক কে নিয়ম কানুন মেনে দায়িত্ব দেয়া হোক এবং তার এক বছরের দায়িত্বে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপের বিষয়টিও তদন্ত করে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তানাহলে কলেজের পাঠদান মুখ থুবড়ে পড়বে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি নেকছার আলীর ০১৭১৮৫৪১৮০০ মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষক দের মতামতের ভিত্তিতে আমাকে শিক্ষক পরিষদের সেক্রেটারি করা হয়েছে। আপনাদের কলেজে নাকি কোন শিক্ষক পরিষদ নেই প্রশ্ন করা হলে উত্তরে তিনি জানান, শিক্ষক পরিষদ না থাকলে আমি কিভাবে সেক্রেটারি হলাম। আপনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের অনুসারী শিক্ষক এজন্য করেছে এবং যাবতীয় টাকা লুটপাটের জন্য আপনাকে দায়িত্ব দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের দায়িত্ব নেয়া এক বছর হলো, এক বছরে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয়নি এসময় কি কারনে এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষের মোবাইল নম্বর বন্ধ আর কোন নম্বর আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান মঙ্গলবার কলেজে মিটিং আছে সেখানে এলে সব জানা যাবে আমি এখন নামাজে যাব। ব্যবস্থাপনা ফি ৫০ টাকার বিপরীতে এত টাকা আদায় কেন প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলেই সত্য মিথ্যা বেরিয়ে আসবে। কিছু শিক্ষক অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে প্রোপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে। এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষ সাইদুর রহমানের ০১৭১৫২৪৯৭৮৯ এই মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও শুধু বন্ধ পাওয়া যায়। যার কারনে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।#