প্রতিনিধি ২ নভেম্বর ২০২২ , ১২:১৯:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
মমিনুল ইসলাম মুন-বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি:
রাজশাহীর তানোরে তহসীল দার রবিউলের কারিসমায় লীজকৃত পুকুরে জোরপূর্বক মাছ মেরে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালের দিকে উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চিনাশো মৌজার বুড়াবুড়ি তলা নামক পুকুরে ঘটে মাছ লুটের ঘটনাটি। এঘটনায় লীজকৃত পুকুরের মালিক চিনাশো মৎস্যচাষী সমবায় সমিতির পক্ষে সভাপতি ইমরান বাদি হয়ে সাইদ সাজু ও আশরাফুল ইসলাম রঞ্জুকে বিবাদী করে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তার অনুলিপি এসিল্যান্ড কেও দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ডাকযোকে ভূমি মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সংসদ ও জেলা প্রশাসককেও দেওয়া হবে বলে জানান বাদি। এঘটনায় উভয়ের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগে উল্লেখ, বিগত তিন বছর আগে ভূমি অফিস থেকে চিনাশো মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লিমিটেড সরকারী নিয়ম অনুযায়ী চিনাশো মৌজার অন্তর্ভুক্ত আরএস ৭৩৪ দাগে ৪৯ শতাংশ খাস পুকুর ৬৫ হাজার টাকায় লিজ নেয়। গত বৈশাখ মাসে লীজের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সমিতির লোকজন পুনরায় ভূমি অফিস থেকে লীজ নেওয়ার জন্য গেলে কর্তৃপক্ষ তহসীল অফিসের মাধ্যমে লীজ নেওয়ার জন্য যেতে বলেন।
সমিতির সদস্য মাইনুল ইসলাম জানান, আমিসহ কয়েকজন তহসীল অফিসে গিয়ে তহসীলদার রবিউল বলেন, তিন বছরের মেয়াদে যত টাকা দিয়ে পুকুর লীজ নিয়েছেন সেই পরিমান টাকা দিলে এক বছরের জন্য লীজ দেওয়া হবে। এমন কথা শোনার পর আমরা বলি আপনি প্রকাশ্যে নিলাম দেন, আমরা যদি পারি নিব, না পারলে না নিব। কিন্তু তহসীল দার সাইদ সাজুকে নাকি লীজ দিয়েছেন। কত টাকায় সেটাও আমাদেরকে বলেন নি। এই বলে সাইদ ও রঞ্জু মঙ্গলবার মাছ লুট করে নেয়। সংবাদ পেয়ে পুকুরে এসে দেখি সব মাছ মেরে নিয়েছে। আমি তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা উল্টো আমার উপর চড়া হয়। কাগজ দেখতে চাইলেও তারা দেখান নি। ঘটনাটি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান কে অবহিত করা হয়েছিল, তারা বসে সমাধান করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা কোন কথায় শোনেন নি। পুকুরে বড় সাইজের বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকার মাছ ছিল। এমনকি রবিউল ভূমি অফিসের পাশের রুমে তাদেরকে নিয়েও মদ সেবন করেন।
সমিতির সভাপতি ইমরান জানান, তহসীলদার রবিউল প্রকাশ্যে নিলাম না দিয়ে গোপনে কেন দিলেন। আমাদেরকে মাছ মারতে না দিয়ে উল্টো তাদের কে মাছ মারার হুকুম দিয়েছেন। না হলে কিভাবে মাছ মারবে। এটা কোন অরাজকতা, এটা কোন ধরনের আইন কানুন। আমরা গরীব অসহায় বলে এসব করা হচ্ছে।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে, মঙ্গলবার দুপুরের পরে তহসীল অফিসে গিয়ে রবিউলের কাছে জানতে চাওয়া সাইদ সাজুকে কিভাবে নিলাম দিলেন ও কত টাকায় তিনি একটি কাগজ দেখান সেখানে লিখা আছে, তা হুবহু তুলে ধরা হল,
গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার বাংলাদেশ
মুন্ডুমালা ভূমি অফিস, তানোর রাজশাহী
তারিখ ২০/০৯/২০২২ ইং
৩১.৪৩.৮১৯৪.০০০.০০৬.২০.২২-১৪৫৭(৩) নম্বর স্বারকে, বাংলা ১৪২৯ সনের অস্থায়ী ইজারাদান প্রদান।
সুত্র: উপজেলা খাস আদায় সংক্রান্ত জলমহল ব্যবস্থাপনা গত ৫/৬/২০২২ খ্রি: তারিখের কার্যবিবরনী। উর্পযুক্ত বিষয় ও সুত্রোক্ত স্বারকের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলা ১৪২৯ সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত খাস পুকুর খাস আদায়ের নিমিত্ত তানোর উপজেলা খাস আদায় জলমহল ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ফাকা খ্রী: তারিখে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উক্ত সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিম্ম তফসীলভুক্ত জলমহলের ১৪২৯ সনের ৩০ শে চৈত্র পর্যন্ত খাস আদায় করে ১(এক) বছরের জন্য অস্থায়ী লীজ প্রদান করা হল। নিচে তপসীল
মৌজা, চিনাশো, জেএল নং ৮১, খতিয়ান নং ০১, দাগ নং ৭৩৪ পরিমান একর ০.৫৭ ও ৮৭৭ পরিমান একর ০.৬৪ শ্রেণী পুকুর, বর্নিত সময়কাল বাংলা ১৪২৯ সনের ৩০ শে চৈত্র। তার নিচে লীজ পাওয়া ব্যক্তি সাইদ সাজু, পিতা মৃত দেলজান, সাং তানোর, থানা তানোর জেলা রাজশাহী। মোবাইল নম্বর ০১৭১২-৬৭৮৬০১
তার নিচে, অনুলিপি সদয় জ্ঞাতার্থে/ কার্যার্থে
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, তানোর, রাজশাহী
সহকারী কমিশনার ভূমি, তানোর, রাজশাহী
অফিস কপি।
অন্য সাইডে সহকারী কমিশনার ভূমি
তানোর, রাজশাহী।
কত টাকায় লীজ এবং সহকারি কমিশনার ভূমির স্বাক্ষর না থাকা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলেন টাকা চালান দেওয়া হয়েছে, পরিমান স্বরন নাই। তবে মাছ তুলে নিতে সমিতিকে নোটিশ না দিলেও মেয়াদ অনেক আগে শেষ হয়েছে, এজন্য মাছ মারতে পারে, কিন্তু সেটা সঠিক কাজ করেনি তারা।
এর আগেও এক ব্যক্তির মালিকানা পুকুরেও লাল নিশানা সাটিয়েছিলেন সাইদ ও রঞ্জু।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পংকজ চন্দ্র দেবনাথ কে পুকুর লীজের কাগজ দেখানো হলে তিনি বলেন এটা লীজের কাগজ না, এভাবে লীজের কাগজ হয় না। অভিযোগ হাতে পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাছ মারার ভিডিওতে সাইদ ও রঞ্জু সমিতির সদস্য মাইনুলের উপর চড়াও হয়ে বলছেন, আমরা লীজ নিয়েছি এজন্য মাছ মেরেছি বলে আজেবাজে কথাবার্তা বলেন।
বুধবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথকে লীজের কাগজ দেখানো হলে তিনি সাব জানিয়ে দেন এভাবে লীজ হয়না, অভিযোগ হাতে পেলে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বুধবার বিকেল তিনটার দিকে তহসীলদার রবিউলকে লীজের কাগজ ভূয়া বলেছে নির্বাহী কর্মকর্তা জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব নিয়ে বসা হবে বলে এড়িয়ে যান।