প্রতিনিধি ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ৪:০৩:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে মতবিরোধ ও কাঁদা ছোড়াছুড়ি প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়রা জানান, এসব নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও বিস্ফোরণমূখ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় দুটি পক্ষ মূখোমূখি অবস্থানে রয়েছে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত ও পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে শিক্ষকদের রেষারেষির কারণে শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছে। কারণ কদিন পরেই তাদের পাবলিক পরীক্ষা।অথচ শিক্ষকদের দন্দে তারা পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষকেরা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা শুরু করেছে।এসব ঘটনায় এলাকার অভিভাবক মহল ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছ। তারা এসব শিক্ষকদের শাস্তির দাবি করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার স্কুলের অফিস কক্ষে এসব নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে শিক্ষকদের মধ্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে সহকারী প্রধান শিক্ষক শারীরিক ভাবে লঞ্চিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি,এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও ৮ জন শিক্ষকের সনদ ভূয়া দাবি করে সরেজমিন তদন্তপুর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সাংসদ, রাজশাহী বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা ও তানোর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এদিকে এখবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়, বইছে মূখরুচোক নানা গুঞ্জন, প্রতিনিয়ত গুঞ্জনের ডালপালা মেলছে। অভিযোগে প্রকাশ, নাদিরা খাতুন সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) তার সনদ ভূয়া এবং তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে। কামাল উদ্দিন সহকারী শিক্ষক (কৃষি) তার বিএড সনদের সমস্যা। লুৎফর রহমান সহকারী শিক্ষক তার বিএড সনদ ভুয়া। রুপালী খাতুন সহকারী শিক্ষক তার নিবন্ধন সনদ ভুয়া। জলি মালাকার (কাব্যতীর্থ) তার নিবন্ধন সনদ ভূয়া। ইউসুফ আলী সহকারী লাইব্রেরিয়ান তার সনদ ভূয়া। আজাহার আলী সহকারী শিক্ষক তার বিএড সনদ ভূয়া এবং উম্মে কুলসুম সহকারী শিক্ষক তার বিএড সনদ ভূয়া এসব সনদ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা হলে সত্যতা মিলবে বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া সনদ দিয়ে চাকরি করছে, এটা সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা, স্থানীয় এলাকাবাসীরা পর্যন্ত জানে।
কিন্ত্ত তারপরেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তা শিক্ষকদের কাছে থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ঘটনা ধাঁমাচাপা দিয়ে রেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানায়, এক ইউপি চেয়ারম্যান অতীতে শিক্ষক প্রতি বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়ে তড়িঘড়ি করে অনেককে নিয়োগ দিয়েছিল। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করলে, আরো অনেক শিক্ষকের নাম এসে যাবে। স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের নানামুখী অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে স্থাপনের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এখানো বিদ্যালয়ে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বিদ্যালয়ের মানসম্মত একাডেমিক ভবন নাই ও কমন রুম, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব এবং লাইব্রেরী নাই। কম্পিউটার শিক্ষক নিজেই কম্পিউটার চালাতে পারে না, হয় না ক্লাস। ফলে বাইরের দোকান থেকে কম্পিউটারের কাজ করানো হয়, এতে প্রতিষ্ঠানের অনেক গোপণ তথ্য বাইরের মানুষের হাতে চলে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, সৃজনশীল বোঝে এবং প্রশ্ন করতে পারে এমন শিক্ষক এখানে নাই।
সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা পরীক্ষার প্রশ্ন নিজেরা প্রণয়ন করতে পারেন না। শিক্ষক সমিতি বা বিভিন্ন পেশাদার প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা নেয়া হয়। আবার অনেক সময় গাইড বই দেখে প্রশ্ন তৈরি করা হয়। অথচ গাইড ও নোটবইয়ের দাপট কমাতে এই পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়া গেছে, তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ওবাইদুল্লাহ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই ৮ জন শিক্ষকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। এবিষয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি শামসুল হক বলেন, তার সময়ে কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি, তাই এই বিষয়ে তার কিছু বলার নাই।